বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের একাংশ। এসময় তারা বর্ণি-দাসেরবাজার সড়কের ফকিরবাজারে সড়ক অবরোধ করে টায়ারে অগ্নিসংযোগও করেন।
আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বর্ণি ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াত পরিবারের লোক জোবায়ের হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে বুধবার (২৭ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে তারা এই কর্মসূচি পালন করেছেন। একইসঙ্গে তারা জোবায়ের হোসেনের মনোনয়ন পরিবর্তন করে মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মুহিতকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এর আগে তারা মনোনয়ন বঞ্চিত উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুল মুহিতের বাড়িতে প্রতিবাদ সভা করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়ন থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মুহিত, বর্ণি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শামীম আহমদ ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেন। গত ২৫ অক্টোবর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে। এরমধ্যে বর্ণি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পান বর্ণি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের হোসেন।
এ খবরে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতাকর্মীরা। তারা এই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মুহিতের মনোনয়ন চেয়েছিল। এর প্রতিবাদে বুধবার রাত ৮টায় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মুহিতের বাড়িতে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইবুর রহমানের সঞ্চালনায় মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মুহিত ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুন নূর, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালিক, ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছয়েফ উদ্দিন তোলা, ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম নজু, ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম, ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিৎ চক্রবর্ত্তী চন্দন, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খালেদ আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান ও রেজাউল করিম প্রমুখ। এসময় বর্ণি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিজাম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বক্তারা বলেন, ‘মুহিত দলের একজন ত্যাগী নেতা। আমাদের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বড় আশা ছিল তিনি দলের মনোনয়ন পাবেন। তালিকায় তার নাম প্রথমেই ছিল। আমরা শোনেছি মুহিত মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তালিকা থেকে তাকে বাদ দিয়ে কালো টাকার বিনিময়ে জোবায়ের হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। জোবায়ের হোসেন বিএনপি-জামায়াত পরিবারের মানুষ। তার একভাই ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমানে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে আছেন। একভাই জামায়াতের বড় পদে, আরেক ভাই লন্ডনে বিএনপির নেতা। তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় আমরা হতাশ, ক্ষুদ্ধ, বিস্মিত। আমরা অবিলম্বে বিএনপি-জামায়াত পরিবারের ওই প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার করে ত্যাগী নেতা মুহিতকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। আশা করি আমাদের প্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’
মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মুহিত বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে দলের রাজনীতির সাথে জড়িত। দলের জন্য অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। নির্যাতনের শিকার হয়েছি। নেতাকর্মীরা চাওয়ায় দলের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। আশা ছিল দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে আমাকে বাধ দিয়ে বিএনপি-জামায়ত পরিবারের একজন মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে নেতাকর্মীরা হতাশ। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন।’
নৌকার প্রার্থী জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘আমি ১২ বছর ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আমার পরিবারের সবাই আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আমার ভাই বিএনপির কোনো পদপ্রাপ্ত নেতা নন। কেন্দ্র আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে বর্ণিতে নৌকা বিজয়ী হবে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর বলেন, ‘জোবায়ের হোসেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্র থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যারা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারা ঠিক করেননি।’#
Leave a Reply