অবিভক্ত বাংলার এক বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা খলিল উল্লাহ অবিভক্ত বাংলার এক বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা খলিল উল্লাহ – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবার খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব “সেং কুটস্নেম” কুলাউড়া উপজেলা যুবলীগের সহ সভাপতি আটক কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নে জিপিএ-৫ ও এ গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা রাজারহাটে ওয়ার্ল্ড ভিশনের আয়োজনে বাল্যবিবাহ বন্ধে সংলাপ কুড়িগ্রামে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র মতবিনিময় কুলাউড়া জয়চন্ডীতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন মিলন বৈদ্য কুড়িগ্রামে বাল্যবিবাহ ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে স্থানীয় স্টেক হোল্ডারদের সাথে সংলাপ কুলাউড়ায় ‘চক্ষুসেবায় নারীদের অভিগম্যতা নিশ্চিৎকরণ’ বিষয়ক পরামর্শ সভা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি হলেন ওসমানীনগরের ময়নুল হক চৌধুরী বড়লেখায় ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচার, থানায় জিডি

অবিভক্ত বাংলার এক বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা খলিল উল্লাহ

  • বুধবার, ২ মার্চ, ২০২২

নোমান আহমদ ::

প্রাচীন জনপদ ভাটেরা ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরায় বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশে খ্যাতি ও দ্যুতি ছড়ানো অনেক ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছেন। ভাটেরার বিগত ২০০ বছরের ইতিহাসে দ্যুতি ছড়ানো ব্যক্তিদের প্রথম সারিতে যার নাম আসে তিনি অধ্যক্ষ মাওলানা খলিল উল্লাহ। পুরো নাম অধ্যক্ষ মাওলানা খলিল উল্লাহ ছিলেন একাধারে একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, কবি, শক্তিমান লেখক ও শিক্ষক। ধর্মীয় শিক্ষার প্রচার-প্রসার ও সাহিত্য সাধনায় তিনি তাঁরা জীবন অতিবাহিত করেন।

বিরল পান্ডিত্যের অধিকারী মাওলানা খলিল উল্লাহ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন সিলেট জেলার হিংগাজিয়া থানার অন্তর্গত ঐতিহাসিক ভাটেরা পরগণার বড়গাঁও গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। উনবিংশ শতক থেকেই তাঁদের বাড়ী মৌলভী বাড়ী নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। সেসময়ে এ এলাকায় যোগাযোগ বা যাতায়াতের কোন ব্যবস্থাই ছিলো না। রাস্তা-ঘাটতো ছিলোই না, এমনকি এই এলাকায় রেলপথও স্থাপন হয়েছে তার অনেক অনেক পরে, সামর্থ্যবানদের জন্য ঘোড়ায় আরোহন আর সর্বসাধারণের জন্য পায়ে হেটে চলাই ছিল একমাত্র ব্যবস্থা।  অবশ্য নদী বা বর্ষাকালে হাওরবেষ্টিত এলাকার কথা ভিন্ন। উল্লেখ্য যে, তৎকালীন হিংগাজিয়া থানা থেকে পরবর্তীতে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কুলাউড়া থানা হয়।

মাওলানা খলিল উল্লাহর পিতার নাম মৌলভী মোহাম্মদ কলিম উল্লাহ। তিনি তৎকালীন একজন ধর্মপ্রাণ ও সমাজ সংস্কারক হিসেবে স্থানীয়ভাবে বেশ সুপরিচিত ছিলেন। ঐসময়ে স্থানীয়ভাবে উপযুক্ত ইসলামিক শিক্ষার কোন সুবিধা ছিল না।  যার কারনে খলিল উল্লাহকে অতি অল্প বয়সে তাঁর পিতা ইসলামি শিক্ষার জন্য ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করান। মাওলানা মোহাম্মদ খলিল উল্লাহ ১৮৫ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে বর্তমান কামিল পরিক্ষার সমমানের ফাইনাল পরিক্ষায় উত্তীর্ণ।

বৃটিশ শাসনামলে অবিভক্ত বাংলার ৫ টি আলিয়া মাদ্রাসা নিয়ে একটি ইসলামিক শিক্ষাবোর্ড ছিল । ঐ শিক্ষাবোর্ডের ফাইনাল পরিক্ষায় মোহাম্মদ খলিল উল্লাহ প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক পান। এর কিছুদিন পরেই তিনি অবিভক্ত বাংলার সরকারের শিক্ষা বিভাগে যোগদান দেন। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি পর্যায়ক্রমে রাজশাহী আলীয়া মাদ্রাসা এবং কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপনা করেন। এছাড়াও কিছুদিন তিনি রাজশাহী সরকারী কলেজের ফারসির অধ্যাপক ছিলেন। বৃটিশ-ভারতে বাংলার শিক্ষা বিভাগে তিনি ৩২ বছর চাকুরি করেন। রাজশাহী আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি চাকরি অবসর গ্রহণ করেন।

মাওলানা খলিল উল্লাহ’র সাহিত্যকর্ম তৎকালীন বেশ সমাদৃত ছিল। তিনি মূলত ফারসি সাহিত্যের লেখক হলেও  আরবী ও উর্দু ভাষায়ও তাঁর দারুণ পান্ডিত্য ছিল। তার জীবদ্দশায় ৮টি গ্রন্থ মুদ্রিত হয়েছিল। মুদ্রিত গ্রন্থগুলি হলোঃ

১। আফলাতুল মাওয়াছিরিন

২। কসিদায়ে লামিয়া মসমাতুল কায়েদ

৩। তওহীদুল কায়েনিন

৪। ছুলিছ ফারসি

৫। মি বায়েদিদ

৬। গুলজারে খলিল

৭। কাশকুলে খলিল

এই সাতখানা গ্রন্থই ঐসময়ে বেশ পাঠকপ্রিয়তা পায় গ্রন্থগুলোর দু-একটির অংশবিশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে বলে জানা গেছে। সঠিক সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে তাঁর অধিকাংশ সৃষ্টিকর্ম যা কিনা এখনাকার দিনে হতে পারতো ভাষা গবেষণার মূল্যবান উপকরণ। এমনকি তাঁর পরিপূর্ণ একটি জীবনীমূলক তথ্যসমৃদ্ধ লেখা থাকলে তা বর্তমান প্রজন্মের জন্য অনেক অনুপ্রেরণামূলক হতে পারতো।

 ফারসি সাহিত্যে বিংশ শতাব্দীতে আলোচিত দুজন সাহিত্যিকের একজন ছিলেন বর্ধমান জেলার মাওলানা মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান এবং অপরজন ছিলেন সিলেট জেলার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ খলিল উল্লাহ। ফারসি সাহিত্যে বিশেষ পান্ডিত্যের জন্য তৎকালীন বাংলার গভর্ণর মাওলানা খলিল উল্লাহকে রৌপ্যপদক ও মানপত্র প্রদান করেছিলেন। মরহুম মাওলানা শাহ আবু ইউসুফ ইয়াকুব সাহেব কিবলা (রঃ) একবার সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা করতে একবার ভাটেরায় মাওলানা খলিল উল্লাহ সাহেবের গ্রামের বাড়ী এসেছিলেন। মাওলানা খলিল উল্লাহ একজন বিদগ্ধ আলেম হলেও তিনি চিন্তা চেতনায় ছিলেন আধুনিক। তিনি ধর্মীয় সকল কুসংস্কার বিরোধী ছিলেন। বিশ শতকে অবিভক্ত বাংলার এক খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যক্ষ মাওলানা খলিল উল্লাহ ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ৮৫ বছর বয়সে বর্তমান কুলাউড়ার ভাটেরায় তাঁর গ্রামের বাড়ীতে ইন্তেকাল হন। বাড়ীর সম্মুখেই পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

লেখকঃ

নোমান আহমদ

সম্পাদক, মাসিক উষার আলো, সভাপতি, রেডস।

ঠিকানাঃ ভাটেরা, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার।

মোবাইলঃ ০১৭২২-১১১১৬৭

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews