এইবেলা, কুলাউড়া ::
এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া উপজেলা অংশে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ০৭ এপ্রিল থেকে উপজেলা কৃষি অফিসের লোকজনের উপস্থিতিতে ধান কাটা উৎসব শুরু হয়।
এবছর খর তাপে হাকালুকির তীরে কৃষকদের ফসলি জমিতে দেখা দিয়েছিল তীব্র পানির সংকট। কৃষকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের ফসল তুলা যাবে কি না এটা নিয়ে দেখা দিয়েছিল বিরাট শঙ্কা।হাকালুকির তীরে মাঠে পানির অভাবে ফাটল দেখা দিয়েছিল। চারা রোপণের প্রথম দিকে কোনো কোনো জায়গায় পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলেও পরে ফসলি মাঠে পানির হাহাকার ছিল। তীব্র পানির সংকটে কৃষকের চোখে- মুখে দেখা দিয়েছিল চিন্তার ভাঁজ। পরে খরা কাটিয়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় বোরো ধানে ফলন নিয়ে ফের আশাবাদী কৃষকরা।
হাকালুকির হাওরে যে ছোট বড় খাল রয়েছে সেগুলি শুকিয়ে গিয়েছিল। আবাদি জমির পরিমান বেশি হওয়ায় তুলনামূলক পানির জোগান না থাকায় দেখা দিয়েছিল পানির অতিরিক্ত সংকট। পানির সংকট অতিরিক্ত মাত্রায় দেখা দেওয়ায় বোরো চাষ অন্যবছরের তুলনায় কম হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় ধানের শীষ বের হলেও পানির অভাবে ফলন খুব একটা ভালো হয়নি।বোরো চাষের এলাকায় খরার সময় হিটশকের মাত্রা ধরা হয়েছিল। আক্রান্ত এলাকায় তাপমাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। ফ্লাওয়ারিং স্টেজের সময় অতিরিক্ত গরম বাতাস থাকায় ধানের শীষ থেকে পানি বেরিয়ে গেছে।
কৃষি অফিস বলছে, সব শঙ্কা কাটিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। হাওর তীরে পানির সংকট দেখা দিলেও অনান্য জায়গায় ফলন ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে।
স্থানীয় কৃষক আজমল আলী জানান জানান, বোরো ধান লাগাতে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয়েছে। এছাড়া বোরো আবাদ করতে খরচও বেশি হয়। ধান লাগানোর পর থেকে তিন-চার দিন পরপর সেচ দিতে হয়।বোরো আবাদ করে লাভমান হওয়ার আশা রাখলেও এবার ফলন ভালো হয়নি। এবার বোরো ধান চাষে কৃষকরা পানির সংকটে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
স্থানীয় কৃষক চিনু মিয়া জানান,’পানির সংকট দেখা দেওয়ায় চাষিদের ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে।পানি না থাকায় চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বোরো চাষের এলাকায় গভীর নলকূপের ব্যবস্থা থাকলে হয়তো পানি সংকটের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেত। ।
কুলাউড়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে , এ বছরের বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ২ শত হেক্টর জমি ।এর মধ্যে হাইব্রিড ১ হাজার হেক্টর,উফশী ৭ হাজার ১ শত ৮০ ও স্থানীয় জাত ২০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৮ হাজার ৫ শত ৮৫ মেট্রিক টন। গত বছর ৭ হাজার ৯ শত ১২ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রায় ধান উৎপাদন হয়েছে ৪৬ হাজার ৯ শত ৩৮ মেট্রিক টন। এ বছরের বোরো ধান উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উন্নতজাতের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ২ বিঘা জমিতে বিশেষ ধানের বীজ ‘বঙ্গবন্ধু ১০০’ দুই জন কৃষককে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.আব্দুল মোমেন জানান, বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অনেক জায়গায় পানি শুকিয়ে গিয়েছিল।ফলে অনেক জায়গায় আশানুরূপ ফলন হয়নি। সবমিলিয়ে শঙ্কা কাটিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় ধান উৎপাদনে উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের সহযোগিতা করছে। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে।#
Leave a Reply