বুলবুল ইসলাম :: আরবী বছরের সর্বশেষ মাস হলো জ্বিলহজ মাস। পাক কুরআনে ঘোষিত চারটি পবিত্র মাসের মধ্যে অন্যতম এই মাস। এই মাসের ফজিলত ও ইবাদত সম্বন্ধে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হাদীস রয়েছে।
মহানবী (স) বলেছেন : ‘আল্লাহ পাক ইবাদতের জন্য জ্বিলহজ মাসের প্রথম দশদিনকে ফজিলতপূর্ণ করেছেন। এই দশদিনের দশমদিন ব্যতীত প্রতিদিনের রোজার সওয়াব এক বছরের রোজার সমতুল্য। আর প্রতিটি রাতের ইবাদত শবে কদরের রাতের ইবাদতের সমান’।
(তিরমিজী শরীফ) উল্লেখ্য, জ্বিলহজ মাসের ১০,১১,১২,১৩ তারিখ রোজা রাখা নিষিদ্ধ। এ বরকতময় দশ দিনের কোনো এক রাতে ইবাদত করে কাটানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। পবিত্র কুরআন শরীফে সূরা আল-ফাজরির শুরুতে আল্লাহ পাক যে দশটি রাতের কসম করেছেন অধিকাংশ তাফসীরকারকগণের মতে, এটা জ্বিলহজ মাসের প্রথম দশ রাত্রিই। বিশেষ করে নবম তারিখ আরাফাতের দিবাগত রাতের ফজিলত ও মর্যাদা বেশি।
শবে তারবিয়া : হযরত ইব্রাহিম (আ) জিলহজ মাসের আট তারিখ রাতে পুত্র ইসমাঈল (আ) কে কোরবানি করার জন্য স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়েছিলেন। এই রাতটিকে শবে তারবিয়া বলে। রাসূল (স) শবে তারবিয়ার রাতকে সম্মানিত রাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাই মুসলমানদের উচিত এই রাতে অধিক পরিমাণ নফল ইবাদত করা।
আরাফার রাতের ও দিনের ইবাদত : ৯ই জ্বিলহজকে আরাফার দিন বলা হয়। আরাফার দিন রোজা পালন করতে মহানবী (স) উত্সাহিত করেছেন।
হযরত কাতাদা (রা) হতে বর্ণিত নবী (স) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্বিলহজ মাসের ৯ তারিখ রোজা রাখল আমি আশা করি যে, তার পিছনের এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’
(মুসলিম শরিফ) আরাফার দিনে ইবাদত করে যে কোনো প্রার্থনা করলে আল্লাহপাক তা কবুল করেন। এই দিনে সত্তরটি রহমতের দরজা খোলা থাকে। আরাফার দিনের বিশেষ মর্যাদার কারণ এই দিনে সারা বিশ্বের মুসলমানগণ এক স্থানে একত্রিত হন এবং ফরজ ইবাদাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন।
হজের সময় হাজী ব্যতীত অন্যদের করণীয় : হজের সময়ে হাজীগণ ব্যতীত অন্যান্য সাধারণ মুসলিমদের উচিত হাজীগণ যেসব কাজ করেন তা সাধ্যমত অনুকরণ করা। হাজীগণ ইহরাম বাঁধার পরে নিজ নখ, চুল কাটেন না। ১০ ই জিলহজ মিনায় কোরবানি করার পরে নখ, চুল কেটে ইহরাম খোলেন। তাই অন্য মুসলিমরাও তাদের অনুকরণে পহেলা জিলহজ হতে ৯ই জিলহজ পর্যন্ত নখ, চুল না কেটে ১০ই জিলহজ কোরবানি করার পরে নখ চুল কাটবেন। এটা শরীয়তের বিধান মতে মুস্তাহাব ।
৮ ই জ্বিলহজ সকাল হতেই আকাশ বাতাস মুখরিত করে তালবিয়া পাঠ করতে করতে হাজীগণ মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান। আমরা সাধারণ মুসলিমগণও ঐ দিন সকাল থেকেইে তাদের অনুকরণে তালবিয়া পাঠ করতে পারি।
হযরত সহল ইবনে সাআদ (রা) বর্ণনা করেন- নবী (স) বলেছেন, ‘একজন হজযাত্রী যখন তালবিয়া পাঠ করে তখন তার আশেপাশের পাথর-নুড়ি, পাহাড়-পর্বত, বৃক্ষলতা সবকিছুই সেই তালবিয়া পাঠে শরীক হয়’। (তিরমিজী ও ইবনে মাজাহ) ৯ ই জিলহজ সকাল হতে হাজীগণ আরাফাতের ময়দানে হাজির হয়ে আল্লাহপাকের দরবারে দোয়া-মোনাজাত ও অন্যান্য ইবাদত করে থাকেন। অ-হাজী মুসলমানগণও ঐ দিন তাদের সঙ্গে দোয়া ও ইবাদতে শামিল হতে পারেন।
৯ই জ্বিলহজ দিবাগত রাতে হাজীগণ মুজাদালিফায় খোলামাঠে উন্মুক্ত আকাশের নিচে ইবাদত বন্দেগী ও কান্নাকাটি করে রাত অতিবাহিত করেন। অন্য মুসলমানগণও তাদের সঙ্গে শামিল থেকে যায় যার স্থান থেকে সারারাত ইবাদত করে কাটাবেন।
লেখক :
সাংবাদিক ও শিক্ষক, কুড়িগ্রাম
এইবেলা/জেএইচজে
Leave a Reply