এইবেলা, বড়লেখা :
ঈদের ছুটিতে প্রকৃতি কন্যা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্কে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। করোনা সংক্রমণের কারণে গত প্রায় আড়াই বছর দেশের অন্যতম এ পিকনিক স্পটটি ছিল প্রায় নিস্তব্ধ। এতে পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী, ইজারাদার ও এর সাথে জড়িত সকলেই ছিলেন চরম দুর্দিনে। তবে এ চিত্র পাল্টেছে এবারের ঈদে। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকা ভরে উঠে পর্যটকের পদচারণায়। ফলে এখানকার ব্যবসায়ী, ইজারাদারসহ সকলের মুখে ফিরেছে তৃপ্তির হাসি। ঈদের দিন থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্কে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় ১২ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে প্রবেশের আগে সড়কে প্রায় এক কিলোমিটার যানজটের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। সেখানে যানজট নিরসনে কাজ করছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক এলাকায় পৌঁছার পর বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। বিভিন্ন পণ্যের দোকান, খাবার হোটেলগুলোতেও ভিড় জমে। জলপ্রপাত এলাকায় প্রবেশের পর দেখা গেছে মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাস। দল বেধে মাধবকুণ্ডের জলে নেমে হইহুল্লোড় আর আনন্দ-উল্লাসে মেতেছে নানা বয়সী মানুষ। কেউ কেউ ঝরনার জলে সাঁতার কাটায় আবার অনেকে পাফে দাঁড়িয়ে প্রায় ২০০ ফুট ওপর থেকে অবিরাম ঝরনার জলপতনের দৃশ্য ও আশপাশের সবুজ প্রকৃতি উপভোগে ব্যস্ত থাকেন। স্মৃতি ধরে রাখতে এসব দৃশ্য তারা ক্যামেরা বন্দি করছেন।
স্বজনদের নিয়ে মাধবকুণ্ডে এসেছেন স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ কবি শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘মাধবকুণ্ড’ আমাদের উপজেলায়ই। তবে সব সময় আসা হয় না। ঈদ উপলক্ষে দেখতে আসলাম, অনেক ভালো লাগছে। দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন। সবাই আনন্দ উপভোগ করছেন। আমাদেরও ভালো লাগছে। এখন বর্ষার সময়, প্রকৃতিতে সবুজের সমারোহ। তাই জলপ্রাপাত ও আশপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য, খাসিয়া পুঞ্জি এবং চা বাগান মানুষকে আকৃষ্ট করছে, তৃপ্তি দিচ্ছে।’
তরুণ ব্যবসায়ী সুলতান আহমদ বলেন, ‘ঈদে অবসর থাকায় ঘুরতে এসেছি। ভালো লাগছে। তবে পর্যটকদের জন্য এখানকার ব্যবস্থাপনাটা আরও উন্নত করা জরুরি। তাহলে পর্যটক সংখ্যা আরও বাড়বে।’
আলোকচিত্রী মো. রহিম উদ্দিন বলেন, ‘করোনাকালিন প্রায় আড়াই বছর মাধবকুণ্ড পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় খুব কষ্ট হয়েছিল। এবারের ঈদে কোনো বাধা নিষেধ নেই। তাই লোকজন আসছেন। এরকম লোকজন আসা অব্যাহত থাকলে আমরা ছবি তুলে রোজগার করতে পারব।’
ব্যবসায়ী কবির হোসেন বলেন, ‘করোনার সময় ঈদে লোকজন ছিলেন না। আমাদের ব্যবসায় মারাত্মক মন্দা দেখা দেয়। এরপর বিধিনিষেধ উঠলে মাধবকুণ্ড খুলে দেয়া হয়। পর্যটকও আসেন। কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে আমাদের মাঝে। এবার ঈদের দিন থেকে অনেক লোকজন আসছেন। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। গত আড়াই বছর ঈদে বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে, আশা করছি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারব।’
মাধবকুণ্ডে ট্যুরিস্ট পুলিশের দায়িত্বে থাকা এসআই মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঈদের দিন থেকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় হচ্ছে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। এছাড়া আমরা মাধবকুণ্ডে ভ্রমণে আসা কিশোরদের মাদক সেবন, ইভটিজিং ও অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সচেতন করছি।’
বড়লেখা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস জানান, ‘ঈদের দিন মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত আনুমানিক ১২ হাজারের মতো পর্যটক ভেতরে প্রবেশ করেছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ, বনবিভাগ ও ইজাদারের লোকজন কাজ করছেন।’
Leave a Reply