এইবেলা, বড়লেখা :
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার পিডিবি বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ভুতুড়ে বিলে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। মিটারের ব্যবহৃত ইউনিট থেকে শত শত ইউনিট অতিরিক্ত ধরে অস্বাভাবিক বিল দিচ্ছে পিডিবি। অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় বড়লেখা ও জুড়ীর ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বৃহস্পতিবার বিকেলে জুড়ী নাইট চৌমুহনী এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। পরে তারা পিডিবি’র আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয় ঘেরাও করে শ্লোগান দিয়েছেন।
মানববন্ধন সমাবেশে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে করতে তারা সর্বশান্ত। আগের তুলনায় এখন কয়েকগুণ বেশি বিদ্যুৎ বিল আসছে। বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, আগামী মাস হতে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু মাসের পর মাস ধরে অস্বাভাবিক বিল আসছেই। সময়মতো বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে। বিছিন্ন সংযোগ পূণরায় নিতে গেলে ভুতুড়ে বিল পরিশোধের পাশাপাশি সংযোগ নিতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। মানববন্ধনে বক্তারা এ হয়রানী পরিত্রানে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বড়লেখা উপজেলার কাশেমনগর গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহক আব্দুল মন্নান জানান, ১৮ আগষ্ট বৃহস্পতিবার তার মিটারের ব্যবহৃত রিডিং ৬৩২০ ইউনিট। কিন্ত পিডিবি প্রায় ২০ দিন আগের জুলাই মাসের বিলে ব্যবহৃত ইউনিট ৯২৩৭ দেখিয়ে ২০১৯ টাকার বিল দিয়েছে। জুড়ী উপজেলার জাঙ্গিরাই গ্রামের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, প্রতিমাসে মিটারের রিডিং না দেখে অতিরিক্ত ৮০০ থেকে ১০০০ ইউনিটের বিল দেয়া হচ্ছে। এতে করে আমাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বার বার অফিসে গিয়েও সমাধান না করায় আমরা মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়েছি। সমাধান না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হব।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী গ্রাহক আবু সাঈদ জানান, আমার বাবার নামের মিটারে প্রতি মাসে দুই হাজারেরও বেশি ইউনিটের বাড়তি বিল দেয়া হচ্ছে। ভুতুড়ে বিল থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই। ভুক্তভোগী আরিফুল ইসলাম জানান, আগে আমার বাড়িতে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা বিল আসতো এখন বিল আসে ৩ হাজার হতে ৩২শ’ টাকা। বিদ্যু বিল দিতে গিয়ে আমরা সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছি। বেলাগাও গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন, আমার মিটারে প্রত মাসে ৩ হাজার ইউনিটের বেশি বিল দেয়া হচ্ছে। আমি একজন সাধারণ কৃষক। কিন্তু বারবার অফিসে গিয়েও এর সমাধান পাচ্ছি না। আমরা এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই।
জানা গেছে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটারের রিডিং দেখে বিল দেয়ার নিয়ম থাকলেও পিডিবি কর্মচারীরা প্রতিমাসে অফিসে বসে অনুমান নির্ভর ভুতুড়ে বিল তৈরি করে গ্রাহকদের কাছে বিলি করছে। এতে করে অতিরিক্ত বিলের বোঝা মাথায় নিয়ে বিদুৎ অফিসসহ বিভিন্ন জায়গা ধরণা দিচ্ছে সাধারণ গ্রাহক। অনেক সময় অফিসের লোকজনের সাথে ভুতুড়ে বিলকে কেন্দ্র করে গ্রাহকরা জড়িয়ে পড়ছেন বাক বিতন্ডা। দীর্ঘদিন থেকে এ সমস্যা চলতে থাকায় গ্রাহকদের দুর্ভোগ চরম আকারে পৌঁছেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা রিডিং না দেখে বিল দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, অনেকেই অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। যার কারণে বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস হচ্ছে। এ ঘাটতি পূরণে বৈধ গ্রাহকদের অতিরিক্ত বিল দিয়ে তা সমন্বয় করা হচ্ছে।
এব্যাপারে জানতে পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী উসমান গনির সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। জুড়ী পিডিবি আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনসারুল কবির শামীম বলেন, যারা অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ করছেন মিটার দেখে তাদের বিল সমন্বয় করা হবে।
Leave a Reply