এইবেলা, বড়লেখা :
বড়লেখায় খাসজমি দখল মামলার আসামী হওয়ায় কপাল খুলল হতদরিদ্র ভুমিহীন নারী মনোয়ারা বেগমের। তার সাথে ৫ শতাংশ জমি বিক্রির চুক্তি সম্পাদন করে স্থানীয় এক প্রভাবশালী। চুক্তিমোতাবেক জমির মূল্যগ্রহণ করেও দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর ধরে বিক্রিত জমির দখল ও রেজিষ্ট্রী করে না দিয়ে উল্টো তিনি দরিদ্র এ মহিলাকে চরম হয়রানী ও ভয়ভীতির প্রদর্শণ করেন। ভুমিহীন এ মহিলার অসহায়ত্বের ঘটনাটি নজরে আসায় স্বপ্রণোদিত হয়ে আদালত থানার ওসিকে প্রাথমিক তথ্য বিবরণীর মাধ্যমে ওই প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে মামলা রুজুর আদেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে পাখিয়ালা গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে প্রভাবশালী মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়ার বিরুদ্ধে এ আদেশ জারি করেন বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হক।
আদালত ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, মনোয়ারা বেগমের স্বামী আব্দুল কাইয়ুমের আদি বাড়ি হবিগঞ্জ জেলায়। প্রায় ৩৫ বছর আগে শ্বশুড় বাড়ির সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে তিনি বড়লেখায় আসেন। পাখিয়ালা গ্রামে ভাড়া বাসায় থেকে দিনমজুরী করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। মনোয়ারা বেগমের মাথা গুঁজার ঠাঁই নাই থাকায় ৫ শতাংশ জমি ক্রয়ের জন্য চুক্তি করেন স্থানীয় প্রভাবশালী মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়ার সাথে। ২০১৮ সালের ৪ আগষ্ট মুজিব মিয়া চুক্তি অনুযায়ী জমির মূল্য বাবত নগদ ২ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। পরে আরও ২০ হাজার নিয়ে জমিটি ভরাট করালেও দখল ও রেজিষ্ট্রী করে দেননি। প্রায় ৪ বছর ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরমেয়র, কাউন্সিলর ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের নিকট নালিশ দিয়েও ভুক্তভোগী মনোয়ারা বেগম কেনা ভুমির দখল পাননি। মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়া তার বিচার কেউ করতে পারবে না বলে মনোয়ারা বেগমকে হুমকি-ধমকি দেন। এতে তিনি নিরুপায় হয়ে টাকা ও জমি ফেরৎ পাওয়ার আশা ছেড়েই দেন। এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মানিক মিয়া মনোয়ারা বেগমকে বোন বানিয়ে কোথাও বসতঘর তৈরীর ভুমি দেয়ার আশ্বাস দেন। তার আশ্বাসে শাহবাজপুর চা বাগান এলাকায় সরকারী খাস জমি দখল করে বসতঘর নির্মাণ করেন মনোয়ারা বেগম।
এদিকে সরকারী পাহাড়ী খাস জমি দখলের ঘটনায় মনোয়ারা বেগমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে চা বাগান কর্তৃপক্ষ। গত ২৫ জুলাই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে পুলিশের সাথে দখলদারদের সংঘর্ষ ঘটে। এঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে দলখদারদের বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করে। ওই দুই মামলার একটি মামলায় পুলিশ মনোয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদানকালে মনোয়ারা বেগম সরকারী খাস জমি দখলের নৈপথ্য কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে প্রতারিত ও হুমকি-ধমকির শিকার হওয়ার ঘটনাটি আদালতে তুলে ধরেন। ভুমিহীন নারীর সাথে এমন অমানবিক আচরণের ঘটনা জেনে মঙ্গলবার আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে থানার ওসিকে প্রভাবশালী মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়াকে একমাত্র আসামী করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলা দায়েরের আদেশ দেন।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী ইকরাম হোসেন জানান, খাস জমি দখল মামলায় মনোয়ারা বেগম গ্রেফতার হন। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদানকালে তিনি এ অপরাধের পেছনের কারণ তুলে ধরেন। আদালতের মনে হয়েছে মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়া টাকা নিয়েও বিক্রিত জমি বুঝিয়ে দেননি। বিভিন্ন জনের নিকট ধর্ণা ও নালিশ দিয়েও বিচার না পেয়ে তিনি সরকারী ভুমিতে বসতঘর তৈরীর অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। ভুক্তভোগীর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে থানার ওসিকে মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়ার বিরুদ্ধে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন।
থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, আদালতের নিদের্শনা মোতাবেক মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব মিয়াকে একমাত্র আসামী করে থানায় মামলা রুজু করেছেন। প্রাথমিক তদন্তকাজও সম্পন্ন হয়েছে।
Leave a Reply