বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে লিখলেন লেখক আব্দুস সামাদ বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে লিখলেন লেখক আব্দুস সামাদ – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নে জিপিএ-৫ ও এ গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা রাজারহাটে ওয়ার্ল্ড ভিশনের আয়োজনে বাল্যবিবাহ বন্ধে সংলাপ কুড়িগ্রামে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র মতবিনিময় কুলাউড়া জয়চন্ডীতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন মিলন বৈদ্য কুড়িগ্রামে বাল্যবিবাহ ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে স্থানীয় স্টেক হোল্ডারদের সাথে সংলাপ কুলাউড়ায় ‘চক্ষুসেবায় নারীদের অভিগম্যতা নিশ্চিৎকরণ’ বিষয়ক পরামর্শ সভা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি হলেন ওসমানীনগরের ময়নুল হক চৌধুরী বড়লেখায় ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচার, থানায় জিডি কুলাউড়ায় এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্কের বিশ্ব টয়লেট দিবস উদযাপন কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজারে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে লিখলেন লেখক আব্দুস সামাদ

  • শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩

বাংলা নববর্ষ নিয়ে লেখক ও উন্নয়নকর্মী আব্দুস সামাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চমৎকার একটি লেখা পোস্ট করেছেন। তার লেখায় ফুটে উঠেছে বাংলা নববর্ষের নানান ইতিহাস ঐতিহ্য। পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো:-

পহেলা বৈশাখের আগে বাড়িঘর, উঠান, আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে দেখেছি। আমরা শিশুরাও এই কর্মে শরিক হয়েছি বড়দের সাথে। বৈশাখের প্রথম দিনের কয়েকদিন আগে থেকেই এই ঝাড়মোছের কাজ শুরু হয়ে যেত। উঠানের শ্যাওলা, পথের পাশের ঘাস, বেড়ে ওঠা আগাছা, ঝোপঝাড় এগুলো পরিষ্কার করে সাফসুতরো করা হতো বাড়িঘর।

বছরের শুরুর এই দিনটাতে সবাই সাধ্যমত ভালো খাবারদাবার রান্না করতেন। গ্রামে অনেকেই এসময় গরু, মহিষ জবাই করতেন। মানুষ সাধ্যমত ভাগা মাংস কিনে নিয়ে যেতেন। যারা মাংস কিনতে পারতেন না তারা তাদের সাধ্যমত ভালো খাবার রান্নাবাড়া করার চেষ্টা করতেন।

বছরের প্রথম দিনে আমরা ভালো জামা কাপড় পরতাম। নতুন জামা কেনার চল গ্রামে ছিলনা বললেই চলে। পুরনো ভালো জামাটা ধুয়ে পারলে ইস্ত্রী করে রাখা হতো ওই দিন পরার জন্য। সবাই মনে করতাম বছরের প্রথম দিনটা ভালো গেলে পুরো বছরটাই ভালো যাবে। তাই নববর্ষের দিনে সবাই হাসিখুশি আর আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করতাম।

নববর্ষের একটা প্রধান উপলক্ষ ছিল হালখাতা। দোকানীরা এইদিন আগের বছরের সকল বকেয়া পরিশোধ করে পুরনো হিসেব চুকিয়ে খাতা বন্ধ করার চেষ্টা করতেন। আর এই হালখাতার দিনে নতুন বছরের নতুন খাতা খুলতেন ব্যবসায়ীরা। আমাদের কাছে হালখাতার অনুষ্ঠানটি ছিল সবিশেষ আগ্রহের। মিষ্টি, নিমকি, বুন্দিয়া ইত্যাদিতে আপ্যায়ন করতেন দোকানী তার নিয়মিত কাস্টমারকে। বকেয়া না থাকলেও মিষ্টি মুখ করানোর জন্য তার নিয়মিত কাস্টমারকে দাওয়াত দিতেন দোকানী। কেউ কেউ পুরো বকেয়া দিতে না পারলেও একটা টোকেন মানি দিয়েও হালখাতার অনুষ্ঠানে শরিক হতেন।

পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে মেলা, বান্নির জন্য অপেক্ষায় থাকতাম সারা বছর। মুড়ি মুড়কি, খৈ, মিষ্টান্ন আর চুড়ি, মাটির হাড়ি পায়িল, খেলনা এগুলোর কেনার জন্য অপেক্ষায় থাকতাম আমরা। মেলায় বেচার জন্য কেউ প্রস্তুতি নিতেন আর কেনার জন্যও সবাই। নববর্ষের একান্ত অনুষঙ্গ ছিল এই বৈশাখী মেলা।

সাম্প্রতিক মঙ্গল শোভাযাত্রা বিতর্কে আমার শৈশবের স্মৃতি মনে পড়ে গেল। মঙ্গল শোভাযাত্রা আমার কাছে শহুরে মধ্যবিত্তের অনুষ্ঠান। আমার শৈশব কৈশরের গ্রামীন জীবনে এটা কখনো দেখিনি। আমার কাছে মনে হয় আপামর বাংলার সংস্কৃতি এটা নয়। সংস্কৃতি কারো উপর চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়। নানান প্রাণীর প্রতিকৃতি নিয়ে শোভাযাত্রা করলে যে মঙ্গল আসবে সেই ব্যাপারে কোন কিতাব দলিল নাই। আবার ঐদিন মসজিদ, মাদ্রাসায় মিলাদ মাহফিল আর কুরআন খতম করে দোয়া মাহফিল আয়োজন করলেও যে মঙ্গল চলে আসবে সেই ব্যাপারে কোন নিশ্চিত প্রমাণও নেই। বহুত্ববাদী একটি সমাজে নাগরিক তার চিন্তার, ভাবনার আর আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ করবে এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে কাউকে কদর্য আক্রমণ কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রোমোটারদেরকে যদি কেউ কোন বিশেষ ধর্মের সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠিত করার একটি নীল নকশার অংশ হিসেবে ভাবে সেটা সে ভাবতে পারে। আবার মঙ্গল শোভাযাত্রা বিরোধীদেরকে যদি কেউ অন্য কোন একটি ধর্মের ধর্মীয় মৌলবাদ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মনে করে সেটা সে করতে পারে। তাই বলে একপক্ষ আরেকপক্ষকে কদর্য আক্রমণ করবে, আঙ্গুলী উত্থাপন করবে, ঘৃণা ছড়াবে সেটা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।

হালের শহুরে মধ্যবিত্তদের এলিট সম্প্রদায়ের বৈশাখ উদযাপনের তরিকা যেন বাঙালি সংস্কৃতির সার্বজনীন উৎসব উদযাপন হিসেবে চালিয়ে দেয়া না হয়। আমার মত গ্রামে বেড়ে উঠা মানুষেরা এইভাবেই ভাবেন বলে আমার ধারণা। আমার ধারণার সাথে আপনার ধারণা মিলতে নাও পারে। কদর্য আক্রমন সহ্য করার প্রস্তুতি আমার আছে।

আমার শৈশবের দেখা বৈশাখ এখন হারিয়ে গেছে। আমার শৈশবের দেখা বৈশাখ এখন পাঞ্জাবি আর শাড়ি পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। আমার শৈশবের দেখা বৈশাখ তার আবেদন হারিয়ে ছোট্ট ক্লাবঘরে ঢুকে গেছে। আপামর বাংলার সংস্কৃতি যেটার ভিত্তি গ্রামীন জনজীবন তা আজ শহুরে মধ্যবিত্ত এবং এলিটদের হাতে নতুন তকমা পেয়ে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে। ছোট্ট ক্লাবের সংস্কৃতি আজ সার্বজনীন গ্রামীন সংস্কৃতি হিসাবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।

সকল সংস্কৃতিই বিকশিত হোক। বৈচিত্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে শিখি আমরা এই কামনা করি নতুন বছরের প্রথম দিনে। বহুত্ববাদী সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলে শামিল হই এই কামনা করি নতুন বছরের প্রথম দিনে। বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন নিয়ে আমরা কথা বলি, উচ্চকণ্ঠ হই কিন্তু শহুরে মধ্যবিত্ত এলিটদের সংস্কৃতি আপামর বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির সার্বজনীন সংস্কৃতি বলে চালিয়ে দেয়া কি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন নয়?

আসুন, আমরা সহনশীল হই। পারস্পরিক শ্রদ্ধা সম্প্রীতি আর সহনশীলতা নিয়ে একসাথে বসবাস করি। নতুন বছরটি সবার ভালোকাটুক এই কামনা করি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews