কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চারটি পরিবারের চারটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে ৮টি প্রতি মূর্তি ভাংচুর করেছে অজ্ঞাত দূর্বৃত্তরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুর রহমান।
উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডল সীমান্তের আন্তজার্তিক মেইন পিলার ৯২৯ এর সাব পিলার ১ এস থেকে ৪শ গজ বাংলাদেশের অভ্যান্তরে রায়পাড়া গ্রামে মঙ্গলবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটেছে।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিধি, গোরকমন্ডল ক্যাম্পের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি সদস্যরা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজ্জাদ হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও সুমন দাস।
পুলিশ জানায়, অজ্ঞাত দূর্বৃত্তরা ভবেশ চন্দ্র বর্মণের বাড়ির উঠানে হরিদেব মন্দির, বিনয় চন্দ্র বর্মনের বাড়ির উঠানে মনসা মন্দির, থীরেন চন্দ্র বর্মণের বাড়ির উঠানে মহাদেব মন্দির ও বীরেন চন্দ্র বর্মনের বাড়ির উঠানে রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে হামলা করেছে। দূর্বৃত্তরা চারটি মন্দিরের ভেতর মোট আটটি মূর্তি ভাংচুর করেছে।
বীরেন চন্দ্র বর্মন জানান, তার বাড়ির উঠানে রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে গ্রামের সকলেই পূজা করেন। গেল তিনযুগ ধরে তারা এ মন্দিরে পূজার্চনা করে আসছেন। সোমবার সন্ধ্যায় তারা সকলে মন্দিরে প্রার্থনা করেছেন।
মঙ্গলবার সকালে মন্দিরে পূজার জন্য এসে দেখতে পান মন্দিরের ভেতর মূর্তিগুলো ভাংচুর অবস্থায় পড়ে আছে। ধারনা করা হচ্ছে মঙ্গলবার ভোররাতে মন্দিরে হামলা করে মুর্তি ভাংচুর করা হয়েছে। এর আগে কোনদিনই এই গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেনি।
ভবেশ চন্দ্র বর্মন ও ধীরেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, একই রাতে গ্রামে চারটি মন্দিরে হামলা করে মূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় তারা আতংকিত হয়ে পড়েছেন। এ ঘটনায় তারা থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের ফুলবাড়ী উপজেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্র রায় বলেন, হিন্দু জনগোষ্ঠির মাঝে আতংক ছড়াতে সংঘবদ্ধ দূর্বৃত্তরা মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুর করেছে।
দূর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তুমুলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে তারা পুনরায় এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার দু:সাহস পাবে। তাই তিনি এঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবী জানিয়েছেন।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সংঘবদ্ধ চক্রটি মন্দিরে হামলা ও মূর্তি ভাংচুর করে আতংক সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তারা অবশ্যই সরকার বিরোধী।
কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হিন্দু জনগোষ্ঠির মানুষজনের সাথে মতবিনিময় করেছেন। মন্দিরে হামলা ও মূর্তি ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, হিন্দু জনগোষ্ঠির সাথে মতবিনিময় করে তাদেরকে আতংকিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।
মন্দিরে হামলা ও মূর্তি ভাংচুরকারী দূর্বৃত্তদের অবশ্যই চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে। তাদের দৃষ্টান্তুমুলক শাস্তি নিশ্চিত করাও হবে। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জেলা প্রশাসক মহাদয়ের নিদের্শে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে।#
Leave a Reply