হাকালুকির মালাম বিলের জলজবৃক্ষ নিধন : ৩ সচিবসহ ২২ জনকে বেলা’র নোটিশ হাকালুকির মালাম বিলের জলজবৃক্ষ নিধন : ৩ সচিবসহ ২২ জনকে বেলা’র নোটিশ – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিটার মিনিবার নাইট ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন এফসি ডার্ক নাইট একজন মেহেদী হাসান রিফাতের গল্প : স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে আত্রাইয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত কুলাউড়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার দায়ে ১ লাখ টাকা জরিমানা : ১৪ টি যানবাহন জব্দ কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবার খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব “সেং কুটস্নেম” কুলাউড়া উপজেলা যুবলীগের সহ সভাপতি আটক কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নে জিপিএ-৫ ও এ গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা রাজারহাটে ওয়ার্ল্ড ভিশনের আয়োজনে বাল্যবিবাহ বন্ধে সংলাপ কুড়িগ্রামে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র মতবিনিময়

হাকালুকির মালাম বিলের জলজবৃক্ষ নিধন : ৩ সচিবসহ ২২ জনকে বেলা’র নোটিশ

  • শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০২৩

আব্দুর রব ::

দেশের সর্ববৃহৎ জলাভূমি হাকালুকি হাওড়ের মালাম বিলের জলজবৃক্ষ নিধনের ঘটনায় হাওড়ের হারানো পরিবেশ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) চার সুপারিশ উপেক্ষিত। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) এই বিষয়ে কার্যকর প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রণালয়াধীন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বন সংরক্ষক, মৌলভীবাজার ও সিলেটের জেলা প্রশাসক, ইজারাদার সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট ২২ জনকে ‘নোটিশ অব ডিমান্ড ফর জাস্টিস’ পাঠিয়েছে ‘বেলা’।

এই বিষয়ে পত্র প্রেরণের ৭ দিনের মধ্যে গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশ দাতাকে অবহিত করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের অর্ন্তভুক্ত বড়লেখা উপজেলাধীন মালাম বিলের (মৎস্য জলাশয়) আয়তন ৪২৮.৯২ একর। ১৪২৭ বাংলা হতে ১৪৩২ বাংলা সন পর্যন্ত সময়ের জন্য ভুমি মন্ত্রণালয় থেকে ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৩৪৩ টাকায় মালাম বিলটি ইজারা নেয় বড়লেখার মনাদি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি। মালাম বিলের কান্দির (পাড়ে) সরকারী ভুমিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০৩ সাল হতে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নে হিজল, করচ, বরুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ রোপন করে। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো জলজ বৃক্ষের রক্ষনাবেক্ষন করে। প্রাকৃতিক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সৃজিত জলজ উদ্ভিদগুলো ১০-১৫ ফুট উচ্চতার হয়েছে। যা হাকালুকি হাওরের ইসিএ এলাকার জীববৈচিত্র রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রোধে বিশেষ অবদান রাখছিল। ২০২১ সালের মে মাসের শুরুর দিকে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ইজারাদারের লোকজন বিলের বাঁধ নির্মাণের নামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ও প্রাকৃতিক জলজ বনের প্রায় ২০ হাজার গাছ অবৈধভাবে কেটে ফেলে। এতে হাওড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়ে। এই ঘটনায় ওই বছরের ১৯ জুন ‘হাকালুকির মালাম বিলের ২০ হাজার জলজ বৃক্ষ নিধন-হুমকিতে হাওড়ের জীববৈচিত্র’ শিরোনামে যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন ছাপা হলে সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় শুরু হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ঘটনায় জড়িত ৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে। এরপর বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে হাওড়ের পরিবেশ পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন সুপারিশ ও দায়ীদের শাস্তির দাবীতে নানা কার্যক্রম চালায়।

গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ‘বেলার’ সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল সরেজমিনে মালাম বিল এলাকা পরিদর্শণ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে চারটি সুপারিশ প্রদান করে। সুপারিশগুলো হচ্ছে- মালাম বিলের চারপাশে যে কৃত্রিম বাধ নির্মাণ করা হয়েছে তা অপসারণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে কোনো বাধ দেওয়া না হয় তা নিশ্চিত করা। যে জায়গার গাছ কাটা হয়েছে সেখানে বৃক্ষরোপন করা। কেউ যাতে সরকারি জায়গা দখল করে কৃষি জমির আওতায় নিয়ে আসতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যারা নির্বিচারে গাছ কেটে হাওরের পরিবেশ বিনষ্ট করেছে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সর্বশেষ বেলার প্রতিনিধি দল চলিত মাসের ১১ জুলাই ফলোআপ পরিদর্শণে গিয়ে সুপারিশগুলো কার্যকর হয়নি দেখে ২০ জুলাই সংশ্লিষ্টদের নোটিশ প্রদান করেছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আইনজীবি বাংলাদেশ সুপ্রীরকোর্টের অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না প্রেরিত নোটিশে বলা হয়েছে হাকালুকি হাওড়ের মালাম বিলটি বড়লেখার উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের দ্বিতীয়ারদেহী-৮৩ মৌজার এসএ ৫৪ ও ১০৮ নং দাগে অবস্থিত যার আয়তন ৪২৮.৯২ একর। বিলটি বদ্ধ জলমহাল হিসেবে ৫ বছর মেয়াদে নোটিশ গ্রহীতা মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কর্তৃক অপর নোটিশ গ্রহীতা মনাদি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি বরাবর মৎস্য চাষের উদ্দেশ্যে ইজারা প্রদান করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শণ ও বড়লেখা ভূমি অফিসের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ি ইজারা চুক্তি লঙ্ঘন করে ১৪২৭-১৪২৮ বঙ্গাব্দ (২০২১ খ্রি:) এ বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ও পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক সৃজিত বিভিন্ন প্রজাতির জলজবৃক্ষ কেটে ইজারাদার দুই কিলোমিটার বাধ নির্মাণ ও ১০-১২ বিঘা জমি চাষ উপযোগি করেন। যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশ হলে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বড়লেখা থানায় ৭ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করলেও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার বৈশিষ্ট নষ্ট করে জলজ প্রজাতির বৃক্ষ নিধন ও বাধ নির্মাণের স্পষ্ট অভিযোগ থাকলেও মামলায় ইজারা গ্রহীতাকে বিবাদী করা হয়নি এবং ইজারা চুক্তি আজও বাতিল করা হয়নি।

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ি হাওড়, বিল ও জলাধার হিসেবে সংজ্ঞায়িত যার শ্রেণি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। অধিকন্ত প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষিত কোনো স্থানের বৈশিষ্ট নষ্ট করে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করা ও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গাছ কাটা সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ। বৃক্ষ নিধনের পরই পরিবেশ অধিদপ্তর কিছু চারা রোপন করলেও এখন আর সেগুলোর কোনো অস্থিত্ব নেই।

বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নোটিশ প্রদানের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মালাম বিলের প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় স্থাপিত বাধ ও বিলে ফেলা মাটি অপসারণের এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে গাছ কাটার অপরাধে জরিমানা ও প্রতিটি কেটে ফেলা গাছের বিপরীতে নির্ধারিত পরিমাণ গাছ লাগানো ও বেড়ে ওঠা পর্যন্ত পরিচর্যা নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি। নোটিশ প্রদানের ৭ দিনের মধ্যে কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা অবহিত করা না হলে বেলা পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews