এইবেলা, কুলাউড়া :: চারিদিকে ফসলের মাঠ, মাঝখানে গোলাকার একটি পাকার ঘর, ঘরটিতে রয়েছে ছাউনি। আছে বসার জন্য পাকার বেঞ্চ। একত্রে প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারবে। এমনকি কৃষকদের পানি পান করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে নলকূপের। ঘরের পাশে রয়েছে কয়েকটি গাছ। ঘরের চতুর্দিকে লেখা হয়েছে কৃষকের ছাউনি।
বজ্রপাত থেকে রক্ষায় এবং কৃষকদের বিশ্রামের জন্য তৈরি করা হয়েছে এ ধরনের একটি ব্যতিক্রমী ঘর। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় হাকালুকি হাওর তীরবর্তী বরমচাল ইউনিয়নের পূর্ব সিংগুর এলাকায় এলাকাবাসী ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লুৎফুর রহমান ওয়াসিমের সহযোগিতায় ব্যতিক্রমী এই ঘর নির্মাণ করেছে পূর্ব সিংগুর নতুন কুঁড়ি ক্লাব নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘ পূর্ব সিংগুর কৃষক ছাউনি’।
হাওরে ধান কাটাসহ অন্য কাজ করার সময় কৃষি শ্রমিকরা বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে ওই ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে পারবে। শনিবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে সংগঠনের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে কৃষক ছাউনির উদ্বোধন করা হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ ছাউনির উদ্বোধন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক কল্যাণ প্রসূণ চম্পু, ও মাহফুজ শাকিল, পূর্ব সিংগুর নতুন কুঁড়ি ক্লাবের সহ-সভাপতি মনসুর আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বশির আল ফেরদাউস, সদস্য মাছুম আহমদ সওয়াব, তায়েফ আহমদ, আব্দুল জলিল, হাসান আহমদ, রাজন আহমদ, তওয়াব আহমদ, আনোয়ার আহমদ, জসিম আহমদ, সাহাব উদ্দিন, জাবেদ আহমদসহ এলাকার অন্তঃত অর্ধ শতাধিককৃষক উপস্থিত ছিলেন। ইফতার মাহফিলে দোয়া পরিচালনা করেনসংগঠনের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সোহেল আহমদ।
স্থানীয় কৃষক মাছুম আহমদ, জাবেদ আহমদ, সাহাব উদ্দিন, নামর আলী বলেন, আগে বৃষ্টির সময় আমরা হাওরে ভয় ও বজ্রপাত আতংক নিয়ে কৃষিকাজ করেছি। এখন নির্ভয়ে কাজ করতে পারছি। এখন আকাশ ডাকলেই আমরা ঐ ঘরের নিচে আশ্রয় নিচ্ছি।
পূর্ব সিংগুর নতুন কুঁড়ি ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক বশির আল ফেরদাউস বলেন, গত ৩ বছর আগে আমাদের গ্রামের সবাই মিলে বজ্রপাত থেকে কৃষকদের রক্ষায় একটা ছাউনি নির্মাণ করার উদ্যোগ নেই। প্রায় দুই লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই কৃষক ছাউনি তৈরিতে বড় অবদান রাখেন আমাদের সংগঠনের সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লুুৎফুর রহমান ওয়াসিম। বর্তমানে কৃষক ছাড়াও আশে পাশের অনেক মানুষ ছবি তোলার জন্য প্রতিদিন বিকেলে এই জায়গায় দেখতে আসে। আমাদের সংগঠনটি ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে অদ্যাবদি বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ ময়নুল হক সোনা মিয়া বলেন, কৃষকরা সাধারণত সারাদিন হাওরে কাজ করেন। দুপুরে বাড়ি যাওয়ার সময় পান না। তাই রোদে কিংবা বৃষ্টির সময় এই ছাউনিতে বসে খেতেও পারবেন। এলাকার স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কৃষক ছাউনি তৈরির ফলে অনেক উপকৃত হয়েছেন কৃষক ও শ্রমিকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু এমন সংবাদ আমরা পত্রিকার পাতায় প্রায়শই দেখে থাকি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু হয়। তাই কৃষকদের জন্য ভালো কিছু করার আগ্রহ থেকে হাকালুকি হাওরের বুকে কৃষক-ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে স্থানীয় উদ্যোগে। এতে করে হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি, ঘুর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ওই ছাউনিতে আশ্রয় নিতে পারবেকৃষকরা। এই উদ্যোগটি চমৎকার, মনোমুগ্ধকর প্রশংসার দাবি রাখে।#
Leave a Reply