এইবেলা, বড়লেখা::
বড়লেখা উপজেলার সংরক্ষিত বন পাথারিয়ায় অসুস্থ থাকা দলছুট সেই বন্য হাতিকে ৩ দিন খুঁজতে খুঁজেতে অবশেষে পাওয়া গেছে। এরপর ট্রাংকুলাইজারের মাধ্যমে অসুস্থ ওই হাতিটিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের উদ্যোগে হাতিটিকে মাধব-সমনভাগ বিটের (বড়লেখা উপজেলা অংশ) চিপাছড়া এলাকায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরআগে গত ৮ মে ‘পান জুমে বন্যহাতি, আতঙ্কে শ্রমিকরা’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে বিষয়টি বন বিভাগের নজরে আসে।
এরপর বনবিভাগ অসুস্থ হাতির চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চিঠি লেখে। এর প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ডা. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি মেডিকেল দল ছাড়াও বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারওয়ারের নেতৃত্বে পৃথক আরেকটি দল হাতিটির সন্ধ্যানে জুড়ীর লাঠিটিলা এলাকায় কাজ শুরু করে। তবে গত বুধবার বিকেল পর্যন্ত সেখানে (লাঠিটিলায়) হাতিটিকে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে গত বুধবার থেকে বনবিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাসের নেতৃত্বে বন বিভাগের একটি দল বড়লেখা উপজেলার সংরক্ষিত বন পাথারিয়ায় অসুস্থ থাকা দলছুট সেই বন্য হাতির সন্ধানে নামে। পরে মাধব-সমনভাগ বিটের (বড়লেখা উপজেলা অংশ) চিপাছড়া এলাকায় হাতিটির খোঁজ পাওয়া যায়। এরপর বৃহস্পতিবার ওই হাতিটিকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ডা. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এসময় সেখানে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজার সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম ছারওয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার পাথারিয়া পাহাড়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চল সংলগ্ন ৭নং খাসিয়াপুঞ্জির গুটিবাড়ি এলাকার পানজুমে গত ৭ মে একটি বন্য হাতিকে ঘুরেফিরে প্রায় একই জায়গায় অবস্থান করতে দেখেন খাসিয়া ও চা শ্রমিকেরা। দূর থেকে হাতিটিকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখেন তারা। এতে ধারণা করা হয় হাতিটি বয়স্ক ও অসুস্থ।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, বিগত কয়েক বছর ধরে ৭টি বন্যহাতি পাহাড়ের ভারত ও বাংলাদেশ অংশে অবাধ বিচরণ করত। লোকালয়ে তেমন দেখা যেত না। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করায় হাতিগুলো ভারতে প্রবেশ করতে না পারায় এবং পাহাড়ে খাদ্যাভাব ও বিচরণস্থল কমে যাওয়ায় তারা মাঝে মধ্যে লোকালয়ে প্রবেশ করে ক্ষয়ক্ষতি করত। ২-৩ বছর ধরে এই দলের তিনটি হাতিকে দেখা যায়নি। চারটিকে মাঝে-মধ্যে জঙ্গলে বিচরণ করতে দেখা যায়।
বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বলেন, হাতিটির বয়স আনুমানিক ৬০-৭০ বছর হবে। এটি পিছনের ডান পায়ে আঘাত পায়। পায়ে ক্ষতের চিহ্ন ছিল। সন্ধান পেয়ে ট্রাংকুলাইজারের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টিম বলেছে সুস্থ হবে। হাতির পায়ের ক্ষত অনেকটা শুকিয়েছে। হাতিটিকে আমরা নজরদারির মধ্যে রেখেছি।
Leave a Reply