ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামে প্রায় আশি বছরের পুরোনো জমি বিরোধ ঘিরে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই পারিবারিক বিরোধে বহুবার স্থানীয়ভাবে সালিশ ও আপোষ-মীমাংসার চেষ্টা হলেও কার্যকর সমাধান আসেনি। অবশেষে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে বিরোধ মীমাংসার পথে এগোলেও, শনিবার (৪ অক্টোবর) পরিমাপ কার্যক্রম চলাকালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
জানা যায়, আদালতের নির্দেশে ও ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’-এর আওতায় নিয়মিত প্রক্রিয়ায় জমি পরিমাপের কাজ শুরু হয়। জমি সংক্রান্ত বিরোধের বাদী মীর মো. মাসুক মিয়া গত ২৪ আগস্ট ইউএনও কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ সেপ্টেম্বর উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। শুনানিতে প্রতিপক্ষ শাহরিয়ার তারেক ও মনু মিয়া এক মাস সময় প্রার্থনা করলে তা মঞ্জুর হয় এবং ৪ অক্টোবর জায়গাটি পরিমাপের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
ঘোষিত সময় অনুযায়ী শনিবার সকাল ১১টায় সরকারি সার্ভেয়ার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে পরিমাপ শুরু করেন। প্রথমদিকে কাজ শান্তিপূর্ণভাবে চললেও কিছুক্ষণ পর দ্বিতীয় পক্ষের নেতৃত্বে কয়েকজন ব্যক্তি পরিমাপে বাধা দেয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।
সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে যখন স্থানীয় মসজিদের মাইক ব্যবহার করে ইউএনও ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়। ওই মাইকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করা হয়, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় তোলে।
জনমনে প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ বাগবাড়ী গ্রামের সচেতন মহল মনে করেন, “মসজিদের মাইক ধর্মীয় ও সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। একে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা অত্যন্ত নিন্দনীয়।” তারা আরও বলেন, “এ ধরনের অপপ্রচার ভবিষ্যতে সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে।”
বাদী মীর মো. মাসুক মিয়া বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি ভোগদখল করছি। কিন্তু প্রতিপক্ষ শুধু আমাদের জমিই নয়, সরকারি জমিও দখলের চেষ্টা করছে। বহু সালিশ ব্যর্থ হওয়ায় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি।”
অতীতের দীর্ঘ দ্বন্দ্ব, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ স্থানীয়রা জানান, এই বিরোধের সূচনা প্রায় আশি বছর আগে তাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকে। জমির দলিল ও দখল নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ আইনি লড়াই চলেছে একাধিকবার। ফলে গ্রামের মানুষ এখন প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্থায়ী সমাধান প্রত্যাশা করছে।
বাগবাড়ীর মানুষ এখন তাকিয়ে আছে—আইন ও প্রশাসনের সুবিচারের দিকে, যাতে বহু বছরের এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে এবং গ্রামে শান্তি ফিরে আসে।
প্রশাসনের অবস্থান এ বিষয়ে ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “বিধি মোতাবেক নিয়মিত প্রক্রিয়ায় পরিমাপ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। পরিমাপকালে উভয় পক্ষের জমির পাশাপাশি কিছু খাস জমিও চিহ্নিত হয়। সবকিছু আইনগতভাবে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”তিনি আরও জানান, প্রশাসন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে যাতে পুনরায় কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না ঘটে।
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply