স্মরণে- সাংবাদিকতার প্রথিক জেড এম শামসুল: সাদাসিধে জীবনে আলোর দিশারী – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বড়লেখার ছিদ্দেক আলী হাইস্কুলের ‘শতবার্ষিকী’ উদযাপনে কমিটি হিনাইনগর যুবসংঘের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গুনিজন ও কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নব বিমানসেনা দলের ৫৩ তম রিক্রুটদলের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত বড়লেখায় রহস্যঘেরা বাংলোবাড়িতে পুলিশের অভিযান বড়লেখা-জুড়ী নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের কর্মবিরতি : জনভোগান্তি মৌলভীবাজারে সুজনের গোলটেবিল বৈঠকে : নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ হলেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব ছাতকে ইউএনও তরিকুল ইসলাম বিদায় নতুন ইউএনও ডিপ্লোমেসি চাকমার যোগদান কুলাউড়ার শরীফপুরে সড়কে প্রাণ গেলো ২ মোটরসাইকেল আরোহীর  বড়লেখায় আর্ন্তজাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষে ৫ অদম্য নারীকে সম্মাননা বড়লেখায় আর্ন্তজাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবসে মানববন্ধন ও আলোচনা সভা

স্মরণে- সাংবাদিকতার প্রথিক জেড এম শামসুল: সাদাসিধে জীবনে আলোর দিশারী

  • মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫

Manual2 Ad Code

আনোয়ার হো‌সেন র‌নি::

সাংবাদিকতার এক নিবেদিতপ্রাণ, সৎ ও নিরহংকার মানুষ ছিলেন জেড এম শামসুল। দীর্ঘ পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত—যিনি সাংবাদিকতাকে দেখেছেন শুধু পেশা নয়, এক মহান দায়িত্ব হিসেবে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সংবাদপত্র, পাঠক ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তার মৃত্যুর পর সিলেটের সাংবাদিক সমাজ, পাঠক শুভানুধ্যায়ীদের মনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হবার নয়।

জেড এম শামসুলের জন্ম সিলেটের প্রান্তিক উপজেলা জকিগঞ্জে। অল্প বয়সেই শিক্ষার টানে তিনি সিলেট শহরে আসেন। এখানেই শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবনের পথচলা। ছাত্রজীবনেই সংবাদপত্রের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। লেখালেখির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও সত্য বলার সাহস তাকে সাংবাদিকতার জগতে নিয়ে আসে। তখন হয়তো ভাবেননি, এই পথই হবে তার জীবনের একমাত্র অবলম্বন।

Manual8 Ad Code

সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশের পর থেকেই জেড এম শামসুল ছিলেন সাদাসিধে জীবনের প্রতীক। বিলাসবহুল জীবন, মোটা বেতন কিংবা সামাজিক দাপট—এসব কিছুই তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি বিশ্বাস করতেন, একজন সাংবাদিকের আসল শক্তি হলো সততা ও নিষ্ঠা। তাই জীবনের প্রতিটি ধাপে তিনি এই নীতিকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

Manual4 Ad Code

তার ব্যক্তিজীবন ছিল অত্যন্ত সাধারণ। সিলেট শহরে বহু বছর সাংবাদিকতা করেও নিজের নামে একটি বাড়ি পর্যন্ত গড়তে পারেননি। শহরের এক কোণে ভাড়া বাসায় থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে অফিস, প্রেসক্লাব ও টিউশনি করতেন। বহু সহকর্মী মনে করেন, সেই সাইকেলই যেন তার পরিচয়ের প্রতীক—একজন নিঃস্বার্থ সংবাদকর্মীর জীবনের প্রতিচ্ছবি।

Manual7 Ad Code

প্রেসক্লাবে যারা নিয়মিত আসতেন, তারা সবাই জানেন, জেড এম শামসুল ছিলেন সবার প্রিয় মুখ। বয়সে প্রবীণ হলেও তরুণ সাংবাদিকদের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল পিতার মতো। নতুনদের তিনি শেখাতেন কীভাবে খবর সংগ্রহ করতে হয়, কিভাবে সত্য প্রকাশ করতে হয়, কিভাবে নির্ভয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়। অনেক তরুণ সাংবাদিকই আজও তার কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শকে জীবনের সম্পদ হিসেবে মনে করেন।
তার সহকর্মীরা বলেন, “শামসুল ভাই কখনো কাউকে কষ্ট দিতেন না। সোজা-সাপটা কথা বলতেন, তবে কারও প্রতি বিদ্বেষ ছিল না। প্রেসক্লাবে তার উপস্থিতি মানে ছিল এক ধরণের প্রশান্তি।”

Manual2 Ad Code

অন্য এক সাংবাদিক বলেন, “আমরা এখন বুঝতে পারছি, তার মতো মানুষ এক প্রজন্মে একবারই আসে। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু রেখে গেছেন সাংবাদিকতার এক নির্ভেজাল আদর্শ।”জেড এম শামসুলের জীবনে যতই কষ্ট আসুক, তিনি কখনো অভিযোগ করেননি। দারিদ্র্য তাকে নত করেনি, বরং করেছে দৃঢ়চেতা। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি লেখালেখি ও টিউশনি চালিয়ে গেছেন নিজের মর্যাদা বজায় রাখতে। সমাজে অনেকেই হয়তো তাকে ছোট করে দেখেছেন, কিন্তু তার মানসিক শক্তি, নৈতিক অবস্থান এবং আত্মসম্মান ছিল পাহাড়সম দৃঢ়।

তিনি ছিলেন মানবিক চেতনায় ভরপুর একজন সাংবাদিক। মানুষের দুঃখ-কষ্ট, সমাজের অন্যায়-অবিচার, শোষিতের কান্না—এসব বিষয় তাকে গভীরভাবে নাড়া দিত। তার লেখা প্রতিবেদনে ফুটে উঠত সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা, তাদের অনুচ্চারিত বেদনা।

সত্য প্রকাশে তিনি ছিলেন নির্ভীক, তবে কখনোই উত্তেজিত বা পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন না। তার লেখা ছিল পরিমিত, ভারসাম্যপূর্ণ এবং বিবেকনিষ্ঠ।
সিলেটের সংবাদ অঙ্গনে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তিনি ছিলেন এক জীবন্ত ইতিহাস। অনেকে বলেন, তিনি ছিলেন সাংবাদিকতার মাটি ও শেকড়—যেখানে পেশা মানে কেবল উপার্জন নয়, সেবা ও দায়িত্বও বটে।

তার মৃত্যুর পর সিলেট প্রেসক্লাবে নেমে আসে গভীর শোক। সহকর্মীরা জানান, “আজ প্রেসক্লাবে গেলেই মনে হয়, কিছু একটা নেই—যে মানুষটি সবসময় হাসিমুখে পাশে থাকতেন, সেই শামসুল ভাই আর নেই।”তার ব্যবহারে যে বিনয় ও সরলতা ছিল, তা আজও অনেকের কাছে অনুসরণীয়।

জেড এম শামসুলের ব্যক্তিজীবন ছিল নিরহংকার ও সৌখিন। তিনি বই ভালোবাসতেন, কবিতা পড়তেন, আর অবসরে নীরবে চিন্তা করতেন সমাজ নিয়ে। তার কাছে জীবন মানে ছিল সত্য ও আদর্শে বেঁচে থাকা। কোনো সময়েই তিনি লোভ-লালসা বা রাজনীতির ঘূর্ণিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেননি।

তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন পেশার প্রতি অটল। অসুস্থ অবস্থাতেও কলম থামাননি। কাজের প্রতি এমন ভালোবাসা আজকের প্রজন্মের কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তার অকাল প্রয়াণে সিলেটের সাংবাদিক সমাজ গভীর শোকাহত। সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা বলেছেন, “তিনি ছিলেন আমাদের অনুপ্রেরণা, সততার প্রতীক। তার মৃত্যুতে আমরা শুধু একজন সাংবাদিক নয়, একজন মানবিক মানুষকে হারিয়েছি।”

মরহুম জেড এম শামসুলের জন্য সবাই দোয়া করেছেন। লেখক ও সাংবাদিক মহল প্রার্থনা করছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা যেন এই প্রথিতযশা সাংবাদিককে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের আদর্শ জীবন দান করেন।

তার জীবন হোক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য এক আলোকবর্তিকা—যেখান থেকে তারা শিখবে, সাংবাদিকতা মানে শুধু খবর লেখা নয়, মানুষের জন্য বাঁচা। সিলেট প্রেসক্লাবের প্রাঙ্গণে আজও যেন ভেসে বেড়ায় তার হাসিমুখ, তার সাইকেলের ঘন্টার শব্দ, তার কোমল কণ্ঠের ডাক—“চলুন ভাই, চা খাই!”কিন্তু আজ সেই ডাক আর শোনা যায় না। তবু সিলেটের আকাশে, সাংবাদিকতার প্রতিটি পাতায়, তিনি বেঁচে আছে—চিরদিনের জন্য।আল্লাহ মরহুম জেড এম শামসুল ভাইকে বেহেশতের মর্যাদা দান করুন—আমীন।#!!!

সংবাদটি শেয়ার করুন


Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews

Follow for More!