ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি::

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) পদটি টানা নয় মাস ধরে শূন্য রয়েছে। এই দীর্ঘ সময় স্থায়ী কর্মকর্তা না থাকায় জনসেবা ব্যাহত হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা। উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প, বিশেষ করে কাবিটা, কাবিখা ও টিআর প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে গুরুতর প্রশাসনিক জটিলতা ও অনিয়মের অভিযোগ।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ছাতক উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কেএম মাহবুব রহমানকে ঘুষ ও অনিয়মের অভিযোগে বদলি করা হয়। তাঁর বদলির পর দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লুৎফর রহমানকে অতিরিক্ত দায়িত্বে ছাতকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে কেএম মাহবুব রহমানকে পুনরায় ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ জুন পর্যন্ত দায়িত্ব দেওয়া হলেও ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ফের বদলি করা হয় ভোলায়। এরপর থেকে আবারও অতিরিক্ত দায়িত্বে ছাতকের দায়িত্ব পালন করছেন দোয়ারাবাজার উপজেলার একই কর্মকর্তা লুৎফর রহমান। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, তিনি ছাতকে খুব কমই আসেন—গত ৪-৫ মাসে মাত্র ৪-৫ দিন অফিস করেছেন বলে জানা গেছে।
মূলত তিনি দোয়ারাবাজার থেকেই কাজ পরিচালনা করেন, যা সরকারি কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন—টিআর, কাবিখা ও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার প্রকল্পের বিল প্রদানে বিলম্ব, প্রকল্পের মাস্টার রোল অনুমোদন ও চেক স্বাক্ষরে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। উপজেলা অফিস সহকারীরা বাধ্য হচ্ছেন দোয়ারাবাজারে গিয়ে চেক ও কাগজপত্র স্বাক্ষর করিয়ে আনতে।
এতে শুধু প্রশাসনিক কার্যক্রমই নয়, সরকারি গোপন নথি ও চেক হারানোর ঝুঁকি বেড়ে গেছে।অফিস সূত্রে জানা গেছে, পিআইও অফিসে আউটসোর্সিং এ কর্মরত রুবেল মিয়া দোয়ারাবাজারে গিয়ে সরকারি কাগজপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে আনেন। এতে সরকারী গোপনীয়তা রক্ষায় মারাত্মক ঘাটতি তৈরি হচ্ছে এবং প্রকল্পের অর্থ ব্যবস্থাপনাও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
গত ৯ অক্টোবর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে অনুরোধ পাঠানো হয়। তবু মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পদটি পূরণ না হওয়ায় স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন—কেন এই বিলম্ব? সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ও সেবা নিশ্চিতে ছাতকে দ্রুত স্থায়ীভাবে একজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিয়োগ এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যথায় জনদুর্ভোগ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এব্যাপারে উপজেলার ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান এড. সুফি আলম সোহেল, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম, দোলারবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আলম, ও নোয়ারাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালিক
রাজাসহ জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন—“ছাতক উপজেলার আয়তন ও জনসংখ্যা সিলেট বিভাগের অন্যতম বৃহৎ। এখানে স্থায়ীভাবে একজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা না থাকায় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অনেক উন্নয়ন প্রকল্প সময়মতো শেষ করা যাচ্ছে না, বিল প্রদানে দেরি হচ্ছে, তদারকিও বিঘ্নিত হচ্ছে।”
তাঁরা আরও বলেন, প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন ও সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ছাতকে দ্রুত একজন স্থায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পদায়ন করা জরুরি।”
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম জানান,ছাতকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পদটি ৯ মাস ধরে শূন্য থাকায় কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত ৯ অক্টোবর সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই একজন স্থায়ী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে।”
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply