কমলগঞ্জ প্রতিনিধি ::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরী কার্যক্রম শুরু করেছে। ৪ পাতার তথ্য প্রদানে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্ম নিবন্ধন তথ্য নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তির শিকার শেষ নেই।
শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তথ্য ফরম সংগ্রহ করে ইউনিয়ন সেবা কেন্দ্রসহ রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোতে। আর অভিভাবকরা জন্ম নিবন্ধন তৈরীতে দৌড়াচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। অনলাইন জন্মনিবন্ধনে পিতা মাতার জন্মনিবন্ধন করার পর শিক্ষার্থীদের জন্মনিবন্ধন করতে হয়। এতে অনেক ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হয়। ফলে ভোগান্তির সাথে যোগ হয়েছে অর্থ ব্যয়ও। এ সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা রক্ত পরিক্ষা নির্ণয়ে নিচ্ছেন দেড়গুন বেশী টাকা।
জানা যায়, শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরীর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে তথ্য ফরমসহ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। ৪ পাতার তথ্য ফরমে শিক্ষার্থীদে ডিজিটাল নম্বরযুক্ত জন্ম নিবন্ধন ফরম, বাবা মার ডিজিটাল নম্বরসহ জাতীয় পরিচয় পত্র ও ইউনিয়নের ডিজিটাল নম্বরসহ জন্ম নিবন্ধন ফরম আনতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করেও তথ্য প্রদান করতে হচ্ছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুন নাহার পারভীন বলেন, শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষার্থীদের সঠিক তথ্য গ্রহনে ইউনিক আইডির ভেতরে আনতে কার্যক্রম চালু করেছে। তথ্য ফরমে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে অবশ্যই তথ্য প্রদান করতে হবে। চার পৃষ্টার সম্পূর্ণ তথ্য প্রদান অনেকটা দুরহ ব্যাপার জেনেও শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয়ভাবে তার করার কিছু নেই। শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়টি বিবেচনা করে অচিরেই সিদ্ধান্ত জানাতে পারে।
শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জন্ম নিবন্ধন ফরম থাকলেও অধিকাংশ অভিভাবকের জন্ম নিবন্ধন কার্ড নেই। আবার অনেক অভিভাবকের জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল নয়, পুরাতন কার্ডে লেখা জন্ম নিবন্ধন কার্ড। এ তথ্য পূরণকালে অভিভাবকদের নতুন করে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন কার্ড নিতে হচ্ছে। এতে সমস্যা দেখা দিয়েছে জন্ম নিবন্ধন কার্ডের নতুন নিয়ম কানুন। নতুন করে পিতা মাতার জন্মনিবন্ধন করতে হলে শিক্ষার্থীদের দাদা-দাদী ও নানা-নানীর জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে, মৃত হলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মৃত্যসনদ সংগ্রহ করার পর জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে। পিতা মাতার জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের অনলাইন জন্মনিবন্ধনের আবেদন করতে হবে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এদিকে মাধবপুর ইউনিয়ন এর টিলাাগাঁও গ্রাম থেকে আসা অন্তরা হক অভিযোগ করে বলেন, আমি কিছুদিন পূর্বে আমার তিন ছেলে মেয়ের জন্মনিবন্ধন কার্ড সংগ্রহ করতে ৬ শত টাকা খরচ হয়েছে। এখন শুনি জন্মনিবন্ধন কার্ডগুলি অনলাইন হয়নি, তাই আবার নতুন করে আমাকে প্রতিটি কার্ডের জন্য পুনরায় অর্থ খরচ করে নিতে হচ্ছে। আমার একটি জন্ম নিবন্ধন কার্ড এর পিছনে সাড়ে তিনশত টাকা খরচ হচ্ছে, আমরা গরীব মানুষ এত টাকা পাবো কোথায়। করোনাকালীন সময়ে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই না করে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র এবং ডায়াগনিস্ট সেন্টারে ভিড় করছেন।
আলাপকালে নুরুল মোহামীন, আলমগীর হোসেন, মরহম আলি, সামসু মিয়া, তামান্না ইসলাম, চম্পা রানী নাথ, কাজলি সিনহা বলেন, অভিভাবকরা নতুন করে জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে তাদের বাবা- মার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য উপস্থাপন করতে হয়। এদের অধিকাংশ এখন মৃত। বেশির ভাগই জন্ম নিবন্ধন কার্ড করেননি। তাই ইউনিয়ন ও পৌরসভায় গিয়ে নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে পারছেন না। আবার ইউনিয়ন ও পৌরসভায় জন্ম নিবন্ধন কার্ড করতে গেলে দিতে হচ্ছে কিছু ফি ও তার সাথে অনেক স্থানে যুক্ত হচ্ছে বাসা বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স। করোনা সংক্রমণকালে অভাব অনটনের মাঝে তারা হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে পারছেন না। তাছাড়া ডায়গনস্টিক সেন্টারে গিয়ে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে জনপ্রতি দিতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে।
কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ বলেন, অনেক অভিভাবক জন্ম নিবন্ধন কার্ড করেননি। এখন প্রয়োজনে জন্ম নিবন্ধন কার্ড করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদের বাবা মা মৃত হলে মৃত্যু সনদ প্রদান করা হবে। আর যারা দরিদ্র তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানে বিবেচনার দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো, খোরশেদ আলী শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি কার্যক্রমের তথ্য প্রদানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করেন। এ নিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। সমাধান আসবে বলেও তিনি মনে করেন।
এদিকে ইউনিক আইডি করতে আসা অভিভাবকরা বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান দু’দিনের ভিতরে ইউনিক কার্ড কমপ্লিট করতে হবে। বোর্ডের এরকম হটকারি সিদ্ধান্তে আমাদেরকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কখন ইউনিক আইডি কার্ড সম্পন্ন হবে। #
Leave a Reply