ওসমানীনগর প্রতিনিধি ::
সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনে নির্বাচিত এমপি গণফোরাম নেতা মোকাব্বির খানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছে ওসমানীনগর আওয়ামী লীগ। অভিযোগ তুলেছে সরকারী অর্থ লুটপাট, স্বাধীনতাবিরোধীদের সাথে আঁতাত, জামায়াত-শিবির অনুসারীদের পূনর্বাসন ছাড়াও নানা অনিয়মের। এসব অনিয়মের অভিযোগ করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য রাখেন এমপি মোকাব্বির।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে নানা অভিযোগ তুলে ধরা ছাড়াও আপত্তিকর বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলেন, আপত্তিকর বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্ষমা না চাইলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আ’লীগ নেতাদের দাবি, মোকাব্বির এমপির এমপি মোকাব্বিরের জামায়াত শিবির প্রেম এলাকায় বেশ আলোচিত।
তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলার চিহ্নিত রাজাকারদের উত্তরসূরিদের নিয়ে জোট বাধেঁন। এপিএস নিযুক্ত করেন ছাত্রদলের এক নেতাকে। আর হাটে ঘাটে প্রচার করে চলেছেন অতীতে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ করেছেন বলে।
আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে তার নিকটজন রয়েছেন এমন প্রচারণার মাধ্যমে বিভ্রান্ত করছেন প্রশাসনে থাকা লোকজনদের। সরকারী অর্থ লুটসহ নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন বেপরোয়াভাবে। ওসমানীনগর উপজেলার ৮ ইউনিয়নের জন্য আসা এমপি মোকাব্বিরের সরকারী বরাদ্ধ নিয়ামনীতির তোয়াক্কা না করে লুটেপুটে খেয়েছেন। জোটবদ্ধ হয়ে এই লুটপাট করেছেন এমপির এপিএস কয়েছ মিয়া, বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাজাকারপুত্র বহিস্কৃত বিএনপি নেতা আব্দাল মিয়া ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান এমরান রব্বানী। তারা ৩টি ইউনিয়ন বাদ দিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুরো টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের পাঁয়তারা করছেন।
এমন লুটপাটের কারণে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন তাদের শরিক দলের এমপি মোকাব্বিরকে ইতিমধ্যে অবাঞ্চিত, আব্দাল মিয়াকে বহিস্কার ও এমরান রব্বানীকে বিএনপি দলীয় হাই কমান্ড থেকে শোকজ নোটিশ করেছে। এদিকে, ইউনিয়ন ভিত্তিক বরাদ্ধ এমপির এপিএস কয়েছ তার নিজস্ব লোকজন দিয়ে প্রকল্প বানিয়ে আতœসাৎ করেছেন। অখচ চেয়ারম্যান মেম্বারগণকে জানানোই হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ মে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে না জানিয়েই পিআইওকে নিয়ে ঢেউটিন বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন মোকাব্বির। এছাড়াও ওসমানীনগরসহ সিলেটে ১০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যে জায়গা নির্ধারণের জন্য পত্র আসে। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন ইউএনও তাহমিনা আক্তার। উপজেলা সদরে টেকনিক্যাল কলেজ হচ্ছে বিষয়টি জানতে পেরে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বড় অংকের টাকা ইনকামের মিশনে নামেন এমপি মোকাব্বিরের ব্যক্তিগত সহকারী কয়েছ মিয়ার চক্র। তিনি বড় অংকের প্রলোভন দেখিয়ে ট্যকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ স্থাপনের জন্য জায়গা খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে গোলাম কিবরিয়া নামে একজনের সাথে অদৃশ্য চুক্তি হয়। এই চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরবর্তীস্থানে গোচারণ ভূমিতে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের দাবি তোলা হয়। এমপি মোকাব্বিরের জনসভা ও সংবর্ধনার আয়োজন করেন এপিএস কয়েছের অনুসারীদের দিয়ে।
এতেই শেষ নয়, তাজপুর ও গোয়ালাবাজার ইউনিয়নে নিজের লোকদের নিয়োগ দিতে তাজপুরের সাবরেজিষ্টার মো: ইউনুছকে দাঁত ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দেন। এরপর প্রশাসনকে জিম্মি করে স্থানীয় শিবির কর্মী মোমিনকে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের কাজি ও উপজেলার আলহাজ¦ মিনা বেগম দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভীকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাজপুর ইউনিয়নের কাজি নিয়োগের ব্যবস্থা করে দেন মোকাব্বির । এনিয়ে এমপি মোক্কাব্বির খানসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এমপির অনুসারী রাজাকার পুত্র আব্দাল মিয়া বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালিন সময়ে পরিষদের উদ্বৃত্ত থাকা ৫৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে বড়ভাগা নদীতে সেতু প্রকল্পের কাজ উদ্ধোধন করেন। অর্ধকোটি টাকা নিজের পকেটস্থসহ করতে সেতুটির নামকরন করেন শেখ হাসিনা সেতু। উপজেলার আরেক রাজাকারপুত্র তারই সহকর্মী এমরান রব্বানী, সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা ও হেফাজত নেতা নুর উদ্দিন আহমদ নুন এমপি মুকাব্বির সিন্ডিকেটের সদস্য। উপজেলায় নানা ভূয়া প্রকল্প বানিয়ে টিআর, কাবিটা ও কাবিখাসহ উন্নয়ন বরাদ্ধগুলো লুটপাট করে খাচ্ছেন তারাই। গত দুই বছরে এমপির পিএস কয়েছ ৭টি যানবাহনের মালিক হয়েছেন। এছাড়া মুজিব শতবর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় তাজপুর সুলতানপুর প্রকল্পের মাটি ভরাটের ৮ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা আতœসাৎ করে নিয়েছেন প্রকল্পের সভাপতির দ্বায়িত্বে থাকা তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইমরান রব্বানী।
এ ব্যাপারে সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। দুর্নীতির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। ওসমানীনগরের জনগণই আমার সাক্ষী। আর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভূমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই আমাকে নিয়ে দেখিয়েছেন।’#
Leave a Reply