আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর ::
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এ করোনার সুযোগে রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) নামের একটি কথিত বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কর্মকর্তারা গ্রাহকদের প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন প্রায় ২’শ গ্রাহক। গতকাল রাতে টাকা ফেরত ও প্রতারককে আটক করে শাস্তির দাবি জানিয়ে-উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট মারুফ বিন জাকারিয়ার কার্যালয়ে ক্ষতিগ্রাহকরা অভিযোগ করে কান্নাকাটি করেন। পরে উপায় না পেয়ে রাতেই থানার ওসির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিক নামের সংস্থাটি রায়পুর শহরের রায়পুর-চাঁদপুর সড়কের সিএনজি স্ট্যান্ড সংলগ্নে বয়াতির বাড়ী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ চৌধুরির ভবনের ঠিকানা দিয়ে উপজেলায় কার্যক্রম শুরু করে। নোয়াখালির সুবর্নচরের চর মজিদ গ্রামের আনোয়ার মাঝির ছেলে ভুয়া এনজিও মালিক আব্দুল আজিজ এলাকায় ঋণ দেওয়ার কথা বলে বাড়ী ভাড়া নেন। কর্তৃপক্ষ এলাকার পাঁচজনকে মাঠপর্যায়ের কাজের জন্য নিয়োগ দেয়।
রায়পুর পৌরসভার মধুপুর, কাঞ্চনপুর, দেনায়েতপুর উপজেলার রাখালিয়া, কেরোয়া, বামনী,চরবংশী, চরআবাবিল,চরপাতাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে দোকান,প্রবাসী ঋণ, বিভিন্ন যন্ত্র ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিনতে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়।
এ জন্য এলাকায় প্রায় ৩০০ জনকে সদস্য করা হয়। ঋণ গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিদের এক লাখ টাকার জন্য ১০ হাজার, দুই লাখ টাকার জন্য ২০ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়। কয়েক দিন আগে দু-তিনজন সদস্যকে ঋণ দেওয়া হয়। অবশিষ্ট সদস্যদের সোমবার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। প্রায় শতাধিক গ্রাহক সোমবার দুপুরে সংস্থাটির কার্যালয়ে ভিড় করেন। কিন্তু তাঁরা দেখেন কার্যালয়টি তালাবদ্ধ।
পৌরসভার দেনায়েতপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী হাজেরা বেগম শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজ করতে পারেন না। তার স্বামী-অটোরিকশা কেনাবেচা করেন। ওই সংস্থা থেকে রোববার তাঁকে দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। সংস্থাটিতে সঞ্চয় হিসাবে তিনি ২০ হাজার টাকা জমা দেন।
প্রতারণার শিকার রাখালিয়া গ্রামের জাহাঙ্গির বলেন, ‘৪ লাখ লাখ টাকা ঋণ নিতে ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়েছি। ঋণ নিতে এসে দেখি কর্মকর্তারা পালিয়ে গেছে।’একই অভিযোগ করেছেন জুয়েল,ফারুখ,আব্দুল আউয়াল,সোহেল রানা, হাজেরা বেগম,স্বপ্না,মাকছুদা ও আমেনা।
স্থানীয়ভাবে নিয়োগ পাওয়া মাঠকর্মী কহিনুর বেগম বলেন, ‘ছয় হাজার টাকা মাসিক বেতনে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে এখানে যোগ দিয়েছি। আজ গ্রাহকদের কয়েক লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কাউকে কিছু না বলেই প্রায় ৫০ লাখ টাকা নিয়ে আব্দুল আজিজ পালিয়ে গেছে। লোকজনের ভয়ে এখন আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফ হোসেন বলেন, রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) নামে কোনো সংস্থা সমাজসেবা থেকে অনুমোদন নেয়নি।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা শিশির কান্তি বলেন, রিক নামে কোনো সমবায়ের সঙ্গে জড়িত নয়। এটি এনজিও। এটি সমবায় অধিদপ্তরে কাজ নেই। এই করোনার সময়ে গরিব মানুষের টাকাগুলো নিয়ে যাওয়া অত্যান্ত দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে যোগাযোগের চেষ্টা করেও আব্দুল আজিজ ও তাঁর স্ত্রীর মুঠোফোন (০১৭৪৯৬৫২৬৪৩) বন্ধ পাওয়া যায়। তবে নীজের ভূয়া এনজিও খোলার আগের চাকুরির স্থল আরেকটি-এনজিও ‘সাগরিকার’ ম্যানেজার মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, আব্দুল আজিজ খারাপ স্বভাবের মানুষ। সে আমাদের এনজিওর লোকদের সাথেও প্রতারনা করেছিলো। পরে তাকে বরখাস্থ করা হয়েছিলো।
রায়পুর থানার ওসি আব্দুল জলিল জানান, রিক নামের একটি এনজিওর মালিক প্রতারণা করে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনায় কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।#
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply