প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ::
৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সারাদেশের ১৬৭টি চা বাগানে ৮ম দিনের মতো শনিবার (২০ আগস্ট) বিকাল ৩ ঘটিকা পর্যন্ত চা শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করেন।
তাদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে ইতিপূর্বে শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম দপ্তর ও ঢাকায় দু’দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় মজুরি বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়া হলেও চা শ্রমিকরা তা প্রত্যাখান করেন।
অবশেষে ৩য় দফায় চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে শনিবার বিকালে শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম দপ্তরে চা শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার পক্ষের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ২৫ টাকা বাড়িয়ে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারিত হয়। এরপর ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল এ ঘোষণা দেন।
এর কিছু পরেই বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলই ভ্যালী কমিটির সভাপতি ধনা বাউরী, চা ছাত্র যুবনেতা মোহন রবিদাসের নেতৃত্বে শ্রমিকদের একটি পক্ষ এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ধনা বাউরী ও মোহন রবিদাস বলেন, সভা শুরুর পূর্ব থেকেই পুলিশ তাদের ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। মোহন রবিদাস বলেন, পরে তাদের চাপের মুখে ফেলে ও পুলিশ আমার উপর টর্চার করেছে। চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পালকে দিয়ে ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন। আমরা এই সিদ্ধান্ত মানবো না। ৩০০ টাকা মজুরি নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু ধলই ভ্যালী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আমাদের দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা মেনে নিতে এবং ধর্মঘট স্থগিত করতে।
সেই প্রেক্ষিতে আপাতত ১৪৫ টাকা মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল এ ঘোষণা দেন। তবে আমাদের একটি পক্ষ এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না বলে তিনি জানান।
বিভাগীয় শ্রম দপ্তর কার্যালয়ে বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদসহ মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি এবং চা শ্রমিকদের পক্ষে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিকাল ৩টা পর্যন্ত টানা ৮ম দিনের মতো ৩০০ টাকা মজুরিসহ বিভিন্ন দাবিতে চা শ্রমিকরা ধর্মঘট করেন।
সভা শুরুর পূর্বে তৃতীয় দফায় আজকের বৈঠকে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সমঝোতার আশাবাদ ব্যক্ত করে শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম। তিনি মোবাইল ফোনে জানান, চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন নিয়ে সর্ব্বোচ্চ পর্যায়েও কথা চলছে। তবে আজ শ্রীমঙ্গলস্থ শ্রম দপ্তরে চা শ্রমিক প্রতিনিধিদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এদিকে গত ৮দিন যাবত চা বাগান সমুহে প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে ও সেকশনে গজানো হাজার হাজার কেজি কাঁচা চা বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ক্ষতি গুনতে হচ্ছে বলে চা বাগান ম্যানেজমেন্টের পক্ষে অভিযোগ উঠেছে।
অপরদিকে গত ৮ দিন যাবত কোন ধরণের মজুরি না পেয়ে চা বাগান শ্রমিকরাও মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে চা শ্রমিকরা দাবি করেছেন।
সীতারাম বীন, দয়াশংকরসহ কয়েকজন চা শ্রমিক নেতা বলেন, পরিবারে শিশু সন্তান নিয়ে চা শ্রমিক পরিবার সদস্যরা নিদারুন কষ্ট ভোগ করছেন। শ্রমিকরাও চা বাগানের ক্ষতি হোক তা চায় না। তবে বর্তমানে জিনিসপত্রের যে পরিমাণ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে স্বল্প এই মজুরিতে এক লিটার সোয়াবিন তেলও কেনা যাবে না।
ন্যাশনাল টি কোম্পানীর পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক শামসুল ইসলাম বলেন, চায়ের ভর মৌসুমে শ্রমিকদের আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব পড়বে। আমার বাগানের সেকশনে যেসব পাতা বড় হয়েছে সেগুলোর কোয়ালিটি বিনষ্ট হয়ে গেছে। এখন সেগুলো কেটে ফেলা ছাড়া কোন উপায় নেই। তাছাড়া দৈনিক মজুরির সাথে চা শ্রমিকরা রেশন, চিকিৎসা, গৃহ সুবিধাসহ আরও নানা ধরণের সুবিধা ভোগ করছেন। সেসব বিষয়গুলোও আলোচনায় উঠে আসা উচিত বলে তিনি দাবি করেন।
চা শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হলে কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর. শমশেরনগর, মৃর্ত্তিঙ্গা চা বাগানসহ বিভিন্ন চা বাগানে মজুরি প্রত্যাহার করে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে রোববার থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবার আহবান জানান।
এর আগে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চা-শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়। এদিন বেলা তিনটায় চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে শ্রম অধিদপ্তর। এই বৈঠক শেষে নিপেন পাল অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবদুস শহীদসহ মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি এবং চা-শ্রমিকদের পক্ষে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করে আসছিল বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। গত আট দিনে সরকার ও মালিকপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকে বসেও মজুরি নিয়ে কোনো সমাধান না হওয়ায় শ্রমিকেরা নিজ নিজ এলাকায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল করে যাচ্ছিলেন চা-শ্রমিকরা।
এরই প্রেক্ষিতে দাবি আদায়ে অষ্টম দিনের মতো ধর্মঘট করছিলেন দেশের সব চা-বাগানের শ্রমিকরা। ধর্মঘটের অষ্টম দিন আবারও চা-শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সরকার।
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply