জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা কমলগঞ্জের চা শ্রমিক মা কমলি রবিদাস – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বড়লেখায় বিয়ে বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা চুরি : ঘটক গ্রেফতার জুড়ীতে বিজিবির অভিযানে কোটি টাকার অবৈধ জিরার চালান জব্দ, গ্রেফতার ১ জুড়ীতে ছাত্র শিবিরের ম্যারাথন দৌড় অনুষ্ঠিত- কুলাউড়ার অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়ে মহান বিজয় দিবস পালিত কুলাউড়ায় নিঃস্ব সহায়ক সংস্থার উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ কুড়িগ্রামে বিজয় দিবসে জামায়াতের বর্ণাঢ্য র‍্যালি মেডিকেলে সুযোগ না পেয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে কুড়িগ্রামের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা কমলগঞ্জে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত যুক্তরাজ্য ওল্ডহাম স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শেখ রায়হানের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার কুলাউড়ায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালিত

জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা কমলগঞ্জের চা শ্রমিক মা কমলি রবিদাস

  • শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০২৪

Manual4 Ad Code

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নানা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচজন জয়িতাকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে শুক্রবার। এবার সেই জাতীয় পর্যায়ে ‘সফল জননী’ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মাননা পেয়েছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কানিহাটি চা বাগানের চা-শ্রমিক মা কমলি রবিদাস। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘আলোচনাসভা ও জয়িতা সম্মাননা প্রদান’ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে এক লাখ টাকার চেক, ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও সনদ গ্রহণ করেন চা-শ্রমিক মা কমলি রবিদাস। এর আগে তিনি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মাননা পেয়েছেন। এবার জাতীয় জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার পেলেন।

সম্মাননা গ্রহণ করে ভীষণ আনন্দিত কমলি রবিদাস বলেন, জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। হামার খুব আনন্দ লাগছে। এবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করায় এখন হামার কষ্ট দুর হয়েছে।

Manual1 Ad Code

এদিকে সংগ্রামী মায়ের উদ্যমী ছেলে সন্তোষ রবিদাস বলেন, মায়ের এমন অর্জনে আমি ভীষন আনন্দিত। ‘মা সারাজীবন কষ্ট করেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পুরস্কৃত করলেন। আমার জন্য এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে?

কমলগঞ্জ উপজেলার ৪নং শমশেরনগর ইউনিয়নের কানিহাটি চা-বাগানের এক শ্রমিক পরিবারে জন্ম সন্তোষ রবিদাসের। জন্মের পরপরই বাবাকে হারিয়েছিলেন। তার মা কমলি রবিদাস তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা। চরম অভাবের মধ্যে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করেছেন সন্তোষ। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছেলের ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন মা। ঋণের কিস্তি শোধের জন্য চা-বাগানের কাজ ছাড়াও অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। অভাবের সংসারে নিজে খেয়ে না খেয়ে ছেলেকে খাইয়েছেন। এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে পড়ার সুযোগ পান সন্তোষ রবিদাস।

মা-ছেলের এই সংগ্রামের কাহিনী নিয়ে ২০২২ সালে ‘মায়ের নামটা কেটে দিল’ এমন শিরোনামে একটি ঘটনার বিস্তারিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেন তিনি। সেই সুত্র ধরে অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান সন্তোষ রবিদাসকে চাকরির প্রস্তাব দিয়েছিল। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর। মায়ের হাতে টাকা নেই। তখন এইচএসসির রেজিস্ট্রেশন চলছিল। মা ৫০ টাকার একটা নোট দিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেছিলেন, ‘কেউ ধার দেয়নি রে বাপ!’ কলেজের এক শিক্ষকের কাছ থেকে ধার নিয়ে সেবার রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়েছিলাম। এইচএসসির পর ভর্তি পরীক্ষার কোচিং। মা তখন আবার লোন নিলেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে। লোনের কিস্তির জন্য এই সময় মা বাড়ি থেকে অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বিনিময়ে পেতেন ৩০০ টাকা। আমি জানতাম ঘরে চাল নেই। শুধু আলু খেয়েই অনেক বেলা কাটিয়েছেন মা।

Manual6 Ad Code

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলাম। মা তখন কী যে খুশি হয়েছিলেন! কিন্তু ভর্তির সময় যত ঘনিয়ে আসছিল, মায়ের মুখটা তত মলিন দেখাচ্ছিল। কারণ চা-বাগানে কাজ করে যা পান তা দিয়ে তো সংসারই চলে না। ভর্তির টাকা দেবেন কোথা থেকে? পরে এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহায়তা করল। বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশনি করেই চলতাম। হলের ক্যান্টিনে ২০ টাকার সবজি-ভাত খেয়েই দিন পার করেছি। অনেক দিন সকালে টাকার অভাবে নাস্তাও করতে পারিনি। দুর্গাপূজায় কখনো একটা নতুন জামা কিনতে পারিনি। লিখেছেন রবিদাস।

রবিদাসের সেই দুর্দিন ফুরিয়েছে। তিনি বলেন, আজকের এই পর্যায়ে আসার মূল কৃতিত্বের দাবিদার আমার মা। এ ছাড়া আরো আছেন আমার শিক্ষক, সহপাঠী, ভাইবোন ও শুভকাংখীরা।

Manual2 Ad Code

চা শ্রমিক অন্য মায়েরা কেমন আছেন? জানতে চাইলে সন্তোষ রবিদাস বলেন, এখন চা শ্রমিকদের জীবনমান আগের মতোই বিরাজমান। জন্ম থেকেই আমরা পিছিয়ে পড়া সংগ্রামী জাতি। আমাদের আন্দোলনের ফলে যে মজুরি বেড়েছে তা আজকের নিত্যপণ্যের বাজারে গেলে হতাশার। কারণ ১৭০ টাকা মজুরি দিয়ে একটা সংসার চলে না। চা শ্রমিকদের সন্তানদের সঠিক শিক্ষাদান, প্রযুক্তিগত শিক্ষাপ্রদান, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রয়োজন উপবৃত্তি। আশাকরি আমাদের এসব সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দেশের বিভিন্ন দাতা সংস্থা এগিয়ে আসবে।

মায়ের সেই অপেক্ষার শেষ হয়েছে। সন্তোষ রবিদাস এখন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সিলেট লালদীঘির পাড় শাখায় রিলেশনশিপ অফিসার হিসেবে কর্মরত। এবার কিন্তু মায়ের নামটা কাটা পড়েনি। মা চা-শ্রমিক কমলি রবিদাস ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২৪’ দিবসে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ সম্মাননা গ্রহণ করেছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়নাল আবেদীন বলেন, কানিহাটি চা বাগানের কমলি রবিদাস একজন সংগ্রামী নারী। তার এই পুরস্কারে উপজেলাবাসী গর্ববোধ করছে।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পাঁচ জয়িতাকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন। সম্মাননা পেয়েছেন ময়মনসিংহের আনার কলি, রাজশাহীর কল্যাণী মিনজি, সিলেটের কমলি রবিদাস, বরগুনার জাহানারা বেগম ও খুলনার পাখি দত্ত হিজড়া।#

Manual7 Ad Code

সংবাদটি শেয়ার করুন


Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews

Follow for More!