
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি::
উত্তর জনপদের মৎস্য ও শষ্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা। এক সময় গ্রাম-বাংলার প্রতিটি মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিল এই খেলাটি। খেলার শুরুতে ঢাক ও ঢোলের তালে বিভিন্ন ভঙ্গিতে খেলোয়াড়রা দৌড়ে একে অপরের সাথে লাঠি খেলার যুদ্ধে নামতেন। শত শত দর্শক সেই খেলা উপভোগ করতেন। দর্শকরা হাতে তালি ও বিভিন্ন আওয়াজে উৎসাহী করতেন লাঠি খেলোয়াড়দের।
দেখা যেত প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় খেলোয়াড়দের দলনেতার উদ্যোগে গড়ে উঠত এক একটি লাঠি খেলার দল। আর পাড়ায়-পাড়ায়, গ্রামের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতো এই খেলা। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হতো কোন গ্রামের কোন মাঠে বা কার বাড়ির উঠানে কোন সময় এই খেলা অনুষ্ঠিত হবে। নিজেদের নিত্যদিনের কাজ দ্রুত সমাপ্ত করে গ্রামের নারী-পুরুষেরা ছুটে যেত খেলা দেখার জন্য। বাড়ির আঙিনায় এই খেলা দেখার জন্য ঘরের চালে, গাছের ডালে ভীড় জমাতো যুবকরা আর বেড়ার ফাঁকে, জানালা খুলে খেলা দেখত মা-বোনেরা। আর সে দিনের সেই কাঠের টুল ও পিঁড়িতে বসে খেলা দেখত বৃদ্ধরা। দর্শকদের হাতে তালি আর মুখের জয়ধ্বনি খেলোয়াড়দের আনন্দ জোগাত। কিন্তু কালের আবর্তে আজ লাঠি খেলার সেই বিনোদন ভুলতে বসেছে দেশের বর্তমান প্রজন্ম।
বর্তমানে এখন আর নতুন করে লাঠি খেলার কোনো সংগঠন বা দল তৈরি হচ্ছে না। কালের আবর্তে সেই লাঠি খেলার স্থান আজ দখল করে নিয়েছে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, ব্যাটমিন্টন। তাছাড়াও অতীতের খেলার পরিবর্তে মোবাইলে চলছে পাবজি, ফ্রি-ফায়ারসহ বিভিন্ন ধরনের খেলা। যেখানে ধনাঢ্য পরিবারের সদস্যরা স্থান পেলেও গ্রামবাংলা দরিদ্র পরিবারের লোকেরা আধুনিক যুগের খেলা দেখার জন্য ছুটে যায় প্রতিবেশীদের ঘরের টিভির কাছে, কিন্তু শত বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে গ্রামবাংলায় আজও দুয়েকটি জায়গায় চলে অতীতের সেই লাঠি খেলা। খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঢোল আর লাঠির তালে তালে নাচ। অন্যদিকে প্রতিপক্ষে লাঠির আঘাত হতে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টায় টান টান উত্তেজনায় বিরাজ করত খেলোয়াড় ও দর্শকদের মাঝে।
উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের লাঠি খেলোয়াড় মোনাম সরদার জানান, এই খেলার জন্য লাঠি সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা হয়। তবে প্রতিটি লাঠি হয় প্রায় তৈলাক্ত। প্রত্যেক খেলোয়াড় তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করেন। খেলার স্থানে লাঠির পাশাপাশি যন্ত্র হিসেবে ঢোল, কনেট, ঝুনঝুনি ও বিভিন্ন প্রকার বাঁশি ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়াও সঙ্গীতের পাশাপাশি এ খেলার সঙ্গে চুড়ি নৃত্যও দেখানো হতো।
আনোয়ার হোসেন বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা আজ বিলুপ্তপ্রায়। আমাদের অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের লাঠি খেলা রয়েছে। আগে দেখতাম, গ্রামের সাধারণ মানুষরা বাংলা বর্ষবরণ, বিবাহ, চড়কপূজা, সুন্নতে খৎনা উপলক্ষ্যে এ লাঠি খেলার আয়োজন করত। বাপ-দাদার সেই স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই আমি লাঠি খেলার আয়োজন করেছি।
বজ্রপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ লাঠি খেলোয়াড় মুজিব উদ্দিন অতীতের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আগের খেলা এখন আর নেই।
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply