নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) ::
মোগল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি নওগাঁর আত্রাইয়ের তিন গুম্বজ ও মঠ আজ বিলুপ্তির দ্বার প্রান্তে। পুরোনো এ মসজিদ ও মঠের স্থাপত্যরীতিতে মোগল ভাবধারার ছাপ সুস্পষ্ট। সৃষ্টি আর ধ্বংসে এগিয়ে চলছে পৃথিবী। কেউ সৃষ্টিতে আবার কেউ ধ্বংসের খেলায় মত্ত; আবার কারোর দায়িত্ব হীনতায় কালের গহব্বরে সমাহিত হচ্ছে ঐতিহাসিক অতীত। বর্তমান যেমন গুরুত্ববহ সোনালী অতীতও তেমনি অনুপ্রেরণা যোগায়।
আমরা বাঙালী, আমাদের রয়েছে ঐতিহাসিক অতীত। বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্ন। এসব ছড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজরিত স্থানসমূহ আমাদের স্বত্তাতে আলোড়ন জাগায়। তেমনি আলোড়ন জাগানো ঐতিহাসিক অতীত বহুল স্থান নওগাঁ জেলাধীন আত্রাই উপজেলার ইসলামগাঁথী গ্রামে অবস্থিত তিন গুম্বুজ মসজিদ ও মঠ।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পূর্বদিকে ঐতিহাসিক গুড়নদীর তীরে গ্রামটি অবস্থিত। ৫ নং বিশা ইউনিয়নের জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটি বড় গ্রাম এটি। এ গ্রামে রয়েছে শত শত বছর পূর্বের স্থাপনা কারুকার্য্য খচিত তিন গুম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ ও তৎসংলগ্ন একটি মঠ। আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মোঘল সম্্রাটের শাসনামলে নির্মিত এ কীর্তি। জনশ্রুতি রয়েছে রাতারাতি নাকি হঠাৎ করে গড়ে উঠে এ মসজিদ ও মঠ। তবে এ প্রজন্মে অনেকে তা বিশ্বাস করতে রাজি না।
জানা যায়, ওই গ্রাম এক সময় নিভৃত পল্লীর একটি জনবসতি ছিল। এক সময় নৌকার বিকল্প কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। সে সময় আজ থেকে কয়েক শ’ বছর আগে গড়ে উঠে এখানে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ। মসজিদ সংলগ্ন প্রায় ৪০ ফুট উুঁচু চার স্তরের একটি মঠও নির্মাণ করা হয়। মঠটিতে ক্ষোদাই করে অঙ্কন করা হয় বিভিন্ন প্রাণীর ছবি। এক সময় এ মঠ এলাকাবাসীর কল্যাণের জন্য বিশ^কর্মার পক্ষ থেকে নির্মাণ করা হয়েছে ধারণা করে তাতে বিভিন্ন ধরণের মান্নত মানা হতো। প্রতি বছর মহরম মাসের ১০ তারিখে অর্থাৎ আশুরার দিনে দূর-দূরান্ত থেকে কাশিদরা এসে এখানে আর্চনা করত। যুগের পরিবর্তনে এসব কু-প্রথা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন আর সারা বছরেও দেখা মিলেনা কোন মান্নত সামগ্রীর বা কাশিদ দলের।
এদিকে এ মসজিদ ও মঠ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা এলাকার কেউই সঠিকভাবে বলতে পারেন না। শত শত বছর থেকে এটি রয়েছে তাঁরা শুধু এতটুকুই বলতে পারেন। ওই গ্রামের ৭০ উর্ধ বয়সের মো. আব্দুস ছাত্তার বলেন, আমরাতো দূরের কথা আমাদের বাপ-দাদারাও বলতে পারেননি এটি কত সনে স্থাপিত হয়েছে। ওই গ্রামের অধিবাসী আত্রাই কলকাকলী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদুর রহমান বলেন, আমার দাদা ১৯৮০ সালে ১০৩ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনিও বলতে পারেননি এ মসজিদ ও মঠ কোন যুগে স্থাপিত হয়েছে।
ইতিহাস পর্যালোচনায় যতদূর জানা যায়, ১৫৭৬ খ্রীষ্টাব্দে মোঘল শাসনামলে ইসলাম খাঁ নামের কোন এক ব্যক্তি এ এলাকার শাসনকার্যে নিয়োজিত ছিলেন। ইসলামগাঁথী, ইসলামপুরসহ এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি গ্রাম তাঁর নামানুসারেই করা হয়েছে। ধারণা করা হয় তাঁর আমলেই এ মসজিদ ও মঠটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এসএ ও আরএস খতিয়ান মূলে ৬ শতক জমির উপর কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এ দু’টি স্থাপনা। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মঠটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলতে বসেছে। ইতোমধ্যেই মঠের ক্ষোদাইকৃত অনেক প্রাণীর ছবি মুছে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়াও মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য এটি ভেঙ্গে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন মহল্লার একটি পক্ষ। আরেক পক্ষ মঠ না ভেঙ্গে তা দর্শনীয় হিসেবে রেখে দিয়ে মসজিদ স্থানান্তর করার পক্ষে।
এদিকে এ মঠ বা মসজিদ না ভেঙ্গে এ ঐতিহাসিক স্থাপনাটির সংস্কার করা হলে এই এ স্থাপনাটি ঘিরে গড়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই ঐতিহাসিক নির্দশন, বাংলা গৌরব উজ্জ¦ল ইতিহাসের সাক্ষী ঐতিহাসিক আত্রাইয়ের তিন গুম্বুজ মসজিদ ও মঠ সংস্কারে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনেকরছেন উপজেলার সচেতন মহল। #
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply