এইবেলা ডেস্ক ::
প্রচলিত অন্য আইনগুলোর তুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখন অপেক্ষাকৃত বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এর কারণ হলো এই আইনের আওতায় পুলিশ পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে এবং এই আইনের কিছু ধারা অজামিনযোগ্য। এখন পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাইবার অপরাধীদের চেয়ে সাংবাদিক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীরাই বেশি গ্রেফতার হয়েছেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্যই হলো সেখানে মত প্রকাশের অধিকার থাকবে এবং স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশের অধিকারও সুনিশ্চিত থাকবে।
স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে না পারলে একসময় সরকারও বুঝতে পারবে না তাদের ভুলগুলো কোথায় এবং কীভাবে নিজেদের সংশোধন করতে হবে। পাশাপাশি গণমাধ্যম বিষয়ক আইনগুলোর প্রয়োজনীয় পর্যালোচনা করে সেগুলোকে যুগোপযোগী ও স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য সহায়ক করতে হবে।
ঢাকার ডেইলি স্টার সেন্টারে আজ বুধবার আয়োজিত “গণমাধ্যম বিষয়ক আইনি কাঠামো: বর্তমান অবস্থা ও করণীয়” শীর্ষক এক সংলাপে বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন ।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহযোগিতায় গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সমষ্টি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি। সংলাপে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিক, শিক্ষক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের ৪০ প্রতিনিধি অংশ নেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, “গণমাধ্যম বিষয়ক আইনগুলো নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে বিতর্ক চলে আসছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি কাঁচের ঘরের মতো, সবাই সবাইকে দেখতে পায়। যার ভিতরে থাকে রাষ্ট্র, নাগরিক, সরকার সবাই। আর বাইরে থাকে দুর্নীতি, যাকে আমরা পোকামাকড় বলি।” তিনি আরও বলেন, “এই কাঁচের ঘরে সবার সমান অধিকার সমানভাবে রক্ষা করতে হবে। আর এজন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দরকার। এই আইন শুধু সাংবাদিকদের জন্য নয়, এটি জনগণের জন্যও। লক্ষ্য রাখতে হবে, আইনের রক্ষকরাই যেন আইন ভঙ্গ না করে। এজন্য প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আইনজীবী, বিচারকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে।”
অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, “সাংবাদিকতার নীতিমালা ও প্রচলিত আইন মেনেই সংবাদ প্রকাশ করতে হবে। যে সংবাদ প্রকাশ করলে দেশের ক্ষতি হবে তা করা যাবে না, সংবাদটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও।” সাংবাদিকদের জন্য আলাদাভাবে সম্প্রচার আইন এবং স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠন করার সুপারিশ করেন তিনি।
সংলাপে সিনিয়র সাংবাদিকরা জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জন্য বর্তমানে সাংবাদিকরা তাদের মত সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছেন না। সাংবাদিকদের বিভিন্ন জায়গায় হয়রানি হতে হচ্ছে। কখনো কর্পোরেট, কখনোবা প্রভাবশালী মহলের কাছ থেকে হয়রানি ও চাপের শিকার হতে হয়। সবাইকে ভয় নিয়েই সাংবাদিকতা করতে হচ্ছে, আবার এর জন্য অনেক সংবাদকে মেরে ফেলা হচ্ছে।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অপরাজেয় বাংলার সম্পাদক মাহমুদ মেনন খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমষ্টি’র পরিচালক ও চ্যানেল আই-এর সিনিয়র বার্তা সম্পাদক মীর মাসরুর জামান। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সমষ্টির’র কর্মসূচি পরিচালক মীর সাহিদুল আলম, সিনিয়র সাংবাদিক প্রভাস আমিন, বায়েজিদ মিলকি, গোলাম সাহানি, নাদিরা কিরণ প্রমূখ।#
Leave a Reply