নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি ::
উত্তরাঞ্চলের শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখীর মায়াবী হাসি। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজার হাজার সূর্যমুখী ফুল। ফুলগুলো বাতাসে দোল খেয়ে যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে সৌন্দর্য উপভোগ করার। তাই দিনভর সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছে হাজারো মানুষ। কেউ ছবি তুলছে, কেউবা আবার পরিবার পরিজন নিয়ে বাগানে এসে সৌন্দর্য উপভোগ করছে।
সূর্যমুখী ফুলের মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্যটি দেখা মেলে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের গোন্ডগোহালি মৌজায়। এ মাঠে বিশাল এলাকাজুড়ে রোপন করা হয়েছে কয়েক হাজার সূর্যমুখী ফুলের বীজ। বর্তমানে বীজ থেকে প্রতিটি গাছে ফুল ফুটেছে। যা দেখতে দুর-দূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন প্রতিনিয়ত। দুপুরের পর থেকেই সূর্যমুখী বাগানে নানা বয়সী মানুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। সূর্যমুখী ফুলের এ ক্ষেতটি এখন সৌন্দর্যপ্রেমীদের একমাত্র দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে হাজারো মানুষের ভিড়ে ক্ষেতটি রক্ষনাবেক্ষন করতে গিয়ে হিমশীম খেতে হচ্ছে কৃষকদের।
ক্ষেতের কিছুটা ক্ষতি হলেও সৌন্দর্যপ্রেমীদের কথা চিন্তা করে কৃষকেরা আগতদের তেমন কিছুই বলছেন না। তবে অনেকেই ফুল ছিড়ে ফেলার কারণে তারা অসন্তুষ্ট।
আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর চর এলাকায় বেলে ও দোঁআশ মাটিতে সেচের পানি এবং সার ব্যবহার করে একসময়ের পরিত্যক্ত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে কৃষকরা সফলতা পাচ্ছেন। তেমনি মাঠজুড়ে প্রসার হচ্ছে এ আবাদ। এতে যেমন আয় ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি পরিত্যক্ত জমি কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন গরীব চাষীরা।
আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর বিভিন্ন চরে ৫০-৬০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের কোড়া বড় হয়ে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী ফুলের দৃশ্য দেখতে মানুষ প্রতিদিন জমির পাশে গিয়ে ভিড় করছেন।
সূর্যমুখী ফুল চাষীরা এ ফুলের বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে চান। তারা মনে করেন, দেশে গড়ে উঠুক সূর্যমুখী বীজের তৈল উৎপাদনের কারখানা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ বিনামূল্যে বীজ, সার ও পরামর্শ দিয়ে নতুন এই সূর্যমুখী চাষে কৃষকদেরকে আগ্রহী করে তুলছেন। আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর তীর ঘেঁসে মদনডাঙ্গা, তারানগর, হরপুর, বাউল্যাসহ বিভিন্ন এলাকার চর এবং জমিতে এখন হলুদের সমারোহ। বাতাসে দোল খাচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের গাছ। হাতছানি দিচ্ছে অবহেলিত এ উপজেলার কৃষকদের স্বপ্ন।
কৃষক শহীদুল ও আব্দুল মান্নান বলেন, গত বছর এ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের বীজ লাগিয়েছিলাম। সূর্যমুখী ফুলের বীজের ফলনও বেশ ভালো হয়েছিল। তাদের এ সূর্যমুখীর চাষ দেখে আকৃষ্ট হয়ে একই গ্রামের শামছুর, ফারাজ, লবীরসহ অনেকেই এ বছর সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। গাছ মোটামুটি ভালো হয়েছে। এই গাছগুলোতে কুঁড়ি এসে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। চাষীদের ধারণা, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও কোনো রকম রোগ-বালাই না হলে এবার সূর্যমুখী ফুলের বীজের বেশি ফলন হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলার শলিয়া ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কেএম মাহাবুব জানান, সূর্যমুখী বীজ একটি লাভজনক শস্য। তাছাড়া সূর্যমুখী তেলের নানাবিধ স্বাস্থ্যগত গুনাগুন রয়েছে। সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ জনপ্রিয় করার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। চাষীদের প্রশিক্ষণ, বীজসহ নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আত্রাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম কাউছার হোসেন বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে আমাদের দেশে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ হলেও এ বছর উপজেলায় ৩ শত বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষের জন্য বিনামল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সূর্যমুখী ফুলের বীজের ভালো ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে । #
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply