পুর্নাঙ্গ কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ হতাশা
আজিজুল ইসলাম ::
২ বছর ৩মাস পর ঘোষিত কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা। কমিটিতে স্থান পেয়েছেন দলে অনুপ্রবেশকারী, বহিষ্কৃত ও প্রবাসীরা। ফলে পুর্নাঙ্গ কমিটি গঠনে স্বজনপ্রীতি অর্থনৈতিক কানেকশন বিষয়টি উত্থাপন করছেন নেতাকর্মীরাই।
২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর দলের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই কাউন্সিলে ৫ জনের নাম ঘোষণা করে জেলা কমিটি। বাকি পুর্নাঙ্গ কমিটি এক মাসের মধ্যে করা নির্দেশনা থাকলেও এরমধ্যে কেটে গেছে ২ বছর ৩ মাসভ ২৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাতে হঠাৎ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় পুর্নাঙ্গ কমিটি। কমিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর থেকে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়।
১০ নভেম্বর ২০১৯ সালে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক মিসবাউর রহমান স্বাক্ষরিত প্যাডে পুর্নাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির কমিটির সভাপতি হয়েছেন রফিকুল ইসলাম রেনু, সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আসম কামরুল ইসলামকে। সিনিয়র সহ-সভাপতি একেএম সফি আহমদ সলমান, সহ-সভাপতি ডা. রুকন উদ্দন আহমদ, অ্যাড. আতাউর রহমান শামিম, শফিউল আলম শফি, অরবিন্দু ঘোষ বিন্দু, সিএম জয়নাল আবেদিন, মনিরুল ইসলাম চৌধুরী, মনসুর আহমদ চৌধুরী, কামাল হাসান।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন যথাক্রমে- গৌরা দে, অধ্যক্ষ আব্দুল কাদির ও অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ। তিন সাংগঠনিক সম্পাদক হচ্ছেন যথাক্রমে- প্রভাষক মমদুদ হোসেন, বদরুল ইসলাম বদর ও জামাল হোসেন।
কমিটির অন্যান্যরা হলেন- আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. জাহাঙ্গির আলম, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মো. মইনুল ইসলাম সোহাগ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোস্তাক আহমদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোসাদ্দিক আহমদ নোমান, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী তরিক, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন চিনু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. সাইফুল আলম, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদকমো. আমিন উদ্দিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. আশরাফ চৌধুরী শিপু, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রিনা বেগম চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রজব আলী,যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রাজিব সারোয়ার রনি, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদ হাসান রানা, শ্রম সম্পাদক রাম বিলাস দোষাদ নানকা, সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিমলেন্দু সেন কৃষ্ণ, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. অরুনাভ দে, সহ দপ্তর সম্পাদকআব্দুল হাই শামীম, সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রুবেল আহমদ, কোষাধ্যক্ষ খালেদ আহমদ।
কমিটির সদস্যরা হলেন- সাবেক এমপি আব্দুল মতিন, আব্দুল মোক্তাদির তোফায়েল, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকিম উদ্দিন আহমদ, মিকাইল সিপার, আব্দুর রউফ, মো. মুহিম খান, অধ্যক্ষ আব্দুল মন্নান, মছদ্দর আলী, আব্দুর রব মাহবুব, সৈয়দ কলা মিয়া, আব্দু মোহিদ খান, মো. খোরশেদ আলী, মো. নজরুল ইসলাম হিরা,মো. মকদ্দছ আলী, মো. আকবর আলী সোহাগ, মো. আব্দুল মালিক, ওয়াদুদ বখস, খোরশেদ আহমদ খাঁন সুইট, খলিলুর রহমান, মুহিবুল ইসলাম আজাদ, বদরুল আলম সিদ্দিকী নানু, মো. জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল মালিক, আব্দুল বারী, নবাব আলী সাজ্জাদ খান, ফখরুল ইসলাম বখস, যাদবেন্দ্র রায় যাদু, আবু মোহাম্মদ, রাবেয়া বেগম, খালেদ পারভেজ বখস, ফজল আহমদ ফজলু, মোস্তফা আব্দুল মালিক, মছলু আমিন, সেলিম আহমদ।
বিগত স্থানীয় নির্বাচনে যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছিলো তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করে স্থান দেয়া হয়েছে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে। বিগত ইউনিয়ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মো. জামাল হোসেন, সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ভাটেরা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ একেএম নজরুল ইসলাম, বরমচাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোরশেদ আহমদ খান সুইট, শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, কর্মধার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ, কর্মধার ইউনিয়নে মছলু আমিন, টিলাগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক।
দলে প্রবাসীদের মধ্যে স্থান পেয়েছেন ইংল্যান্ড প্রবাসী কামাল হাসান হয়েছেন সহ-সভাপতি, আরেক ইংল্যান্ড প্রবাসী মোস্তফা আব্দুল মালিক সদস্য ও আমেরিকা প্রবাসী তোফায়েল আহমদ হয়েছেন সদস্য নির্বাচিত।
এছাড়া উপজেলা জয়চন্ডী ইউনিয়নের একই পরিবারের ৩ জন পেয়েছেন কমিটির সদস্য পদ। এরা হলেন- সাবেক এমপি আব্দুল মতিন, আব্দুর রউফ ও আব্দুর রব মাহবুব।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ঘোষিত তালিকা অনুয়ায়ী দলে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত ওদুদ বখস ও বদরুল আলম সিদ্দিকী নানু সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
কাদিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মৌলভীবাজার জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর আহমদ গিলমান এবং বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুর রহমান ফজলুর মতো ব্যক্তিদের ঠাঁই হয়নি কমিটিতে। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।
বিগত কমিটির সদস্য ও কর্মধা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক জানান, জামাত থেকে আসা লোকজনও কমিটিতে স্থান পেয়েছে। টোটাল কমিটি নিয়ে আমরা হতাশ। জেলা পরিষদ সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান মান্না ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেহা ফেরদৌস চৌধুরী পপি জানান, কমিটি নিয়ে আমরা হতাশ। ফলে নতুন কমিটিকে অভিনন্দন পর্যন্ত জানাতে পারছি না।
কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম জানান, অনুমোদনদাতারা অনেক কিছু বিবেচনা করেই পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছেন। এর বেশি তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।
মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিসবাউর রহমান জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত তালিকা অনুযায়ী কমিটি অনুমোদন করা হয়েছে। নির্বাচনে বিদ্রোহীদের বহিষ্কার করা হয়নি। তাদের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিলো। ফলে তাদেরকে কমিটিতে সংযুক্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেণুকে সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক একেএম সফি আহমদ সলমানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং যুব বিষয়ক সম্পাদক আসম কামরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি ও দলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন এবং সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুক্তাদির তোফায়েলকে সদস্য ঘোষণা করে পাঁচ সদস্যের উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর তাদের দায়িত্ব দেয়া হয় এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের।#
Leave a Reply