কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি ::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ইয়াবা দিয়ে এক ফার্মেসির মালিককে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে উত্তেজিত জনতা তিন পুলিশ সদস্যকে আধা ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ রকম একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গত শনিবার (১৯ মার্চ) রাতে কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের মধ্যভাগ বাজারের নিউ মেডিসিন কর্ণারে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী নিরীহ ব্যবসায়ীকে হয়রানির বিষয়টি তদন্ত করে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় মোটর সাইকেল যোগে আদমপুরের মধ্যভাগ বাজারের নিউ মেডিসিন কর্ণারে সাদা পোশাকে আসেন কমলগঞ্জ থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, এসআই হারুনুর রশীদ চৌধুরী ও কনস্টেবল আফসার উদ্দীন। ফার্মেসিতে গিয়ে তারা মালিক স্বপন কুমার সিংহকে বলেন, দোকানে ইয়াবা বিক্রি হয় বলে খবর আছে তাদের কাছে। তাই ফামের্সীতে তল্লাশি করবেন। তখন ফার্মেসীর মালিক মাদক বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করলে পুলিশ সদস্যরা উচ্চবাচ্য শুরু করেন।
একপর্যায়ে নিজেদের সঙ্গে আনা কয়েক পিস ইয়াবা হাতে নিয়ে ফার্মেসিতে পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন। তখন ফার্মেসির মালিক স্বপন কুমার সিংহ এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। কিন্তু তারা কোনো কথা শুনতে রাজি নন। এ সময় আশপাশের লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছেন। ফার্মেসির মালিক একজন ভালো মানুষ ও সেখানে কোনো মাদক বিক্রি হয় না বলে স্থানীয়রা দাবী করেন। এতে পুলিশের দুই এসআই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পুলিশের সঙ্গে কথোপকথনে স্থানীয় জনতার মধ্য উত্তেজনা সৃষ্টি হলে কয়েকশ লোক জড়ো হয়ে পুলিশ সদস্যদের ঘেরাও করে সড়ক অবরুদ্ধ করে এমন হয়রানিমূলক তল্লাশির প্রতিবাদ জানান। প্রায় আধাঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর জনতার রোষানল থেকে বাঁচার জন্য ‘তথ্যগত ভুলের কারণে এমন অনাকাংখিত ঘটনা’র দায় স্বীকার করে তিন পুলিশ সদস্য দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
অবরুদ্ধের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ফার্মেসির ভেতরে সাদা পোশাকে এসআই হারুন, এসআই সিরাজ ও কনস্টেবল আফসার দাঁড়ানো। তাদেরকে বিক্ষুদ্ধ লোকজন ঘিরে রেখেছেন। আর স্থানীয় এলাকাবাসী ফার্মেসীর সামনে জড়ো হয়ে শ্লোগান দিচ্ছেন। তারা ব্যবসায়ীকে হয়রানির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ‘কাদের পরামর্শে ভালো মানুষকে ফাঁসাতে এসেছেন’ এমন সব প্রশ্ন করতে শোনা গেছে। ভিডিওতে আরো দেখা যায়, এসআই হারুনুর রশীদ উত্তেজিত জনতাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে ভুল তথ্যদাতাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পরে তাদেরকে ছেড়ে দেন স্থানীয়রা।
ফার্মেসির মালিক স্বপন কুমার সিংহ জানান, পুলিশ হঠাৎ এসে নাপা সিরাপ আছে কি না জানতে চায়। আবার তখনই বলেন, এখানে মাদক বিক্রি হয়। তখন আমি প্রতিবাদ করলে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে ঘটনা দেখেছেন এবং তারাও প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বিষয়টি তদন্তের দাবি জানান।
আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন বলেন, ‘মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায়ের স্বপন কুমার সিংহ একজন ভালো মানুষ। এর আগেও তিনি আদমপুর বাজারে ছোট একটি ফার্মেসীর ব্যবসা করেছেন। ভূল তথ্যের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধারের জন্য পুলিশী তল্লাশীর ঘটনায় লোকজন বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে বলে তিনি শুনেছেন।
এদিকে রোববার দুপুরে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ‘অবরুদ্ধ হওয়া দুই এসআই নানাভাবে সাধারণ মানুষজনকে হয়রানি করে থাকেন। তাদের নাম শুনলেই মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।’ মধ্যভাগ বাজারের সভাপতি সিদ্দেক আলীসহ একাধিক ব্যবসায়ী এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান।
তবে কমলগঞ্জ থানার এসআই হারুনুর রশীদ ফার্মেসী তল্লাশীর কথা অস্বীকার করে এ প্রতিবেদককে জানান,, তিনি অন্য একটি মামলার কাজে পার্শ্ববর্তী বনগাঁও গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে মধ্যভাগ বাজারে জটলা দেখে বিক্ষুব্ধ জনতার সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।
এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়ারদৌস হাসান বলেন, ‘মাদকদ্রব্যের অভিযানে পুলিশ গিয়েছিল। তবে স্থানীয়দের দাবী ফার্মেসীর মালিক স্বপন কুমার সিংহ মাদকের সাথে জড়িত নয়। তবে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।#
Leave a Reply