কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি ::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মীতৈ মণিপুরিদের নববর্ষ চৈরাউবা উৎসব দিনব্যাপি বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। গত শনিবার (২ এপ্রিল) মণিপুরি চৈরাউবা উৎসব উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে উপজেলার আদমপুর তেতইগাঁও মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় এ উৎসব। চলে রাত পর্যন্ত।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় ও মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসব উদ্বোধনের পর এক বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রা শেষে মহিলাদের ‘লিকোন শান্নবা’ (কড়ি খেলা) প্রতিযোগিতা এবং শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হয় আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উৎসব উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক কবি এ কে শেরামের সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট এসসি সিনহা। বিশেষ অতিথি ছিলেন আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদাল হোসেন, কমলগঞ্জ সরকারি গণ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান মিয়া, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়, চাউবা মেমোরিয়েল মণিপুরি ইন্টেলেকচুয়েল প্রপার্টি মিউজিয়াম-এর ডিরেক্টর হামোম তনুবাবু, মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সের আহ্বায়ক এল জয়ন্ত কুমার সিংহ, সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক আকমল হোসেন নিপু, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি শাব্বির এলাহী। মণিপুরি মুসলিম সমাজের কৃতিসন্তান হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলাম এবং মণিপুরি সমাজের আরেক কৃতিসন্তান যুগ্ম কর কমিশনার হিসেবে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত সয়বাম শান্ত কুমার সিংহকে উদযাপন পর্ষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সংস্কৃতিজন থোঙাম প্রহ্লাদের সঞ্চালনায় আলোচনা পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব কবি সনাতন হামোম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কবি সাজ্জাদুল হক স্বপন। আলোচনা পর্বের পর লিকোন শান্নবা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এরপর ছিল সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী নাচের পোশাকে সজ্জিত কিশোরী-তরুণী শিল্পীদের অপরূপ পরিবেশনায় মুখর হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানমঞ্চ।
চৈরাউবা উৎসবের সবশেষ আয়োজন ছিল মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য ‘থাবল চোংবা’। খোলা মাঠে প্যান্ডেল সাজিয়ে বৈদ্যুতিক বাল্বের কৃত্রিম আলোয় অনুষ্ঠিত থাবল চোংবাতে অংশ নেয় বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতী। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ্য নবীন-প্রবীণের উপস্থিতিতে এই থাবল চোংবা অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে প্রাণের আবেগ আর আনন্দে মুখর। এক আনন্দিত আবেগ আর প্রাণোচ্ছল পরিবেশে বিশ্বমানবতার কল্যাণ কামনায় সমাপ্তি টানা হয় মণিপুরি চৈরাউবা উৎসবের অনুষ্ঠানমালার।#
Leave a Reply