কমলগঞ্জের ছয়চিরি দিঘীর পারে দুই দিনব্যাপী চড়ক পূজা ও মেলা সমাপ্ত কমলগঞ্জের ছয়চিরি দিঘীর পারে দুই দিনব্যাপী চড়ক পূজা ও মেলা সমাপ্ত – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ০৪:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কমলগঞ্জের মাগুরছড়া বিস্ফোরণের ২৮ বছর আজ বড়লেখা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাবেক ইউএইচএফপিও ডা. রত্নদীপ বিশ্বাসের পিতৃবিয়োগ বড়লেখা সীমান্তে আরো ১৩ জনকে পুশইন করল বিএসএফ বড়লেখার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপি বিএনপির কাউন্সিল : ৫ পদে নির্বাচিত হলেন যারা কমলগঞ্জের মুন্সীবাজারের রুপসপুর রাস্তাটি জরাজীর্ণ : পাকাকরণের দাবী এলাকাবাসীর যমুনা টেলিভিশনের ইউএসএ করেসপন্ডেন্ট ইকবাল ফেরদৌসকে বড়লেখা প্রেসক্লাবের সম্মাননা কমলগঞ্জের লাউয়াছড়ায় ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু কুলাউড়ার শাহীন হত্যাকান্ড : থানায় আসামির আত্মসমর্পণ কমলগঞ্জের লাউয়াছড়ায় ঈদের তিনদিনে আড়াই হাজার পর্যটকের পদচারণা বড়লেখায় শহিদ ডা. আব্দুন নুর ওয়েলনেস সেন্টারের মতবিনিময় সভা

কমলগঞ্জের ছয়চিরি দিঘীর পারে দুই দিনব্যাপী চড়ক পূজা ও মেলা সমাপ্ত

  • শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২২

প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ ::

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ছয়চিরী দিঘীর পারে দুইদিনব্যাপী চড়ক পূজা ও মেলা সমাপ্ত হয়েছে। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুক্রবার বিকেলে সমাপ্ত হয়। গত বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) শুরু হয় এ চড়ক পূজা ও মেলা। দুইশত বছরের অধিক সময় ধরে চলে আসা প্রাচীন ঐতিহ্য লালিত চড়ক পূজা ও মেলাকে কেন্দ্র করে কমলগঞ্জের ছয়চিরিসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) ফের চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়। রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে বাংলা পুঞ্জিকা মতে প্রতিবছরের চৈত্র সংক্রান্তিতে ২দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে চড়ক পূজা উৎসব। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

জানা যায়, চড়ক পূজা উৎসবের ১০/১২ দিন পূর্ব থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারীর মধ্যে ৪০/৫০ জন সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়ে গ্রামের সনাতনী হিন্দু বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরীসহ নৃত্যগীত সহকারে ভিক্ষাবৃত্তিতে অংশ নেন। এ ক’দিন তারা পবিত্রতার সহিত সন্যাস ব্রত পালন করে নিরামিষ ভোজি এবং সারাদিন উপবাস পালন করেন। চড়ক পূজার ২ দিন পূর্বে পূজারীরা শ্মশানে গিয়ে পূজা অর্চনা করেন ও শেষে গৌরীর বিয়ে, গৌরী নাচ ও বিভিন্ন গান গেয়ে ঢাকের বাজনায় সরগরম করে গোটা এলাকা। ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে ভক্তরা নৃত্য করার জন্য কলাগাছ ও বাঁশের খুটি বেষ্টিত মন্ডলী তৈরী করে। পূজার প্রথম দিন নিশি রাতে তান্ত্রিক মন্ত্র ধারা কাচ পড়া দিয়ে জলন্ত(লাকড়ির কয়লা) ছাইয়ের উপর মানুষরুপি কালী সেজে নৃত্য করে। অন্য ভক্তগণ নৃত্যের তালে তালে, ছন্দে ছন্দে ঢোলক, কাশি, করতাল বাজিয়ে থাকেন। এসময় দর্শনার্থীরা জয়ধ্বনি এবং নারীদের কন্ঠে হুলু ধ্বনি দিতে থাকেন।

জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে এই ‘কালীনাচ’ অত্যন্ত আকর্ষনীয় এবং তান্ত্রিক মন্ত্র দিয়ে ৭টি বলিছেদ (লম্বা দা) এর উপর শিব শয্যা করেন। শিবের উপর উঠে কালী ভয়ানক এক অদ্ভুত রুপ ধারন করেন। এসময় উপস্থিত দর্শনার্থী সবাই আতঙ্কিত হয়ে উঠেন। কালীনাচ শেষ হওয়ার পর শনিবার সকালে পূজারীরা পূজা করে পান বাটা দিয়ে চড়ক গাছকে নিমন্ত্রণ জানানো হলে পার্শ্ববর্তী ঐতিহাসিক ছয়চিরি দিঘী থেকে ভেসে উঠে ১০০ ফুট লম্বা চড়ক গাছ। এ গাছের চুড়া থেকে মাচা পর্যন্ত চারটি পাখার মতো করে বাধা হয় চারটি মোটা বাঁশ এবং তাতে যুক্ত করা হয় মোটা লম্বা রশি। আগের বছর উৎসব শেষে এই দিঘীতে ডুবিয়ে রাখা হয়ে ছিল চড়ক গাছ। দিঘীর পাড়ে গর্ত খুড়ে সোজা এবং খাড়া করে পোঁতা হয় এ গাছ।

বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) দপুর থেকে বিপুল সংখ্যক নারী পুরুষ দর্শনার্থীর বিশাল সমাগম ঘটে উৎসবস্থলে। বিকেল বেলা ভক্তদের মন্ডলীতে বিশাল দা (বলিছেদ) দিয়ে নৃত্য, শিবের নৃত্য ও কালীর নৃত্য দেখানো হয়। নৃত্য শেষে ছয়চিরি দিঘীতে স্নান করে ভক্তদেরকে লোহার শিকল শরীরের বিভিন্ন অংশে পিষ্ট (গাঁথা) করা হয়। বিশেষ করে জিহ্নবা ও গলায় গেঁথে দেয়া হয়। নৃত্যের তালে তালে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। দেবতার পূজা-অর্চনা শেষে অপরাহ্নে মূল সন্ন্যাসী ৪ জন ভক্তের (জীবিত মানুষের) পিঠে লোহার দু’টি করে বিরাট আকৃতির বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। এ সময়ে দর্শনার্থীদের অনেকে বাতাসা আর কলা উপরের দিকে উড়িয়ে দেন আর দর্শনার্থীরা তা কুড়িয়ে নেন।

শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) ফেরা চড়ক পূজায় দেবতার পূজা অর্চনা করা হয়। ছয়চিরি দিঘীর চার পাড়ের মধ্যে দিঘীর পূর্বপাড়ে ১টি, উত্তর পাড়ে ১টি এবং দক্ষিন পাড়ে ২টি চড়ক গাছ স্থাপন করে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তান্ত্রিক মন্ত্রের ধারা বিভিন্ন অলৌকিক ধর্মীয় কর্মসূচী উপভোগ করার জন্য প্রতি বছরের মত এবারও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে দর্শনার্থীর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। চড়ক পূজা উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী এক বিশাল মেলা বসে। চড়ক পূজা ও মেলা পরিচালনা কমিটি প্রতি বছরের মত এবারও মেলা সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল।

চড়কপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অনিরুদ্ধ প্রসাদ রায় চোধুরী জানান, ইউনিয়ন পরিষদ ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews