কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :: কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো কিছুটা অবনতি হয়েছে। গত ৩ দিন ধরে পানি বন্দি জীবন-যাপন করছে উপজেলার রৌমারী, শৌলমারী, দাঁতভাঙ্গা ও যাদুর চর ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঘর-বাড়ির পানি স্থায়ী হওয়ায় শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছেন অনেক পরিবার। চারন ভুমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসীরা।
রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুর চর গ্রামের বন্যা কবলিত আমেনা বেগম জানান, ৩ দিন ধরে ঘরের ভিতর পানি। রান্না করতে পারছি না। পানির কারনে নিজেরা ছেলে-মেয়ে নিয়ে সমস্যায় আছি। পালিত গরু ছাগল নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
রৌমারী সদর ইউনিয়নের বাওয়াইর গ্রামের ছপিয়াল হক (৫০) বলেন, ৩দিন যাবৎ বাঁশের মাচা ও চকি উঁচু করে সাপের ভয়ে মশাড়ি টেনে কোনো রকম রাত্রি যাপন করছি।
যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর গ্রামের আমজাদ হোসেন বলেন, চারদিকে পানি থাকায় কাজ-কর্ম বন্ধ। গত একসপ্তাহ থেকে পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। কোনো জন প্রতিনিধি খোঁজ-খবর নিতে আসেনি আমাদের।
সদর ইউনিয়নের ইজলামারী গ্রামের রুহুল কুদ্দুস বলেন, ধার-দেনা করে ১ একর জমিতে পাট বুনেছিলাম সেই পাট তলিয়ে গেছে। এখন আমার উপায় কি হবে তা আল্লাহই জানেন।
যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, আমার এলাকার বন্যা পরিস্থিতি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। সরকারি ভাবে এখনো কোন বরাদ্দ পাই নাই।
বন্যার পানিতে শাক-সবজি, মরিচ, কাউন, তিল, পাটসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত নিমজ্জিত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষক সুজাউল ইসলাম জানান, আমরা চরাঞ্চলে চাষাবাদ করে জীবন নির্বাহ করি। কিন্তু বন্যার পানিতে তলিয়ে সব শেষ হয়ে গেছে।
উপজেলার ২১টি বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ অবস্থায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষার্থীরা।
উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্ল্যা জানান, রৌমারী উপজেলার সব গুলো ইউনিয়নই বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানি বন্দি জীবন-যাপন করছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে বন্যা কবলিতদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন জরুরী ভিত্তিতে বন্যা কবলিতদের জন্য ৩ লাখ টাকার শুকনো খাবার সরবরাহের কাজ চলছে। আরো বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উজানের পাহাড়ী ঢল ও অব্যাহত বৃষ্টির পানিতে জিঞ্জিরাম, ধরনী ও কালজানি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রৌমারী উপজেলায় বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। তবে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পনি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এখনও বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।#
Leave a Reply