এইবেলা ডেস্ক :: মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুক আহমদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও যৌতুক দাবির অভিযোগে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তার ২য় স্ত্রী শিরীন আক্তার। আদালত আসামী মাসুক আহমদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করলে তিনি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
এদিকে মাসুক আহমদ দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় নারী নির্যাতনের অভিযোগে জুড়ী থানায় মামলা দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। শারীরিক নির্যাতন করে ১৮ বছরের মেয়েসহ শিরীন আক্তারকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন। বর্তমানে মেয়েসহ বাবার বাড়ি কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নে আতঙ্কে দিনযাপন করছেন। যেকোন সময় মাসুক আহমদ দলীয় সন্ত্রাসী কিংবা ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা নির্যাতন চালানোর আশঙ্কা করছেন শিরীন আক্তার।
মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দায়েরকৃত মামলা (নং ৮৭/২২ জুড়ী ) অভিযোগ ও নির্যাতনের শিকার শিরীন আক্তার জানান, ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলতলা বাজারের বাসিন্দা মুত আজন মিয়ার পুত্র, বর্তমান ফুলতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদের সাথে কুলাউড়া উপজেলার আমতৈল গ্রামের মৃত মোবারক আলীর মেয়ে শিরীন আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের বর্তমানে ১৮ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে।
শিরীন আক্তার জানান, মাসুক আহমদ মুলত একজন বিয়ে পাগল ও যৌতুক লোভী মানুষ। মাসুক আহমদের সংসারে তিনি ২য় স্ত্রী। তার সাথে বিরোধ লাগার পর পরই বাড়ির কাজের বুয়া স্বামী পরিত্যাক্তা মনি বেগমকে বিয়ে করে ফুলতলার বাড়িতে রেখেছেন। প্রথম স্ত্রীও জুড়ী শহরের একটি বাসায় বসবাস করেন।
বিয়ের পর ব্যবসা করার জন্য ৭ লাখ ও চিকিৎসার জন্য ৩ লাখ মোট ১০ লাখ টাকা দেন। কিন্তু এতে মাসুক আহমদের লোভ আরও বেড়ে যায়। তিনি ব্যবসার জন্য আরও ২০ লাখ টাকা আনতে স্ত্রীকে চাপ দেন। স্বামীর চারিত্রিক অবক্ষয় ও টাকা চাহিদা বেড়ে যায়। টাকা দিতে না পারায় শুরু করেন নির্যাতন। টাকার জন্য গত ২৭ এপ্রিল বুধবার এবং ২৫ জুন শনিবার দু’দফা নির্যাতন করেন। মাকে রক্ষা করতে গিয়ে মেয়েও নির্যাতনের শিকার হয়। ২য় ঘটনার পর মেয়েসহ শিরীন আক্তারকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন। নিরুপায় হয়ে মেয়েসহ শিরীন আক্তার কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন।
২য় ঘটনার পর নির্যাতনের শিকার গৃহবধু শিরীন আক্তার জুড়ী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। ফলে বাধ্য হয়ে ২৮ জুন আদালতের দ্বারস্থ হন শিরীন আক্তার।
শিরীন আক্তার আরও অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় মাসুক আহমদ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উল্টো তাকে সংসার করতে হলে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান। এধরনের কথাবার্তায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের বেঞ্চ সহকারি প্রণব ঘোষ জানান, আদালত শিরীন আক্তারের অভিযোগ গ্রহণ করেন এবং আসামী মাসুক আহমদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে তিনি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাসুক আহমদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জুড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনও থানায় আসেনি। উনার স্ত্রীর অভিযোগ সঠিক নয়। কোন নারী নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেননি।
Leave a Reply