গ্রেফতারের পর ঘাতকের স্বীকারোক্তি
এইবেলা, ওসমানীনগর ::
সিলেটের ওসমানীনগরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারী রহিমা বেগম আমিনাকে (৭০) গলা কেটে হত্যার ঘটনায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে ক্লু উদঘাটন করেছে ওসমানীনগর থানা পুলিশ। ৫ হাজার টাকা ধার না দেয়ায় বটি দা দিয়ে নিজ বাসায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুক্তরাজ্য প্রবাসী রহিমা বেগমকে।
৩১ জুলাই শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানায় ঘাতক আব্দুল জলিল কালু (৩৯)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওসমানীনগর থানার ওসি শ্যামল বনিক।
ঘাতক কালুকে উপজেলার গোয়ালাবাজারস্থ হেলাল ভিলা (করনসী রোড) থেকে গ্রেফতার করা হয়। আব্দুল জলিল কালু উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের নগরীকাপন গ্রামের মৃতত আব্দুল কাছিমের ছেলে। সে পরিবার নিয়ে গোয়ালাবাজারের করনসী রোডে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করত।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের কটালপুর গ্রামের মৃত আখলু মিয়ার যুক্তরাজ্য প্রবাসী স্ত্রী রহিমা বেগমের চার সন্তানসহ পুরো পরিবার যুক্তরাজ্যে থাকেন। তিনি গত ২ বছর ধরে গোয়ালাবাজারের করনসী রোডে নিজস্ব বাসায় একা থাকতেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি গত মঙ্গলবার ২৮ জুলাই বিকেল থেকে বন্ধ থাকায় দেশে থাকা আত্মিয়রা বৃহস্পতিবার রাতে রহিমা বেগমের বাসাটি তালবদ্ধ দেখতে পান।
পরে গভীর রাতে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে গেইট ও দরজার তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে বাথরুমে রহিমা বেগমের গলা কাটা রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় রহিমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
খবর পেয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। থানা পুলিশ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শুক্রবার (৩১ জুলাই) সকালে নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে।
শুক্রবার গভীর রাতে এ ঘটনায় একটি হত্যা (মামলা নং-০১) দায়ের করেন নিহত রহিমার ছোট ভাই উপজেলার ধিরারাই গ্রামের আব্দুল কাদির।
এদিকে, লাশ উদ্ধারের পর থেকে জড়িতদের ধরতে তৎপর হয়ে উঠে পুলিশ। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) রফিকুল ইসলামের তত্বাবধানে ওসমানীনগর থানার ওসি শ্যামল বণিকের নেতৃত্বে এসআই সুজিত চক্রবর্তী সহ পুলিশের প্রায় শতাধিক একটি চৌকস দল শুক্রবার দিনভর বিভিন্ন জায়গায় একাধিক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ সহ তদন্ত অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে শুক্রবার দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে গোয়ালাবাজারস্থ হেলাল ভিলা (করনসী রোড) থেকে আব্দুল জলিল কালুকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে কালু তাকে ৫ হাজার টাকা ধার না দেওয়ায় রহিমা বেগমকে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করে। এর পর শনিবার (১ আগস্ট) পুলিশ তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে রহিমা বেগমের মোবাইল ফোন ও ২৮ জুলাই বিকেল ৫ টার দিকে সংঘটিত এ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বটি দা নিহতের রান্না ঘর থেকে উদ্ধার করে।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বণিক বলেন, সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম এর নিদের্শনায় ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) রফিকুল ইসলামের তত্বাবধানে দ্রুততার সাথে এ হত্যাকান্ডের আসামী গ্রেফতার করা হয়।
আসামী আব্দুল জলিল কালুর স্বীকারোক্তি মতে টাকা কর্জ না দেওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে সে একাই প্রবাসী মহিলাকে গলাকেটে হত্যা করেছেন। ইতোমধ্যে খুনের আলামত জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামী ২০০৭ সালে গোয়ালাবাজারে সংঘটিত হওয়া একটি হত্যা মামলারও আসামী। সে একাধিক খুন, চুরি ও ডাকাতির সাথে জড়িত রয়েছে বলেও ওসি জানান।#
Leave a Reply