এইবেলা, কার্ডিফ, বৃটেন :: বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট দেওয়ান ফয়সলের লেখা বৃটেনের ওয়েলসের বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রথম বাংলা বই ‘ওয়েলসের কোলে ছোট্ট এক বাংলাদেশ’ এর প্রকাশনা উৎসব বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশে গতকাল ব্রিটেনের ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ শহরের সিটি হলের কাউন্সিল চেম্বারে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ক্বারী শাহ মোহাম্মদ তসলিমের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভার কাজ শুরু হয়।
বইয়ের লেখক দেওয়ান ফয়সল এর সভাপতিত্বে এবং বৃটেনের কমিউনিটি লিডার বিশিষ্ট সাংবাদিক মোহাম্মদ মকিস মনসুর ও ওয়েলস বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান দিলাবর হোসেন এর যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত পোগ্রামে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলার দিলওয়ার আলী। তিনি এই অনুষ্ঠানকে সফল করার লক্ষ্যে যারা আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে ওয়েলসের প্রথম বাংলা ‘বই রূপসী ওয়েলসের কোলে ছোট্ট এক বাংলাদেশ’ কেনার জন্য অনুরোধ জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৃটেনের ওয়েলস এসেম্বলির জাষ্টিস মিনিষ্টার জেইন হাট।
বিশেষ অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কার্ডিফের লর্ড মেয়র রাইট অনারেবল গ্রাহাম হিনচি, হাউস অব কমন্স এর ব্রিটিশ এমপি আনা ম্যাকমরিন, ওয়েলসের ডেপুটি মিনিষ্টার জুলি মরগান ও বাংলাদেশ হাই কমিশনের মিনিষ্টার ফর পলিটিক্যাল জাহিদুল ইসলাম ছাড়া ও ওয়েলস রয়েল এয়ারফোর্সের প্রতিনিধি এবং সাউথ ওয়েলস ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি সহ উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, কাউন্সিলারগন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অনারারী কাউন্সেল অব ফিনল্যান্ড জুলিয়ান ফিলিপস, বাংলাদেশী কমিউনিটির পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান, মোহাম্মদ হান্নান শহীদুল্লাহ্ এবং নিউপোট আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মোহাম্মদ তাহির উল্লাহ।
সভায় প্রধান অতিথি জাষ্টিস মিনিষ্টার জেইন হাট বলেন, আমি ৬ মাস থেকেই জানি যে ওয়েলসে একটি বাংলা বই প্রকাশিত হচ্ছে, তা দেখার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম। আজ এই বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে উপস্থিত থাকতে পেরে খুবই আনন্দিত। বইয়ের লেখককে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
লর্ড মেয়র তার বক্তব্যে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে ওয়েলসের প্রথম বাংলা প্রকাশ করায় লেখক দেওয়ান ফয়সলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বইটিকে ইংলিশ এবং ওয়েলস ভাষায় প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি বলেন বইটি ইংরেজিতে প্রকাশ করা হলে ওয়েলসের লাইব্রেরী এবং স্কুলগুলোতে বিতরণ করা যাবে।
ডেপুটি মিনিষ্টার জুলি মরগান বলেন, ওয়েলসের বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রথম একটি বই প্রকাশ করার জন্য লেখককে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বইয়ের সূচীপত্র এবং দিলাবর হোসেন ও লেখকের বক্তব্য শুনে বুঝতে পেরেছি যে, কমিউনিটির প্রয়োজনীয় সবগুলো বিষয়ের উপর আলোকপাত করে বইটি লেখা হয়েছে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, বইটি একটি তথবহুল বই। এই বইটিকে ইংরেজী এবং ওয়েলস ভাষায় প্রকাশের জন্য তিনি লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আনা ম্যাকমরিন এমপি— ফর কার্ডিফ নর্থ—শ্যাডো মিনিষ্টার ফর ভিক্টিমস এন্ড ইয়ুথ জাষ্টিস বলেন, ওয়েলসে প্রথম একটি বাংলা বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে গর্ববোধ করছি। বইটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এই আমার প্রত্যাশা।
বাংলাদেশ হাই কমিশনের পলিটিক্যাল মিনিষ্টার এ এফ এম জাহিদ—উল ইসলাম লেখককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি আশা করবো এই বইটি পড়ে ওয়েলসের বাংলাদেশী জনগণ অনেক কিছুই জানতে পারবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বইটি ইতিহাস হয়ে বেঁচে থাকবে। তিনি আরও বলেন, এবার এ অনুষ্ঠানে আমি চতুর্থবারের মতো কার্ডিফ আসলাম। আজকের এই অনুষ্ঠানটি আমার কাছে একটি ব্যতিক্রমধমীর্ অনুষ্ঠানে বলে মনে করছি, কারণ এটি ওয়েলসের একটি প্রথম বাংলা বইয়ের প্রকাশনা উৎসব।
ওয়েলস বাংলা নিউজের সম্পাদক ও ইউকে বিডি টিভির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মকিস মনসুর সহ বক্তারা বইয়ের লেখককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই বইটি আমাদের কমিউনিটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বই। কমিউনিটির প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে। বইটি আমাদের সবার সংগ্রহে রাখা প্রয়োজন। আগামীতে এই বইয়ের ২য় সংস্করণ ইংরেজি ও ওয়েলস ভাষায় প্রকাশ করার জন্য তিনি লেখকের প্রতি অনুরোধ জানান।
বইটি প্রকাশ করতে যারা বিভিন্ন ধরণের সাহায্য এবং সহযোগিতা করেছেন, লেখক দেওয়ান ফয়ছল তাদের সকলের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এই বইটি বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিহাস হিসেবে প্রতিটি ঘরেই সবার সংগ্রহে রাখা উচিৎ বলে লেখক মনে করেন।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখক সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য যে এই বইটিতে রয়েছে, ওয়েলস বাংলাদেশী কমিউনিটির সাধারণ জীবন যাত্রার কাহিনী থেকে শুরু করে ওয়েলসের মূল ধারার রাজনীতিতে বাংলাদেশীদের অবস্থান, শিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে এগিয়ে যাওয়ার বিবরণ, ওয়েলসে বাংলাদেশীদের প্রথম আগমন ও বসতি স্থাপন, রূপসী ওয়েলসের মনোরম সৌন্দর্যে্যর বর্ণনা সহ ৫৫টি অধ্যায় এবং ১৭২টি পৃষ্ঠা নিয়ে রচিত বইটির মাধ্যমে ওয়েলস বাংলাদেশী কমিউনিটির গৌরব উজ্বল থেকে আরও উজ্বলতর করে তোলবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।।
Leave a Reply