মো: বুলবুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :: কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের নানা অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কুড়িগ্রাম শাখা।
সংগঠনটির কুড়িগ্রাম জেলা শাখার মুখপাত্র জান্নাতুল তহুরা তন্বী স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ লিপিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম রেদওয়ান ফেরদৌস। তিনি কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত। ছাত্রজীবনে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন বলে জানা গেছে।
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই চিকিৎসক। তিনি দাবি করেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ তুলেছে তা সঠিক নয়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে, সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী সংকটসহ অন্যান্য সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে যান। হাসপাতালে গিয়ে তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে কাউকে না পেয়ে বহি:বিভাগ পর্যবেক্ষণে যায় প্রতিনিধি দলটি। কিন্তু বরাবরের মতো বহি:বিভাগে কোনও মেডিকেল অফিসার কিংবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাননি তারা। এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে ডা. রেদওয়ান ফেরদৌস প্রতিনিধি দলের তিন সদস্য রাজ্য জ্যোতি, যোবায়েদ হোসেন হান্নান ও আবরার শাহরিয়ারকে হাসপাতালের চিকিৎসকদের ক্লিনিক্যাল ডিসকাশন রুমে ডেকে নিয়ে হেনস্থা করেন। তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।
হাসপাতালের চিকিৎসকের এমন আচরণ ও হুমকি দেওয়ার ঘটনায় সন্দেহ প্রকাশ করে প্রতিবাদ লিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ তিনি (ডা. রেদওয়ান) আদৌ চিকিৎসক নাকি কসাই? তার মতো চিকিৎসকদের কারণেই রোগীরা সুচিকিৎসা পাচ্ছে না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুড়িগ্রাম শাখা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’
হেনস্থার শিকার ছাত্র প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রাজ্য জ্যোতি বলেন, ‘ রোগীদের দীর্ঘ সারি থাকলেও বহি:বিভাগে চিকিৎসক ছিলেন না। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে ডা. রেদওয়ান ফেরদৌস আমাদেরকে রুমে ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়ে বলেন,”তোমরা বেশি উড়িও না। এভাবে উড়লে মরতে হবে”।’
রাজ্য আরও বলেন, ‘আমরা তাকে উল্টো প্রশ্ন করি, কে মারবে? তখন তিনি বলেন, “যে কেউ মারতে পারে, আমিও মারতে পারি।” একজন চিকিৎসকের এমন আচরণে আমরা হতভম্ব হয়েছি।’
জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ বলেন, ‘ কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার দৈন্য দশা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টার বিপরীতে ডা. রেদওয়ানের আচরণ জনবিরোধী। এ ধরণের চিকিৎসকের হাসপাতালে থাকা না থাকা একই। এমন আচরণের কারণে তার বিরুদ্ধে বিধিসম্মত ব্যবস্থা চাই।’
তবে শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডা. রেদওয়ান ফেরদৌস। স্বাস্থ্যসেবা মান উন্নয়ন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগরে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ তারা স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ভালো কাজ করছে। এটা ভালো। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ সত্য নয়।’
এ ব্যাপারে জানতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘ বহি:বিভাগে চিকিৎসক উপস্থিত না থাকা নিয়ে শিক্ষার্থীরা যা বলছে সেটা সঠিক নয়। ডা. রেদওয়ান ওয়াশরুমে গিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা তাকে না পেয়ে কক্ষের ছবি তোলে। রেদওয়ান ফিরে এসে বলেছে যে সে আছে। এটা নিয়ে কথা হয়েছে শুনেছি। ওরা এটা না বুঝে যদি অযৌক্তিক আবেদন করে তাহলে তো উত্তর আমার কাছে নেই।’
শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া প্রশ্নে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘ হুমকি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এটা জানতে হলে সংশ্লিষ্ট অফিসারের সাথে কথা বলতে হবে।’#
since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in
Leave a Reply