এইবেলা, মৌলভীবাজার::
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম.কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম (সেবা) বলেন, বৈষম্যবিহীন সমাজ ও বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের উদ্দেশ্য। এর পূর্বশর্ত হচ্ছে আইন শৃঙ্খলার উন্নতি, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশি সেবা প্রদানে আমরা বাধ্য। অপরাধের সাথে যে-ই জড়িত হোক না কেন, সে পুলিশ সদস্য হলেও কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধ দমন ও জনগণের ডাকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মৌলভীবাজার জেলা ও উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জবাবদিহিতা নিয়ে বুধবার সকালে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার এসব কথা বলেন। সভায় সাংবাদিকরা ফ্যাসিস্ট আ’লীগ সরকারের দোসর হলুদ সাংবাদিকদের আইনের আওতায় আনার জোরালো দাবী জানান।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা পুলিশ সুপার এম.কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম (সেবা)। তিনি জেলার বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, আসন্ন রমজানে জেলার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মলম পার্টি, মাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সংক্রান্ত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এবং পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া নানা পরিকল্পনা তোলে ধরেন। পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ সুপার হিসেবে আমি আপনাদের কাছে দায়বদ্ধ। আমি আপনাদের কাছে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য। সারা দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির তুলনায় মৌলভীবাজার পুলিশ কতটুকু ভালো অবস্থানে আছে, নাকি আমরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ?
সভায় সাংবাদিকরা জেলা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা, বিশেষ করে এম সাইফুর রহমান সড়কে এমবি ও বিলাস ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের কারণে পশ্চিমবাজারে যানজট লেগেই থাকে উল্লেখ করে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানকে অন্যত্র সরানোর পরামর্শ দেন। মৌলভীবাজার ২৫০ বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নতুন চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনার দাবী তোলা হয়। এছাড়াও হলুদ সাংবাদিকদের মধ্যে যারা দলবদ্ধ হয়ে শহরের সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন দফতরে হয়রানী ও চাঁদা দাবী করে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবী তোলেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, চুরি-ডাকাতি, মাদক, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি মৌলভীবাজার জেলায় বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা রয়েছে। সমস্যাগুলো পুলিশ একা নয়, সমাজের সকল স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমেই সামাজিক সমস্যা সমূহ দূর করা সম্ভব হবে। এছাড়াও চোরাচালান, চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মাদকের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যেসব জায়গায় মাদকের আসর বসে সেসব জায়গা দ্রুত চিহ্নিত করে মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, মাদক, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ রোধে পুলিশের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ব করতে হবে। এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখতে পারেন। সবার সহযোগিতা পেলে এসব অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে।
মতবিনিময় সভায় নানা সমস্যা তোলে ধরে ও তা নিরসনে পুলিশের উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আহবায়ক বকসি ইকবাল আহমদ, বাংলাভিশন প্রতিনিধি এসএম হুমায়েদ আলী শাহিন, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম উমেদ আলী, ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম মুহিব, মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার মু. ইমাদ উদ্দীন, মাছরাঙা টিভির জেলা প্রতিনিধি ফেরদৌস আহমেদ তমাল, দিনকালের জেলা প্রতিনিধি মো. শাহজাহান মিয়া, একাত্তর টিভির প্রতিনিধি আহমেদ ফারুক মিল্লাত, বড়লেখা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব, আমার দেশ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি এম. ইদ্রিস আলী, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল বাছিত বাচ্চু, যায়যায়দিনের স্টাফ রিপোর্টার মো. আব্দুল ওয়াদুদ, রাজনগর প্রেসক্লাব সভাপতি আউয়াল কালাম বেগ, সাংবাদিক হারিস মোহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম সুমন, এজে লাভলু, আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আজমল হোসেন, জেলা বিশেষ শাখার ডিআইও-১ আবু হুসাইন, টিআই (প্রশাসন) অনিল বিকাশ চাকমা, মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ গাজী মাহবুবুর রহমানসহ পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ।
Leave a Reply