এইবেলা, বড়লেখা:
বড়লেখায় পিডিবি’র ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইনের (পরিত্যক্ত) লাখ লাখ টাকার মার্লিন তার, ইনস্যুলেটর, এঙ্গেলসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি অবাধে চুরি হলেও তা রক্ষণাবেক্ষণ ও অপসারণে কর্তৃপক্ষ চরম উদাসীন। চোরেরা মূল্যবান রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে বিভিন্ন ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করছে। স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় মালামাল চুরির ঘটনা অবহিত করলেও রহস্যজনকভাবে নির্বাক থাকছে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ। ভাঙ্গারি দোকানে ব্যাপক পরিমাণ বৈদ্যুতিক তার কেটে টুকরো করার সময় রতুলিবাজারের ব্যবসায়িরা হাতেনাতে ধরে থানা পুলিশকে খবর দিলেও চোরাই মালামাল জব্দ করে আইনী পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। ফলে গত দেড়/দুই মাসে অন্তত বিশ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক তারসহ মূল্যবান মালামাল চুরি হয়ে গেছে।
গত ২ রমজান ( ১ মার্চ) রাতে পিডিবির বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক (লক্ষাধিক টাকার) তার কেটে টুকরো টুকরো করতে দেখে গ্রাম পুলিশ নিয়ে তা আটক করে পুলিশে খবর দেন রতুলিবাজারের ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দ। এসআই মফিজুল ইসলাম ও এসআই মাসুদ পারভেজ জমাদার ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধ মালামাল জব্দ করেননি। পরে এসআই সুব্রত চন্দ্র দাসসহ পুলিশ কর্মকর্তারা কয়েক দফা ওই ভাঙ্গারী দোকানে গেলেও ব্যবসায়ির সাথে আঁতাত করে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ কারণে লোকজন বৈদ্যুতিক চোরাই মালামাল দেখলেও প্রশাসনে জানান না।
অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর ধরে পিডিবি ৩৩ হাজার কেভি কুলাউড়া-বড়লেখা পরিত্যক্ত বিদ্যুৎ লাইন রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের নামে কর্মকর্তারা লাখ লাখ টাকা লুটপাট করেছে। আর রক্ষণাবেক্ষণ না করায় প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
জানা গেছে, সত্তরের দশকে নির্মিত কুলাউড়া-বিয়ানীবাজার পিডিবির বিদ্যুৎ লাইনের (গ্রীড লাইন) আওতাধীন এলাকার বেশ কিছু এলাকা ১৯৯৮ সালে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিকে হস্তান্তর করে পিডিবি। ওই গ্রীড লাইন থেকে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সাবষ্টেশনে পাওয়ার সরবরাহ করা হতো। পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি নিজস্ব লাইন নির্মাণ করলেও কোনো দুর্যোগ দেখা দিলে ওই লাইন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। ২০১৫-১৬ সালের দিকে ঘুর্নিঝড়ে কালাপানি নামক স্থানে ১৭টি খুঁটি পড়ে গেলে ওই সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করেই বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়। পিডিবি আওতাধীন প্রায় এলাকায় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি নিজস্ব লাইন নির্মাণ সম্পন্ন করায় ২০১৯ সালের দিকে পিডিবি উক্ত লাইনটি পরিত্যক্ত করে রাখে। কিন্তু কয়েক কোটি টাকার ব্যাপক খুঁটি ও মূল্যবান সরঞ্জামাদি অপসারণ করেনি। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ আর তদারকি না থাকায় অসাধুদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে লাইনের মূল্যবান তার (মার্লিন এলোমুনিয়াম), ইনস্যুলেটর, লোহার এঙ্গেল, খুটির ভেতরের রডসহ অন্যান্য মালামালের প্রতি। চোরেরা খুটি ভেঙ্গে মাটিতে পুতে কেটে নিচ্ছে লাইনের মুল্যবান তার। যা ভাঙ্গারী দোকানে কেজি দেড়শ’ টাকা থেকে দুইশ’ টাকা দরে বিক্রি হয়। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সম্প্রতি তার চুরির হিড়িক পড়েছে। ইতিমধ্যে চোরেরা কয়েক কিলোমিটার এলাকার তার কেটে নিয়ে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ চুরির ঘটনাগুলো পিডিবি অফিস ও থানা পুলিশকে অবহিত করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আক্ষেপ করে তারা বলেন, এই লাইন নির্মাণে সরকারের শত কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। লাইনটির যদি কোনো প্রয়োজন না থাকে তবে তা অপসারণ করে মালামলা বিক্রি করলেও সরকার কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব আয় করতে পারত। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় রাষ্ট্রের সম্পদ চোরেরা নিয়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে কারো যেন কোনো দায় নেই।
সরেজমিনে উপজেলার দক্ষিণভাগ, রতুলিবাজার, গাংকুল, কাঠালতলী ও পানিধার এলাকায় কয়েকশ’ মিটার এলাকায় একাধিক বৈদ্যুতিক খুটি মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। খুটির উপরের তার ও অন্যান্য মালামাল চোরেরা নিয়ে গেছে। চোরেরা প্রথমে সুকৌশলে খুটি ভেঙে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে মালামালগুলো কেটে টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে ভাঙ্গাড়ি দোকানে বিক্রি করছে। বুধবার রাতে দক্ষিণভাগ গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আছাদ আলীর বাড়ি সামনা ও আশপাশের ৫টি খুটি চোরেরা ভেঙে মাটিতে ফেলে আংশিক তার নিয়ে যায়। আছাদ আলী চেয়ারম্যানের ছেলে খায়রুল আলম খায়ের বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেও বিদ্যুৎ বিভাগের (পিডিবি) কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি। রাত একটা পর্যন্ত ছেলেকে নিয়ে তিনি পাহারা দেন। শুক্রবার সকালে দেখেন তারগুলো আর নেই। চোরেরা নিয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানান, অনেক আগে থেকেই এভাবে তার চুরি হচ্ছে। পিডিবি অফিসে জানানো হলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। এতে চোরেরা আরো বেপরোয়া হয়ে সরকারি সম্পদ চুরি করছে। এলাকাবাসি জানান, গত দেড়/দুই মাসে এই এলাকা থেকে অন্তত বিশ লাখ টাকার বৈদ্যুতিক তার ও মালামাল চুরি হয়ে গেছে। রতুলি বাজারের ব্যবসায়িরা জানান, তাদের বাজারের ভাঙ্গারি ব্যবসায়ি মহি উদ্দিনের দোকানে গত ২ রমজান রাতে পিডিবির বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক (লক্ষাধিক টাকার) তার কেটে টুকরো টুকরো করতে দেখে গ্রাম পুলিশ নিয়ে তা আটক করে পুলিশে খবর দেন। এসআই মফিজুল ও এসআই মাসুদ পারভেজ জমাদার ঘটনাস্থলে গিয়ে অবৈধ মালামাল জব্দও করেননি। পরে এসআই সুব্রত চন্দ্র দাসসহ পুলিশ কর্মকর্তারা কয়েক দফা ওই ভাঙ্গারী দোকানে গেলেও ব্যবসায়ির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ কারণে এখন আর লোকজন বৈদ্যুতিক চোরাই তার দেখলেও প্রশাসনে জানান না।
বড়লেখা থানার এসআই মাসুদ পারভেজ জমাদার জানান, বৈদ্যুতিক চোরাই তার আটকের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। তবে, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে।
রতুলিবাজার ব্যবসায়ি সমিতির আহ্বায়ক ও ইউপি সদস্য সাহেদুল ইসলাম সুমন ও যুগ্ম আহবায়ক সাইদুল ইসলাম জানান, রাষ্ট্রীয় সম্পদ বৈদ্যুতিক তার চুরি করে ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রির তথ্য পেয়ে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ি মহিউদ্দিনের দোকানে সরেজমিনে গিয়ে কয়েকবস্তা তার দেখতে পেয়ে গ্রামপুলিশ দিয়ে তা আটক করি এবং মালামালের ভিডিও ধারণ করি। পরে এসআই মাসুুদ পারভেজকে খবর দিলে তিনি এসআই মফিজুল ইসলামকে সাথে নিয়ে রতুলি বাজারে আসেন। তিনি ভাঙ্গারি ব্যবসায়ির সাথে গোপন আঁতাত করায় মালামাল জব্দ ও আইনগত ব্যবস্থা নেননি। পরে কয়েক দফা তিনিসহ আরো কয়েকজন পুলিশ অফিসার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ি মহিউদ্দিনের দোকানে যান। অনেকেই বলেছেন, ভাঙ্গারি ব্যবসায়ির কাছ থেকে এসআই মাসুদ পারভেজ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেন।
পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী সাহাদাৎ হোসেন জানান, পিডিবির পরিত্যক্ত এই লাইনটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এলাকাটি আরইবি নিয়ে নেওয়ায় লাইনটি তাদের কাছে হ্যান্ড অভার করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ি আরইবি লাইনের যাবতীয় মালামাল অপসারণ করে ভেন্ডারে দিবে। পরবর্তীতে পিডিবিকে তা বুঝিয়ে দিবে। পরে তা বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ কোষাগারে জমা দেওয়া হবে। পরিত্যক্ত বিদ্যুৎ লাইনসহ মালামাল চুরির বিষয়টি তাকে কেউ জানাননি। চুরির ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে একজন সাব-এসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ারকে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply