এইবেলা প্রতিবেদক :: ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ কাজ ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় হবিগঞ্জের বাহুবল অংশে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ছোট একটি মন্দির ও একটি বটগাছ রক্ষায় গোঁ ধরেন জমির মালিক। রাস্তার নকশা পরিবর্তনের দাবি তোলেন তিনি। অথচ নকশা পরিবর্তন করলে ভূমিহীন হয়ে পড়বে অসংখ্য পরিবার। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই সাধারণ মানুষের। অপর দিকে কাজে বিলম্ব হওয়ায় একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, অপর দিকে কাজের ব্যয় বাড়লে সরকারেরও ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সম্ভুপুর গ্রামের তপন পাল বলেন, একজনের স্বার্থে রাস্তাটি বাঁকা করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আমরা শুনতে পেরেছি। অথচ রাস্তা বাঁকা হলে এখানে দুর্ঘটনা বেড়ে যাবে। এছাড়া পূর্বদিকে মানুষের বাড়িঘর। ঘনবসতি। সেদিকে রাস্তা নিলে মানুষের মারাত্মক ক্ষতি হবে।
একই গ্রামের বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, রাস্তাটি যদি পশ্চিম দিকে নেওয়া হয় তবে সেটি সোজা হবে। এতে দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। পূর্বদিকে নিলে আরও বেঁকে যাবে। দুর্ঘটনা বাড়বে। তাছাড়া পূর্বদিকে এলাকার একমাত্র প্রাথমিক স্কুল, ঈদগা ও মক্তব ভাঙা পড়বে। এতে শিক্ষায় আমরা পিছিয়ে পড়ব। মানুষের বাড়িঘর ভাঙা পড়বে। কেউ কেউ মাত্র ১/দেড় শতাংশ জমিতে কোনো রকমে একটি ঘর বানিয়ে বসবাস করছেন। তারা নিঃস্ব হয়ে পড়বেন। তাই সার্বিক বিষয় চিন্তা করে রাস্তাটি পশ্চিম দিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের করা নকশা অনুযায়ীই করার দাবি জানান তিনি।
মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, আমরা ৫ ভাই মাত্র ৯ শতাংশ জমি। একেকজন ২ শতাংশের চেয়েও কম জমি নিয়ে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছি। যদি রাস্তাটি পূর্ব দিকে নেওয়া হয় তবে আমাদের বাড়িঘর চলে যাবে। আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ব। এমন আরও অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়বে।
রতন পাল বলেন, যে মন্দিরটি ও বটগাছ রক্ষায় গোঁ ধরা হয়েছে সেটি এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ মন্দির নয়। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, আমাদের আলাদা মন্দির করে দেওয়া হবে। অপর দিকে পূর্ব পাশে রাস্তা গেলে আমাদের বাড়িঘর থাকবে না। যদি বাড়িঘরই না থাকে তাহলে মন্দির দিয়ে কী করব।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিপিসিএল নিয়োজিত প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন কাদের বলেন, এখানে পশ্চিম পাশে হাওড় এলাকা। তাই সেদিকে ক্ষতি কম হবে। আর পূর্বদিকে ঘনবসতি সেদিকে অধিগ্রহণ করলে ক্ষতি বেশি হবে। তাছাড়া রাস্তাটি সোজা করতে হলে পশ্চিম দিকেই যেতে হয়। এসব বিবেচনায় নিয়েই মূলত সড়কের নকশাটি করা হয়েছে। এখন মূল কাজ হচ্ছে জেলা প্রশাসনের। অধিগ্রহণের জন্য যে টাকা প্রয়োজন তাও ইতোমধ্যেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের প্যাকেজটি হচ্ছে আকিজ ফ্যাক্টরি (মর্দিলং ব্রিজ) থেকে সদরঘাট গেট পর্যন্ত। তার মধ্যে আকিজ ফ্যাক্টরি থেকে পুটিজুরির অর্ধেক পর্যন্ত এসে যৌথ জরিপ থেমে আছে প্রায় ৬ মাস ধরে। এ সময়ে আমাদের প্রজেক্ট প্রায় শেষ হয়ে যেত। ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি থেকে আমাদের সময় গণনা শুরু হয়েছে। এর ২৭০ দিনের মধ্যে আমাদের জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রায় দুই বছর হতে চললেও আমরা এখনো জমি পাইনি।
প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন কাদের বলেন, আমাদের কাজটি করার জন্য ২০০ লোক দরকার। সে লোকবল বসিয়ে রেখে বেতন দিচ্ছি, যন্ত্রপাতি এনে ফেলে রেখেছি। শুধু জমি না পাওয়ায় কাজ হয়েছে অর্ধেকেরও কম। কন্টাক্ট ভায়োলেশনও হচ্ছে। দ্বিতীয়ত সড়ক বিভাগের খরচ বাড়বে।
পুটিজুরি অংশের প্রজেক্ট ম্যানেজার সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ গবেষণার পর রাস্তার নকশা তৈরি করা হয়েছে। চাইলেই সে নকশা পরিবর্তন করা যায় না। বাহুবল উপজেলার কল্যাণপুর মৌজায় একটি মন্দির পড়েছে রাস্তায়। সেটি আমরা অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু মন্দিরটি যে বাড়িতে পড়েছে তারা বাধা দেওয়ায় রাস্তাটির কাজ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে সরকার। এটি সম্পূর্ণ জেলা প্রশাসকের এখতিয়ার। আর আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করব। জমি বুঝে পাওয়ার আগে কাজ করা সম্ভব নয়।
জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান বলেন, এখানে প্রায় ৩০১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ৩০টি এলএ কেসের মাধ্যমে। খুব দ্রুত কাজ হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা ৪টি কেস বুঝিয়ে দিয়েছি। পুটিজুরি অংশটি নিয়েও কাজ চলছে। অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা জমি হস্তান্তর করতে পারব আশা করি। এখন কোনো জটিলতা নেই। সড়ক বিভাগ থেকেই নকশা করা হয়েছে। সে অনুযায়ীই কাজ হবে।
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply