নিজস্ব প্রতিবেদক :: দুর্গাপূজার একটি মন্ডপে পরিদর্শনে গিয়ে রোজা ও পূজা নিয়ে
ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সেক্রেটারী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির যে বক্তব্য নিয়ে দেশ জুড়ে আলোচনা সমালোচনা তার ব্যাখ্যা দিয়েছন তিনি।
পূজা মন্ডপ পরিদর্শণে গিয়ে জামায়াত নেতা শিশির মনির হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশেযে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা তুলে ধরা হলো- ‘আমরা একই মুদ্রার এপিট এবং ওপিট। এপিটে আছে শাপলা, ওপিটে আনারস। আমরা একই মুদ্রার এপার-ওপার। একদিকে রোজা-অপরদিকে পূজা। এই রোজা ও পূজা মিলে বাংলাদেশ। রোজা আর পূজা মিলে ভাটি বাংলা। একসাথে মিলে আমরা একসাথে বড় হবো। একসাথে বেঁচে থাকবো। একসাথে সংগ্রাম করবো।’
উপরোক্ত বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ায ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় তার ব্যাখ্যা দেন শিশির মনির। এতে তিনি বলেন, ‘‘এক অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম— ‘আমরা এক মুদ্রার এপার আর ওপার। একদিকে রোজা, অন্যদিকে পূজা। রোজা আর পূজা মিলেই বাংলাদেশ।’ কিন্তু আমি যে প্রেক্ষাপটে কথাটি বলেছিলাম, সেটি সঠিকভাবে না বুঝে অনেকেই ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন। আমার বক্তব্যের মূল ভাব ছিল হিন্দু ও মুসলমান মিলেই বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে যদি আমরা একটি মুদ্রার সঙ্গে তুলনা করি, তবে সেই মুদ্রার এক পাশে রয়েছেন মুসলমানরা, যারা রোজা পালন করেন, অন্যপাশে রয়েছেন হিন্দুরা, যারা পূজা উদযাপন করেন। এটি রোজা ও পূজাকে একসঙ্গে মিশিয়ে ফেলার কোনো প্রচেষ্টা নয়, বরং বোঝাতে চেয়েছি— দুই ধর্মের মানুষই এই দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রত্যেকে নিজের ধর্ম পালন করবে— এটাই আমাদের সংস্কৃতি, এটাই বাংলাদেশ। আমার বক্তব্যে এর বাইরে অন্য কোনো অর্থ বা ব্যাখ্যা নেই।’’
তার ওই বক্তব্য অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সর্বত্র। দুই ধর্মের আচারকে একসাথে মিলিয়ে ফেলার সমালোচনা করছেন অনেকে। এমন মন্তব্যের জেরে শিশির মনিরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে। আবার শিশির মনিরে এমন মন্তব্য কোন ধর্মকে কটাক্ষ করা নয় বরং সম্প্রীতির বার্তা উল্লেখ করে প্রশাংসাও করছেন কেউ কেউ।
সুনামগঞ্জের ভাটি অঞ্চল দিরাই ও শাল্লা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতের মনোনয়ন প্রত্যাশী শিশির মনির। এই আসনটি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আসন হিসেবে পরিচিত। সুরঞ্জিত সেন এই আসন থেকে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সুরঞ্জিতের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী জয়া সেনগুপ্তও এ আসনে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বিএনপি নেতা নাছির উদ্দিন চৌধুরীও এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তবে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয় এ নেতা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। যদি তিনি আবারও নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এবার মাঠে আওয়ামী লীগ নেই। নাছির চৌধুরীও অসুস্থ। এরফলে আগামী নির্বাচনে এ আসনে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন শিশির মনির।
সুনামগঞ্জ-২ আসনের একটি বড় অংশের ভোটারই হিন্দুধর্মাবলম্বী। এই ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানতে মরিয়া সম্ভাব্য সব প্রার্থীরাই।
হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানে গিয়ে শিশির মনিরের একটি মন্তব্য ঘিরে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। এ বক্তব্যের প্রতিবাদে শিশির মনিরের নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিক্ষোভও হয়েছে। বিএনপিসহ এলাকায় শিশির মনিরের বিরোধী রাজনৈতিক বলয়ের নেতারাই ওই বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন বলে জানা গেছে।
শিশির মনিরের ওই বক্তব্যের তিব্র সমালোচনা করেছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মওদুদী ফিতনা প্রতিহত না করলে দেশে ইসলাম থাকবে না। মওদুদীবাদীরা সাহাবাগণকে সত্যের মাপকাঠি মানে না। ইসলামের পর্দা প্রথাকে তারা অস্বীকার করে, জামায়াত নেতা শিশির মনির পূজা এবং রোজাকে এক আখ্যায়িত করে ইমানহারা হয়েছেন।
তিনি বলেন, কুফরি যাতে প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, সামনের নির্বাচনে ভোট দেওয়া যাবে না। যারা পূজা আর রোজা একই বলে, এগুলো কী ইসলাম। নবী ও রাসুলদের দেখানো সোজা রাস্তায় চলতে হবে। তাহলে দুনিয়া ও আখিরাত ঠিক থাকবে। সাহাবা কেরাম সত্যের মাপকাঠি। তাদের দেখানো রাস্তা সোজা রাস্তা।
এদিকে, শিশির মনির ইসলামের উপর ধর্মের ফরজ বিধান ‘রোজা’কে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন অভিযোগ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৪ অক্টোবর) ‘দিরাই সর্বস্তরের জনতার’ ব্যানারে দিরাই মধ্য বাজার জামে মসজিদের সামন থেকে মিছিল শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দিরাই থানা পয়েন্টে প্রতিবাদ সভা করেন তারা।
সভায় বক্তব্য দেন- সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য অশোক কুমার তালুকদার, উপজেলা জমিয়তের সভাপতি মাওলানা মহি উদ্দিন কাসেমী, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুখতার হোসেন চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সুমন মিয়া, পৌর বিএনপির সদস্য কয়সর ইসলাম প্রমুখ।
এতে বক্তারা বলেন, পবিত্র রোজা হচ্ছে ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভের উন্নতম একটি ফরজ বিধান, পবিত্র রোজা কে পূজার সাথে তুলনা করে তিনি ইসলাম থেকে দুরে চলে গেছেন, তাকে তওবা করে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এর আগে ও অনেক নাস্তিকরা আমাদের পবিত্র ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করেলে দিরাইর তৌহিদী জনতার আন্দোলনের কারণে মাফ চাইতে হয়েছে। অন্যতায় তৌহিদী জনতা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply