কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি::
দেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। যেখানে প্রায় প্রতি বছর বন্যার মুখোমুখি হয় চরাঞ্চলসহ নিভৃত গ্রামের অসংখ্য মানুষ। সেই কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন গ্রামীণ প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাঘাট, স্কুল এবং হাট-বাজারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে কৃষি, মৎস্য চাষ এবং অন্যান্য গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। এলজিইডির এ সকল উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার গ্রামীণ জনপদ।
বিশেষ করে বর্তমান উপজেলা প্রকৌশলী ইনছাফুল হক সরকার যোগদানের পর উন্নয়ন কর্মকান্ডে- পাল্টে গেছে উপজেলার সরকারি, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান ও গ্রামীণ জনপদের চেহারা। এতে বৃদ্ধি পেয়েছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠির জীবনযাত্রার মান আরও গতিশীল হয়েছে অর্থনীতি।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে এলজিইডির তত্বাবধানে উপজেলায় ২৭ কিলোমিটার কার্পেটিং পাকা সড়ক, ২ টি বড় ব্রিজ, ২৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ও প্রায় ৩০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন করা হয়েছে। সেই সাথে উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল ও এডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পানি নিষ্কাশনের পাইপলাইন স্থাপন, ড্রেন, বাঁধ ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণসহ ছোট-বড় উন্নয়নমুলক কাজ করা হয়েছে।
এছাড়া আমার গ্রাম আমার শহর পাইলট উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পাথরডুবি প্রাইমারি স্কুল থেকে আকবর মাস্টারের বাড়ি পর্যন্ত সড়ক, ঢেবঢেবী বাজার থেকে ময়দান খনিবাড়ি পর্যন্ত সড়ক, পাথরডুবি গার্লস স্কুল থেকে উত্তর পাথরডুবি ভায়া চাঁদনী বাজার সড়ক ও ভুরুঙ্গামারী থেকে সাহেবগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন সহ চারটি প্রকল্পের ১৪ কোটি ২২ লাখ ৭শ ২৮ টাকা ব্যয়ে মোট ১০.০৬ কি:মি: সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। অপরদিকে প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, পাথরডুবি ন্যারো ব্রিজ ও পাগলাহাট রাস্তায় ব্রিজের ডিজাইন সহ উন্নয়নমুলক কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা এলজিইডির অধীনে প্রভাতী প্রকল্পের মাধ্যমে আন্ধারীঝাড় বাজার ও জয়মনিরহাট বাজার হাটসেড নির্মাণে এলসিএস দলের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি নার্গিস বেগম, সুমি বেগম সাহিদা বেগম, কোহিনুর বেগম, রহিমা বেগম, সাবানা, হালিমা, আলেয়া, মোর্শেদা বলেন, এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ইনছাফুল হক সরকারের সার্বিক নির্দেশনায় হিসাব সহকারী সাজ্জাদুল ইসলাম ও প্রভাতী প্রকল্পের সহকারী মাঠ প্রকৌশলী বোরহানের সার্বিক সহযোগিতায় প্রভাতী প্রকল্পের আওতায় আন্ধারীঝাড় বাজার ও জয়মনিরহাট বাজার নির্মাণ কাজ আমাদের (এলসিএস মহিলা কর্মী) তত্ত্বাবধানে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে এবং প্রকল্পে কর্মসংস্থান পেয়ে গরীব পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এলাকায় সামাজিক উন্নয়নে বদলে গেছে গ্রামীণ পরিবেশ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল এবং এডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে টেন্ডার/আরএফকিউ প্রক্রিয়ায় জলাবদ্ধতা নিরসনে নার্সারি মোড় হতে সরকারি কলেজ মসজিদ পর্যন্ত আরসিসি ড্রেন নির্মাণ কাজ নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ চত্বর শোভাবর্ধন সহ জনগুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে । ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের আওতায় এডিপি এবং রাজস্ব তহবিলের মাধ্যমে টেন্ডার/আরএফকিউ প্রক্রিয়ায় জনগুরুত্বপূর্ণ মহিলা দাখিল মাদ্রাসাগামী রাস্তা, কবরস্থানগামী রাস্তা, মিলনী স্কুলগামী রাস্তা নির্মাণসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নমূলক কাজ সর্বোচ্চ গুণগতমান ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে ঠিকাদারের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ব্যাংকার শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের অনেক দিনের প্রতীক্ষিত অবহেলিত মহিলা মাদ্রাসাগামী রাস্তাটি এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করায় আমরা খুশি । এতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে।
মিলনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি উপজেলা এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এভাবেই উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে আমাদের ভুরুঙ্গামারী।
স্থানীয় বাসিন্দা এছাহক আলী মাস্টার, নুরে আলম, লিয়াকত আলী, মাসুদ জানান, অবহেলিত এ উপজেলায় রাস্তা, ড্রেন ও বাজার উন্নয়নে আমরা কৃতজ্ঞ এবং সকল কাজ স্বচ্ছতার মাধ্যমে সঠিক গুনগত মান নিশ্চিত করে ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী ইনছাফুল হক সরকার বলেন, প্রভাতী প্রকল্পের আওতায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের কারিগর প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বনির্ভর করতে কাজ করা হচ্ছে এবং নিদিষ্ট সময়ের পূর্বে হাট বাজারের কাজ সমাপ্ত হবে এবং এলসিএস কর্মী তাদের লভ্যাংশ বুঝে পাবে। তিনি আরো জানান উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত এবং জনগুরুত্ব বিবেচনা করে ২০২৪-২০২৫ ও ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের এডিপি ও উপজেলা পরিষদ রাজস্ব তহবিলের মাধ্যমে কিছু প্রকল্প টেন্ডার/আরএফকিউ প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার নিযুক্ত করে সুষ্ঠুভাবে স্বচ্ছতার সহিত সমাপ্ত করা হয়েছে। এতে অত্র উপজেলায় জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)র চলমান ও প্রক্রিয়াধীন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে উপজেলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব দীপ জন মিত্র বলেন, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার জনগনের চাহিদার ভিত্তিতে এডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে জনগুরুত্বপূর্ন কিছু রাস্তা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন মুলক কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে এবং উপজেলা প্রকৌশলী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারসহ কাজ গুলো পরিদর্শন করা হয়েছে এবং কাজের গুনগতমান সন্তোষজনক মর্মে প্রতীয়মান হয।#
since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in
Leave a Reply