হাকালুকি হাওরপাড়ের ‘পাখিবাড়ি’ যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণে বাঁধা হাকালুকি হাওরপাড়ের ‘পাখিবাড়ি’ যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণে বাঁধা – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
আত্রাইয়ে ব্রিজের নির্মাণ কাজে ধীরগতি : দুর্ভোগে এলাকাবাসী শ্রীমঙ্গলে এসএমই ফাউন্ডেশনের ঋণ ম্যাচমেকিং কর্মসূচি ও ব্যাংকার-উদ্যোক্তা মত বিনিময় সভা ৪শ’ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক নিদর্শণ আত্রাইয়ের তিন গুম্বুজ মসজিদ-মঠ সিলেট তালতলা ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক কমিটি গঠন জেলা প্রশাসকের সাথে কুলাউড়ায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মতবিনিময় কুলাউড়ার সদপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মা সমাবেশ বড়লেখায় বিজিবির হাতে রুপিসহ ভারতীয় নাগরিক আটক কুড়িগ্রামে ঘর-বাড়ি ফসলি জমি রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন রোধের চেষ্টা গ্রামবাসীর    সিলেটে বিএনপির বিশাল শোডাউন সিলেট নগরীতে ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত রিকশা চলাচলে নতুন নির্দেশনা

হাকালুকি হাওরপাড়ের ‘পাখিবাড়ি’ যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণে বাঁধা

  • শনিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২১

আব্দুর রব, বড়লেখা ::

হাকালুকি হাওরপাড়ের হাল্লায় মৃত মনোহর আলী মাস্টারের বাড়িটি বছরজুড়ে অতিথি ও দেশি পাখির কলতানে মুখর থাকে। পাখির বিষ্ঠার কারণে নষ্ট হচ্ছে ঘরের টিন। সৃষ্টি হয় দুর্গন্ধময় পরিবেশের। এতে আর্থিক ক্ষতি হয় অনেক। দু’বছর পর পর পরিবর্তন করতে হয় ঘরের টিন।

তারপরও পরম মমতায় নিজেদের ক্ষতির কথা চিন্তা না করে পাখিদের সঙ্গে বসবাস বাড়ির মানুষের। পাখির প্রতি তাদের ভালোবাসা চলছে প্রায় ৪ যুগ ধরে। বছরজুড়ে পাখির উপস্থিতির কারণে বাড়িটি জাতীয়ভাবে ‘পাখিবাড়ি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

সরকারীভাবে টানানো হয়েছে পাখির অভয়াশ্রম লেখা সাইনবোর্ড। পাখির প্রতি ভালোবাসার কারণে বাড়ির মালিক পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়ির মালিকের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রভাবশালী প্রতিবেশির বাধায় জমি কিনেও পাখিবাড়িতে সরাসারি যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণ করতে পারছেন না বাড়ির মালিক মৃত মনোহর আলীর ছেলেরা।

পাখি বাড়ির অবস্থান বড়লেখা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পশ্চিমে তালিমপুর ইউপির হাল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া। বড়লেখার বিভিন্ন পর্যটন স্পটের পাশাপাশি বছরজুড়ে পাখির অভয়াশ্রম ‘পাখিবাড়িতে’ ভ্রমণ পিপাসু ও পাখি প্রেমীদের ভিড় লেগে থাকে। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে যান তারা পাখি দেখতে। স্থানীয় লোকজন জানন, শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে যখন ঝাঁকে ঝাঁকে আসে অতিথি পাখির দল, তখন হাওরের পাশাপাশি হাকালুকির হাল্লা গ্রামের মনোহর আলী মাস্টারের পতিত বাড়িটিও মুখর হয়ে ওঠে অতিথি পাখির কলকাকলিতে।

হাজার হাজার পাখির আগমনে পুরো এলাকা পাখির রাজ্যে পরিণত হয়। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিল-জলাশয় থেকে এসে আশ্রয় নেয় বাড়ির গাছ গাছালিতে। ভোর হলেই পুনরায় পাখিরা চলে যায় খাবারের সন্ধানে হাওরের বিভিন্ন বিল বাদাড়ে। তবে শুধু শীত মৌসুমে নয়, হাল্লা গ্রামের এই বাড়িটি বছর জুড়েই পাখির কলকাকলিতে মুখরিত। পাখিগুলো অন্য কোনো বাড়িতেও যায় না। এ বাড়িটি যেন তাদের শেকড়।

কিন্তু এ পাখি বাড়িতে সরাসরি প্রবেশের রাস্তা না থাকায় লোকজনকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার ঘুরে পাখি বাড়িতে প্রবেশ করতে হয়। পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এবার বাড়ির মালিক নিজ উদ্যোগে অধিক দামে জমি ক্রয় করে রাস্তা নির্মাণের মহৎ উদ্যোগ নেন। তবে এ মহৎ কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন প্রতিবেশী আব্দুল আজিজ, সেলিম উদ্দিন, মনসুর আহমদ । তারা নানা অজুহাতে রাস্তা নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির ভেতর থেকে পশ্চিম দিকে রাস্তা তৈরির জন্য মাটি ভরাটের কাজ চলছে। তবে পশ্চিম দিকে রাস্তার জায়গায় মাটির কাজ করাতে পারছেন না বাড়ির মালিক। প্রতিবেশী আব্দুল আজিজ, সেলিম উদ্দিন ও মনসুর আহমদ এতে বাধা দিচ্ছেন। ‘পাখিবাড়ি’র মালিক মৃত মনোহর আলী মাস্টারের বড় ছেলে আবু সালেহ আহমদ জানান, তারা ৬ ভাই ও ২ বোন।

পেশাগত কারণে ৩ ভাই প্রবাসে, ১ ভাই ব্যবসার সুবাদে সিলেটে এবং সর্বকনিষ্ট ভাই লেখাপড়ার জন্য ঢাকায় থাকেন। মাত্র ১ ভাই নিয়মিত বাড়িতে থাকেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকে তাদের বাড়ির গাছগাছালিতে অতিথি ও দেশি পাখি আশ্রয় নেয়া শুরু করে। তাদের বাবা-মা এসব পাখিদের দেখাশুনা করতেন।

সে ধারাবাহিকতায় ক্ষয়ক্ষতি স্বত্ত্বেও তারাও পাখিদের ভালবেসে যাচ্ছেন। ভোরবেলা ও সন্ধ্যাবেলা লাখ লাখ পাখির কলকাকলির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পাখিপ্রেমীরা তাদের বাড়িতে ভিড় জমান। কয়েকজন প্রতিবেশি সরাসারি যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় আগত পর্যটক ও তাদেরকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার বিল-বাদাড় ঘুরে পাখি বাড়িতে প্রবেশ করতে নানা দুর্ভোগ পোয়াতে হয়।

পর্যটকদের সরাসরি পাখি বাড়িতে প্রবেশ ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে পাখিদের উড়াউড়ির মনোমুগ্ধকর দুশ্য উপভোগের জন্য ২০১৬ সালে তিনি বহুগুন বেশি মূল্য দিয়ে প্রায় আড়াই শতাংশ জমি ক্রয় করেন। এবার রাস্তার কাজ শুরু করলে বাধা দেন প্রতিবেশি আব্দুল আজিজ গংরা। এজন্য তিনি গত ৫ জানুুয়ারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। এব্যাপারে তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।

এব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুল আজিজ, সেলিম উদ্দিন ও মনসুর আহমদ জানান, ‘পাখিবাড়ি’ প্রবেশ রাস্তা নির্মাণের জন্য মৃত মনোহর আলী মাস্টারের ছেলেদের ক্রয়কৃত ভুমির অবস্থান সঠিক নয়, এজন্য তারা রাস্তা নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, হাকালুকি হাওরপাড়ের হাল্লা গ্রামের পাখিবাড়িতে সরাসরি যাতায়াতের সুবিধার্থে রাস্তা নির্মাণের জন্য ক্রয়কৃত ভুমিতে কাজে বাধা দেয়ার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। সরেজমিনে তদন্ত করে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।#

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews