আজিজুল ইসলাম, হাকালুকি হাওর থেকে ফিরে ::
প্রতিদিন রাতে বৃষ্টি হয়, পাহাড়ী ঢলে একদিনেই তলিয়ে যেতে পারে পুরো হাওরের বোরো ধান। এমন উদ্বেগ উৎকন্ঠার সাথে রোযা ও করোনা। এমন প্রতিকুলতাকে মোকাবেলা করেই এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি পাড়ে চলছে উৎসবমূখর পরিবেশে বোরা ধান কাটা। তবে ধান কাটা শ্রমিকের সঙ্কটের পাশাপাশি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বেশি হওয়ায় হতাশ কৃষকরা।

হাওর তীরের সবক’টি উপজেলায় পাগাড়ী ঢল থেকে রক্ষায় আগাম ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। হাওর তীরের বড়লেখা উপজেলায় ১৯ এপ্রিল সোমবার উপজেলা কৃষি অফিস বোরো ধান কাটার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে কৃষকদের এই পরামর্শ দেয়।

সরেজমিন হাকালুকি হাওরের ধলিয়া বিল কুলাউড়া উপজেলা অংশ ভুকশিমইল ইউনিয়নের সাদিপুর, মীরশঙ্কর, গৌড়করণ এলাকায় গেলে, ধান কাটা, ধান মাড়াই, ধান শুকানোসহ বোরো ধান নিয়ে কুষকদের ব্যস্ত সময় পার থেকে দেখা যায়। রমযান মাস হওয়ায় কৃষক নিজে ধান কাটতে পারলে সেই ধান জমি থেকে মাড়াই করার স্থানে আনতে শ্রমিক ব্যবহার করতে হয়।
সাদিপুর গ্রামের কৃষক ফারুক মিয়া (৭০) জানান, ৮ কিয়ার (বিঘা) জমিতে বোরোধান রোপন করেছেন। রোযার কারণে ও বয়সের ভারে তিনি নিজে ধান কাটতে পারছেন না। ৫ জন ধান কাটা শ্রমিক লাগিয়েছেন। কিন্তু এরা প্রতিদিন আধা বিঘা জমির ধান কাটতে পারে না। অথচ ৩ বেলা খাবার দিয়েও তাদেরকে দিতে হয় রোজ (প্রতিদিন) ৫০০ টাকা হারে। ফলে ৫ শ্রমিকে প্রতিদিন খাবারসহ খরচ কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা। তারা ২ দিনে একবিঘা জমির ধান কাটলে বিঘা প্রতি খরচ হচ্ছে ৬ হাজার টাকা। এরপর ধান মাড়াইসহ অন্যান্য খরচ। এই ধানের উপর নির্ভরশীল তাদের ৬ জনের পরিবার। এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও প্রতিমন ধানে খরচ প্রায় হাজার টাকা। অথচ হাওরে ধান বিক্রি করলে প্রতিমন ধান ৪ থেকে ৫শত টাকার বেশি বিক্রি করা সম্ভব নয়।
কৃষক সালাউদ্দিন ২২ বিঘা জমিতে, জমসেদ আলী ১২ বিঘা, আব্দুস সালাম ৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। তারা জানান, এবার চৈত্র মাস থেকে বৃষ্টিপাত হওয়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ থেকে ধান কাটা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তবে ধান শ্রমিক খরচ বেশি হওয়ায় তারাও হতাশ। তাছাড়া করোনার কারণে শহরে গিয়ে সময়মতো তেল আনা সম্ভব নয় এই অযুহাতে মাড়াই মেশিনেও খরচ দিতে হয় বেশি। পহেলা বৈশাখ থেকে প্রায় প্রতিদিন রাতে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে যেকোন সময় পাহাড়ী ঢলে বোরো ধান তলিয়ে যাওয়া আশঙ্কা রয়েছে। ফলে কৃষকরাও রয়েছেন উদ্বেগ উৎকন্ঠায়।
উপজেলা কুষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এবার হাওরে বিআর-১৪,বিআর-২৮, বি-২৯,বি-৫৫, বি-৫৮, বি-৬৫, বি-৭৪, বি-৬৯, বি-৬৭, বি-৭৯, বি-৮৪, বি-৮৮, বি-৮৯, বি-৬৩ সহ মোট ১৭ জাতের ধান রোপন করেছেন কৃষকরা। এছাড়াও ৫ জাতের হাইব্রীড ময়না, এসএলএইচ, টিয়া, হিরা-২, রুপালী বোরো ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। সকল জাতের ধানেরই বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মুমিন জানান, হাকালুকি হাওরের কুলাউড়া উপজেলা অংশের ৬ টি ইউনিয়নে মোট ০৭ হাজার ৯১২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। যা কৃষকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। রমজান মাস থাকায় বোরো ধান কাটতে শ্রমিক সংকট যাতে না হয় তারজন্য চা বাগানের শ্রমিকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কৃষিবিভাগ কৃষকদের ধান কাটা শ্রমিক দেয়ার পাশাপাশি ধান কাটা ও মাড়াই দিতে কৃষকদের ৫টি (কম্বাইন্ড হারবেস্টার) মেশিন দেয়া হবে। একেকটি মেশিন ঘন্টায় এক একর জমির ধান কাটতে পারে। ফলে কৃষকরা কম খরচে ও তুলনামুলক কম সময়ে বেশি ধান কাটতে পারবে।
কুলাউড়া উপজেলা ছাড়াও এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর তীরের মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় বোরো ধান আবাদ করা হয়। কৃষি অফিসের তথ্য মতে কেবল হাওরে ২৫ থেকে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়ে থাকে। হাওরে মাছের পরে ধানই হচ্ছে মানুষের জীবিকায়নের অন্যতম মাধ্যম। আগাম পাহাড়ী ঢলে ক্ষতি না হলে বোরো ধান মানুষের সারা বছরের খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করে।#
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply