সৈয়দ আমিরুজ্জামান, বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা :: মৌলবাদীদের তোয়াজ করে রেহাই পাবেন না। সুযোগ পেলেই ওরাছোবল মারবে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মিশর, তুরস্ক তার জ্বলন্ত উদাহরণ। সেসব দেশের শাসকগোষ্ঠী মৌলবাদকে তোয়াজ করেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে নি। এদেশেও পারবেন না।”-বললেন বরেণ্য আলোচকবৃন্দ।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী ও যুবমৈত্রী কর্তৃক আয়োজিত‘মৌলবাদীদের চাপের মুখে পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাহার : শিক্ষাক্ষেত্রে অশনি সংকেত’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় প্রধান আলোচক হিসেবে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, “ধর্মান্ধদের কাছে সরকার কিভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে, পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাহার সহ আরো নানা বিষয় তার প্রমাণ।”
তিনি বলেন,“বাংলাদেশ তো পাকিস্তান হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধকেও আমরা মনে রাখার প্রয়োজনীয়তা মনে করি না। তা নাহলে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে এসব হয় কিভাবে!
অনুষ্ঠানে যুবমৈত্রীর সভাপতি তৌহিদুর রহমান তৌহিদের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, সমকালের সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তপন, যুবজোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন, যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, যুব মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক তাপস দাস, জাসদ ছাত্র লীগের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম ননী।
মূলপত্র উপস্থাপন করেন ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক অদিতি আদৃতা সৃষ্টি। সঞ্চালনা করেন ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি অতুলন দাস আলো।
জামায়াতের দরকার নেই, আ’লীগই শরিয়াহ আইন করে ফেলবে : শাহরিয়ার কবির
জামায়াতে ইসলামীর ক্ষমতায় যাওয়ার দরকার নেই। আগামীতে আওয়ামী লীগই দেশে শরিয়াহ আইন করে ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
তিনি বলেন, ‘যেভাবে আমরা এগোচ্ছি, এটা যদি অব্যাহত থাকে জামায়াতে ইসলামীর ক্ষমতায় যাওয়ার দরকার নেই, আগামীতে আওয়ামী লীগই দেশে শরিয়াহ আইন করে ফেলবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে অনেক কথা ছিল। সেগুলোর কি বাস্তবায়ন হয়েছে? হয়নি…। সেজন্য আমাদের উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যে রাস্তায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা সেটা অনুমান করতে পারি।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘ইতিহাস শিক্ষা দেয় যে, মৌলবাদের সঙ্গে যারাই আপস করেছে, তারাই নিজেদের পতন ডেকে এনেছে। মিশরে নাছের ইসলামী ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করেছিলেন, আনোয়ার সাদাত এসে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেন। তারাই আনোয়ার সাদাতকে হত্যা করলো। পাকিস্তানে জিয়াউল হক শরিয়াহ আইন তৈরি করেছিলেন। তিনিও বাঁচতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘মোল্লারা যেখানেই ক্ষমতায় বসেছে, ক্ষমতার সুযোগ পেয়েছে, সেখানেই তারা সবার আগে ইতিহাস চর্চা বন্ধ করে দিয়েছে। যতই ভোটের ইক্যুয়েশন করেন না কেন, তোয়াজ করে মৌলবাদীদের সঙ্গে সুফল পাওয়া যাবে না।’
খেলাফত মজলিসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পাঁচ দফা চুক্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আমরা সুধাসদন ঘেরাও করেছিলাম, স্মারকপত্র দিয়েছিলাম। তাতে পরিষ্কারভাবে বলেছিলাম, আপনি (শেখ হাসিনা) যদি আপনার বুকের রক্ত দিয়ে লিখে দেন যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ইসলামি হুকুম কায়েম করবো, ইসলামি শরিয়া আইন থেকে শুরু করে যা কিছু সব চালু করবো, তারপরও মোল্লারা কখনও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে কেন হত্যা করা হলো? এটা তো ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার বিষয় নয়। তিনি সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। পাকিস্তানের যে দর্শন, তা বাংলাদেশের মাটিতে কবর দিয়েছিলেন সাংবিধানিকভাবে। সেই কারণেই একাত্তরের পরাজিত শক্তি তাকে হত্যা করেছিল।’
Leave a Reply