নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি:: বর্ষাকাল প্রায় শেষের পথে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে ক্রমেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে। মাঝে মাঝে আকাশটা কালো মেঘে ঢেকে গেলেও ভরা বর্ষা মৌসুমেও মুষলধারে কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। আবার বৃষ্টি হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। ফলে উত্তর জনপদের শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে খাল-বিলে পানি না থাকায় পাট চাষিরা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। মাঠ থেকে পাট কেটে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ দিয়ে এসব পাট নদীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জাগ দেয়ার জন্য। ফলে পাটচাষিদের বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত খাল-বিলে পানি জমতে শুরু করেনি। পাট পরিপক্ব হয়েছে। পানির অভাবে নিরুপায় হয়ে কিছু সংখ্যক কৃষক ডোবা-নালা ও পাটের কিছু জমিতে গর্ত করে শ্যালো মেশিনে পানি দিয়ে পাট জাগ দিতে শুরু করেছে। ফলে বাড়তি খরচ হওয়ায় লাভের তুলনায় ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা।
এরই মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে নতুন পাট। দামও বেশ ভালো। এ অঞ্চলের খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। প্রকৃতির এমন বিরূপ আচরণে এ অঞ্চলের পাট চাষিদের এখন কপালে চিন্তার ভাঁজ। তবে কৃষি অফিস বলছে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে সমস্যা কেটে যাবে।
জানা যায়, এবারে আত্রাই উপজেলার ৮ ইউনিয়নে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আষাঢ় শ্রাবণ মাসে এসব পাট কেটে পানিতে জাগ দেয়া হয়। এ সময়টা ভরা বর্ষা মৌসুম হওয়ায় খাল-বিল পানিতে থৈ থৈ করে। আর পাট চাষিরাও এসব পানিতে পাট জাগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এবারে ভরা বর্ষা মৌসুমেও খাল-বিল পানি শূন্য হয়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে অনাবৃষ্টি, উজান থেকে নেমে আসছেনা পানির ঢল। এ জন্য নদীর পানিও পড়ে রয়েছে নদীর তলায়। যে সময় থাকার কথা নদীতে উত্তাল তরঙ্গমালা। নদীর পানি প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করবে খাল-বিলে। আর থৈ থৈ করবে মাঠের পর মাঠ। সে সময় নদীর পানি নদীর তলায় ও খাল-বিল পানি শূন্য। ফলে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
এদিকে, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চাষিদের আগ্রহ বাড়াতে প্রণোদনা দেওয়াসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। যেখানে পানির অভাব সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আজাদ প্রামানিক বলেন, এবারে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে আমরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। পানি না থাকায় এ পাট আমাদের জন্য একটি বোঝা হয়ে পড়েছে।
রামপুর গ্রামের মহাতাব হোসেন বলেন, প্রতি বছর এ সময়মাঠ ভর্তি পানি থাকে। আর আমরা সে পানিতেই পাট জাগ দিয়ে অনায়াসে পাট পচাচ্ছিলাম। কিন্তু এবারে মাঠে পানি না থাকায় পাট কেটে অতিরিক্ত শ্রমিক মজুরি দিয়ে এ পাট বহন করে নদীতে আনতে হচ্ছে। এতে করে আমাদের দ্বিগুণ অর্থ খরচ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার তাপস কুমার রায় বলেন, ভরা বর্ষা মৌসুমে খাল বিলে পানি না থাকায় কৃষকদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। তবে আমরা কৃষকদের পাটখড়ি থেকে পাট ছড়ানো জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। তারা এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে পাট জাগ দেওয়ার জন্য পানির প্রয়োজন হবে না। #
Leave a Reply