নিজস্ব প্রতিনিধি :: সাভারের নয়ারহাটে অবস্থিত জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (নিটার), ১৩.৬ একরের এই ক্যাম্পাস আয়তনের দিক থেকে ছোট হলেও রয়েছে ১৫টির ও অধিক সক্রিয় ক্লাব। একেকটা ক্লাবের কার্যবিধি একেক ধরনের, নিটার গেইমস এন্ড স্পোর্টস ক্লাব সারাবছর ব্যাপী কাজ করে বিভিন্ন ধরনের ইনডোর ও আউটডোর গেইমস আয়োজনের, নিটার কালচারাল ক্লাব কাজ করে যায় নানা ধরনের সাংস্কৃতিক চর্চার, নিটার ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজন করে বিতর্ক প্রতিযোগিতার, নিটার কম্পিউটার ক্লাব কাজ করে এপ ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং কম্পিটিশন ইত্যাদি নিয়ে।
তবে, নিটারের বর্তমান ক্লাবগুলোর সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে জানা যায় তাদের নানা সীমাবদ্ধতার কথা, তাদের ভাষ্যমতে একটা ক্লাব নিটার প্রশাসন থেকে যতোটুকু সহযোগিতা প্রত্যাশা করে সেটি তারা পায় না, ফলে একেক সময় একেক ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। ক্লাবগুলোর সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্লাবগুলো পরিচালনা ও কোনো প্রোগ্রাম আয়োজনের জন্য যতটুকু অর্থ প্রয়োজন হয় সেই অর্থের পুরোটা নিটার প্রশাসন থেকে দেওয়া হয় না, এছাড়া কোনো প্রোগ্রাম আয়োজনের তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে চরম বেগ পোহাতে হয়।
নিটার গেইমস এন্ড স্পোর্টস ক্লাব (এনজিএসসি) এর বর্তমান সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ছয় মাসে নিটার প্রশাসনের কাছ থেকে তারা এক টাকা (০১) ও সহায়তা পায়নি অথচ “এনজিএসসি” নিটারের সবচেয়ে সক্রিয় ক্লাবগুলোর একটি যেটি কিনা সারাবছর ই ছোট বড় ইনডোর ও আউটডোর গেইমস এর আয়োজন করে থাকে৷ এইসকল খেলাধুলাতে যেসকল ক্রীড়া সামগ্রী প্রয়োজন পড়ে সেগুলো ও শিক্ষার্থীদের অর্থে ই কিনা। খেলাধুলা একজন শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে সেহেতু এই খেলাধুলা আয়োজনে সংশ্লিষ্টদের থেকে নিটার প্রশাসনের মুখ ফিরিয়ে নেওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না ক্লাব-সংশ্লিষ্টরা৷ এছাড়া, মাঠ পরিচর্যা তথা ক্রিকেট পিচ ঠিক করতে গেলে “শোকজের” হুমকি পাবার অভিজ্ঞতার কথাও জানান ক্লাবটির এক সদস্য।
অন্যদিকে, গত ৪ জুন হওয়া নিটার কম্পিউটার ক্লাবের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের জন্য নিটার প্রশাসন প্রথম লিখিতভাবে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল ৩রা মে,২০২৪ ইং তারিখের জন্য কিন্তু নিটার প্রশাসন থেকে বাজেটের টাকা না দেওয়ায় সেদিন প্রোগ্রামের আয়োজন করা সম্ভব হয় না, পরবর্তীতে ৭ মে তারিখের জন্য আবার অনুমতি নেওয়া হয় এবং বাজেট পাওয়ার পর সে অনুযায়ী ৭ মে কে কেন্দ্র করে ক্লাবটির সংশ্লিষ্টরা পুরো ক্যাম্পাসে পোস্টার লাগিয়ে ফেলে প্রোগ্রামটির প্রচারনার জন্য কিন্তু ৬ মে অর্থাৎ প্রোগ্রামের আগের দিন নিটার প্রশাসন থেকে তাদের জানানো হয় আগামীকাল তারা প্রোগ্রামটি করতে পারবে না এবং আলোচনা করে পরবর্তী তারিখ দেওয়া হয় ২১ মে কিন্তু এটিও পরবর্তীতে পরিবর্তন হয়ে অবশেষে ৪ জুন ক্লাবটির ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়।
নিটার প্রশাসনের এরূপ সিদ্ধান্তের জন্য ক্লাবটির একদিক থেকে যেমন আর্থিক ক্ষতি হয়েছে অপরদিকে নতুন সদস্যদের নিকট ক্লাবটির ইমেজ নষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন ক্লাব-সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও তাদের দাবি এই প্রোগ্রামের জন্য বিস্তারিত খরচ বিবরণ উল্লেখ করে যেই অর্থ দাবি করা হয়েছিল নিটার প্রশাসনের নিকট সেই অর্থের পুরোটা দেওয়া হয়নি ক্লাবটিকে।
আবার, দ্বাদশ ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় আরেক ঘটনার কথা, দ্বাদশ ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী মিলে একটি “ভোজন সভার” আয়োজন করার উদ্দেশ্যে লিখিত অনুমতি নেওয়ার উদ্দেশ্যে এপ্লিকেশন দেয় এবং ভোজন সভার আয়োজনটি ক্যান্টিন এরিয়ার ব্যতীত অন্য কোনো জায়গায় করা হলে আয়োজক কমিটিকে শাস্তির আওতায় আনা হবে এই শর্তানুসারে অনুমতি প্রদান করা হয়। এবং প্রোগ্রামটিতে কোনো প্রকার সাউন্ড বক্স ব্যবহারে ও হইচই করতে নিষেধ করা হয়। সবকিছু মেনে নিটার কর্তৃপক্ষকে অবগত করে ৮ জুন তারিখের জন্য বাবুর্চি, ডেকারেটর সবকিছু ভাড়া করা হয়। ৮ জুন সকল জিনিসপত্র কেনাকাটা করা শেষ হলে আনুমানিক দুপুর ১২ টার দিকে হঠাৎ নিটার কর্তৃপক্ষ ফোন করে আয়োজকদের জানায় আপনারা আজ প্রোগ্রামটা করতে পারবেন না। এমনকি পরের দিন অর্থাৎ ৯ জুন ও প্রোগ্রামটি না করার জন্য বলা হয়, কিন্তু কাঁচা-বাজার গুলো নষ্ট হয়ে যাবে বলে অনেক অনুরোধ করে সেদিনের জন্য রাজি করায় “ভোজন সভা” টির আয়োজকরা। অতঃপর ৯ জুন বেলা ২ টার দিকে ডেকারেটর থেকে জিনিসপত্র অটোরিকশায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে শুরুতে নিটারের পকেট গেইটে সেটি আটকে দেওয়া হয় পরবর্তী অফিসার ইনচার্জ নিটার কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সেগুলো ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দেন এখানে বাবুর্চিসহ ডেকারেটরের মালামাল প্রায় আধঘন্টা আটকে রাখা হয় এতে বাবুর্চি বিরক্তি প্রকাশ করে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, এতো ছোট একটা প্রোগ্রাম আয়োজনে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হলে সেটি খুবই দুঃখজনক।
শিক্ষার্থীদের দ্বারা আয়োজিত নিটারের সবচেয়ে বড় আয়োজন “হলফেস্ট”; এটির সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন কিছু হতাশার কথা। দেওয়া হয় না কাঙ্ক্ষিত বাজেট, তারিখ নির্ধারণে ও ভালো বেগ পোহাতে হয়। তাছাড়া বেঁধে দেওয়া হয় প্রোগ্রামের সময়সূচি, হলফেস্টের মতো একটা প্রোগ্রাম ধরাবাঁধা নির্দিষ্ট সময়সূচির মধ্যে সমাপ্ত করাটা কখনোই সম্ভব না বলে মনে করেন আয়োজকেরা। এছাড়া, নিটারে পূর্বে শিক্ষার্থী কর্তৃক “নবীন বরণ” নামে একটা প্রোগ্রামের আয়োজন হতো; একাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রায় তিনমাস অনুমতির জন্য বারবার গেলে অবশেষে একটি তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয় কিন্তু কোনো এক অজানা কারনে প্রোগ্রামের দুইদিন আগে নিটার কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জানায় আপনারা প্রোগ্রামটি করতে পারবেন না।
সর্বোপরি, নিটারের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করেন নিটার কর্তৃপক্ষকে এবিষয়টির ব্যাপারে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন, একটা তারিখ নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী প্রোগ্রাম আয়োজনের পর যখন জানানো হয় সেই তারিখে প্রোগ্রামটি করতে পারবে না সেটি যেমন হতাশার একই সাথে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।##
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply