এইবেলা, কুলাউড়া :: মৌলভীবাজার ০২ কুলাউড়া আসনটি আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের সেই ভোট ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে নিতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত। সকল রাজনৈতিক দলের আগেই জামায়াতে ইসলামী এই আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে। চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে, সনাতন ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় এবং সর্বশেষ দুর্গোৎসবে তাদের এই তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়।
মৌলভীবাজার ০২ কুলাউড়া আসনে আওয়ামী লীগের রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক। ২৭টি চা বাগান এবং বিশাল সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের বসবাস এই উপজেলায়। ২ লাখ ২০ হাজার ১১৪ ভোটারের মধ্যে চা শ্রমিক ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভোট ৬০ হাজারেরও বেশি। বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ একদলীয় নির্বাচনসহ মাত্র ২বার বিজয়ী হয়েছে তাদের দলীয় প্রার্থী। আর সেগুলো হলো ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো: মনসুর আহমেদ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার পাতানো নির্বাচনে দলের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বিজয়ী হন। তাছাড়া বাকি ৮টি নির্বাচনে এন্ট্রি আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে। তারপরও এই আসনকে আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী ঘাটি বলা হয়।
আওয়ামী লীগের এই দূর্গ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে বিগদ ৫ আগস্টের পর সর্বপ্রথম এই আসনে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে। মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমীর কুলাউড়া উপজেলার বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার মো: সায়েদ আলীকে এমপি প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়। যদি মাঝে কিছুদিন এলাকায় ঘন ঘন সমাবেশ করায় জামায়াতের কেন্দ্রিয় আমির ডা: সফিকুর রহমানের নাম শুনা যাচ্ছিল এলাকার মানুষের মধ্যে। তিনিও কুলাউড়ার কৃতি সন্তান। তাকে নিয়ে মানুষের মাঝে অবশ্য ব্যাপক উচ্ছ্বাস ছিলো। অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আবারও দৃশ্যপট থেকে আড়ালে গেছে তার নাম। কেন্দ্রিয় আমীর প্রার্থী না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মো: জাকির হোসেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের দূর্গে হানা দিতে গত ০৫ আগস্টের পরে সনাতন দর্মাবলম্বী বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে, চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে, শারদীয় দূর্গোৎসবে বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শণ, পূজা শেষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে মতবিনিময় অব্যাহত রেখেছেন জামায়াত নেতৃবৃন্দ এবং তাদের দলীয় প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মো: সায়েদ আলী।
আওয়ামী লীগের ভোটে ফাটল ধরানোর প্রশ্নে উপজেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মো: জাকির হোসেন জানান, তাদের রয়েছে একটা বিশাল ভোট ব্যাংক। তবে আমাদের চেয়ে তারাই বেশি আগ্রহী। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বলেছে, তারা বিগত দিনে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিলো। তারা সেই বৃত্ত থেকে বেরুতে চায়। তাদের আগ্রহের কারণে জামায়াতে ইসলামী এসব মতবিনিময় সভা করছে। পক্ষান্তরে তাদের কাছ থেকেও ব্যাপক সাড়া মিলছে।
এব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মো: সায়েদ আলী জানান, সিলেটে বিভাগের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা এবং কুলাউড়া উপজেলা সবথেকে বেশি উন্নয়ন বঞ্চিত। আজ পর্যন্ত কুলাউড়ায় একটি টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপিত হয়নি। তিনি বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন যাতে কুলাউড়ার আগামী প্রজন্ম কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেকে এবং দেশকে সমৃদ্ধ করে। এরপর চিকিৎসা ক্ষেত্রে বেহাল দশা। কুলাউড়া হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়ালে সুযোগ সুবিধাও বাড়বে। তাতে সাধারণ মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে। চা নামক শিল্প প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই শিল্পকে রক্ষায় কাজ করবেন। তাছাড়া এই কুলাউড়ায় এশিয়ার বৃহৎ হাওড় ও মিঠা পানির সৎস্য প্রজনন কেন্দ্র। এটিও উন্নয়ন বঞ্চিত। অথচ এই হাওড়ের মাছ সারাদেশ এমনকি বিদেশে রপ্তানী হয়। এই হাওড়ের উন্নয়ন হলে পর্যটন শিল্পসহ দেশের অর্থনীতি বেগবান হবে।
আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকে হানা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কেন্দ্রিয় জামায়াতের আমির বলেছেন, বিগত দিনে এদেশের অন্যান্য জাতি ধর্মের লোকজনকে ক্ষমতার সিড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশটা গড়ার জন্য প্রতিটি ধর্ম বর্ণের মানুষের প্রয়োজন। সেই হিসেবে হিন্দু কিংবা চা শ্রমিক কাউকে আমরা ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছি না। সবার সাথেই যোগাযোগ রক্ষা করে নির্বাচনী কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।##
since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in
Leave a Reply