নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি ::
সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা আগামী ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে। পূজার সময় ঘনিয়ে আসায় শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার প্রতিমাশিল্পীরা।
শিল্পীদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় ইতোমধ্যে মাটির কাজ শেষ করে চলছে রঙ তুলির কাজ। শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে দশভূজা দেবীদুর্গাসহ বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমূর্তী। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেবীদুর্গা শক্তি ও সুন্দরের প্রতীক। প্রতি বছর অশ্বরের বিনাশ কল্পে মা দেবী দূর্গা এই ধরাধামে আবির্ভুত হয়। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার গ্লানি দূর করার জন্যই এই পূজার আয়োজন।
এবছর উপজেলায় ৪৯টি মন্ডপে পুজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সত্যেন চক্রবর্তী ।
পুজা উৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে মন্দির গুলোতে চলছে সাজসজ্জার প্রস্তুতি। ইতি মধ্যে খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে দুর্গাসহ নানা প্রতিমার কাঠামো তৈরী শেষে এখন চলছে প্রতিমায় রং দেয়ার কাজ। শিল্পী নিপুণ হাতে রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশসহ নানা প্রতিমা। পুরুষদের পাশাপাশি প্রতিমা তৈরীর কাজে সহায়তা করছে বাড়ির নারী শিল্পীরাও। তবে প্রতিমা তৈরীর উপকরণের দাম বাড়লেও বাড়েনি প্রতিমার দাম।
আগামী ১১-১৫ অক্টোবর ৫ দিন ব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পুজা অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিল্পীরা এখানে এসে প্রতিমা তৈরি ও রং তুলির কাজ করছেন। অন্যদিকে প্রতিমার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ঠিক ও তৈরী করতে ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাক-ঢোল, কাঁশি ও বাঁশির কারিগররা। বৈশ্বিক করোনা মহামারি অনেকটা কম থাকায় মাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সকল সনাতন ধর্মালম্বীরা।
প্রতিমা শিল্পী যুগোল কুমার জানান, দু’এক দিনের মধ্যে শুরু হবে রং তুলির আঁচড়। প্রতিমাগুলো মনোমুগ্ধকর ও নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি । আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে সকল প্রতিমা তৈরীর কাজ। তিনি আরো বলেন, প্রতিমা তৈরীর উপকরণের দাম বাড়লেও ক্রেতারা প্রতিমার দাম বলছেন কম। বাধ্য হয়ে প্রতিমা বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে খুব একটা লাভের মুখ দেখছি না।
উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক বরুন কুমার সরকার জানান, এ বছর উপজেলায় ৪৯টি পূজাম-পে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। উৎসবমুখর করতে পূজাম-পগুলোতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। সরকারি ও পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপন করা হবে।
পুজাকে সামনে রেখে সম্ভবনার কথা জানালেন আত্রাই থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ, সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ন ভাবে সম্পুন্ন করার লক্ষে আইন শৃংখলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তিন স্থরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে এবং থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) দের বিভিন্ন মন্ডপের দায়িত্ব দিয়ে নিয়মিত টহল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করি এবারের পূজায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবেনা। তবে এ জন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বৈশিক করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারনে গত বছরের তুলনায় এবারের পুজা সরকারী নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে মনে করছি।
এবছর দেবী দুর্গা আসছেন ঘোড়ায় চড়ে যাবেন দোলায় চড়ে। দেবীর আগমনে বিশ্ব হবে শান্তিময়, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে উদয় হবে শুভ শক্তির এমনটাই প্রত্যাশা সনাতন ধর্মালম্বীদের। #
Leave a Reply