জুড়ীর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সহিদ চৌধুরী খুশির না পাওয়ার হতাশা – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
একদল অপকর্ম করে পালিয়েছে, আরেকদল সেই অপকর্মের দায় কাঁধে তুলে নিয়েছে : শফিকুর রহমান আধ্যাত্মিক, মানবিক দর্শন ও লোক ক‌বি সাধক হাসন রাজার মৃত্যুবার্ষিকী আজ আজ বড়লেখা মুক্ত দিবস : মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আলোচনা সভা প্রয়াত ডা. পবন চন্দ্র দেবনাথের ছোট ভাই ব্রজেন্দ্র দেবনাথ আর নেই কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্প পরিদর্শনে রেলওয়ে সচিব- সম্পন্নের ডেডলাইনেও বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় বড়লেখায় খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় নফল রোজা শেষে ইফতার ও দোয়া মাহফিল কুলাউড়ায় আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ করে কৃষকদের জমিতে ফসল রোপণের অভিযোগ ছাতকের ইউএনও’কে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান ফুলবাড়ীতে বিজিবি’র অভিযানে মাদকদ্রব্য ও ভারতীয় শাড়ি উদ্ধার সহকারি শিক্ষকদের সাটডাউন- বড়লেখায় কক্ষের তালা ভেঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ালেন অভিভাবকরা

জুড়ীর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সহিদ চৌধুরী খুশির না পাওয়ার হতাশা

  • বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১

Manual6 Ad Code

আজিজুল ইসলাম ::

Manual6 Ad Code

শতভাগ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সহিদ চৌধুরী খুশি। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যিনি পাক হানাদার বাহিনীর চলাচলের পথে বিছিয়ে রাখতেন বিধ্বংসী মাইন। সেই মাইন পুততে গিয়ে তিনি হারিয়েছেন দুটি হাত ও দুটি চোখ। সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলা সদরের ভবানীপুরের নিজবাসায় মুক্তিযুদ্ধের সেইসব স্মৃতির বিবরণ দেন।

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সহিদ চৌধুরী খুশি জানান, ১৯৬৯ সালে তিনি জুড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অংশ নেয়ায় ও সক্রিয় রাজনীতি করার কারণে দশম শ্রেণিতে তাকে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দেননি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারপরও অনিয়মিতভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নেন। ১৯৭১ সালে ৪ এপ্রিল ছিলো মাধ্যমিক পরীক্ষা। কিন্তু যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার কারণে আর পরীক্ষা দেয়া হয়নি। ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পর অহিংসু অসহযোগ আন্দোলনের প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই এপ্রিল মাসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে মৌলভীবাজারে সমবেত হন। তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেজর সি.আর দত্ত ও কমান্ডেট মানিক চৌধুরী। তাদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রহ ও যুদ্ধক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেন। প্রশিক্ষণে যাওয়ার পূর্বে জুড়ী অঞ্চলের ইপিআর মোজাহিদ ও আনসারগণকে একত্রিত করে মৌলভীবাজার মেজর সি.আর দত্তের নিকট পৌঁছে দেন। মৌলভীবাজার অবস্থানকালে কমান্ডেট মানিক চৌধুরীর চিঠি নিয়ে ভারতের বিএসএফ হেডকোয়ার্টারে পৌঁছে দেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জুড়ীতে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য তৈমুছ আলী।

এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে শ্রীমঙ্গল চা বাগানে বিএসএফের অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে তাদের ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আশ্রম বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুদিন প্রশিক্ষণ দেয়ার পর মে মাসের শেষ দিকে আসাম রাজ্যের শীলচরের ইন্দ্রনগরে সেনাবাহিনীর অধীনে প্রশিক্ষণ শুরু করেন। ১নং ক্যাম্পের কমান্ডার ছিলেন মাহবুবুর রব চৌধুরী (সাদী), ভারতীয় অফিসার কর্নেল বাগচীর অধীনে প্রশিক্ষণকালে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনালেল এমএজি ওসমানী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। প্রশিক্ষণ শেষে আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ এলাকার ১২ পুঞ্জি ক্যাম্পে অবস্থান করেন। সেখানে ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন এমএ রব। আর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর সি.আর দত্ত। সেক্টর নম্বর ছিলো ৪ এবং সাব সেক্টর নম্বরও ছিলো ৪।

Manual3 Ad Code

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সহিদ চৌধুরী খুশির দলের দায়িত্ব ছিলো শত্রুর (পাক বাহিনীর) চলাফেরার রাস্তা মাইন পুতে রাখা। এই দলটি জুলাই মাসের প্রথম দিকে জকিগঞ্জের রহিমপুর খালের উপর নির্মিত প্রায় দেড়শ ফুট সেতু, বিয়ানী বাজারের জলঢুপ সেতু, লান্দুয়া সেতু ধ্বংস করে। ১০ আগস্ট বড়লেখার শাহবাজপুর এলাকায় ভারতীয় সৈন্যের সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা বড় ধরনের অপারেশন পরিচালনা করে। ওইদিন রাত ৪টায় প্রচন্ড বৃষ্টির মধে মাইন পুতার সময় হঠাৎ একটি মাইন বিষ্ফোরিত হয়। এতে আব্দুস সহিদ চৌধুরী খুশির দুটি হাত ও দুটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। সহযোগি মুক্তিযোদ্ধারা তাকে করিমগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে গোহাটি সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে জেনারেল ওসমানী তাকে দেখতে যান। মহারাষ্ট্রের পূনা সামরিক হাসপাতালে হাত ও চোখের অপারেশন হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৩ সালে পোলান্ডে তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। দেশে শতভাগ যুদ্ধাহত ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে আব্দুস সহিদ চৌধুরী খুশি একজন।

২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত আবেদন করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাট ও দোকান বরাদ্ধের জন্য আবেদন উল্লেখ করেন। এরপর ১৪ নভেম্বর তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি কল্যাণ ট্রাস্টের সভায় চিঠি পেশ করার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি)কে নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই নির্দেশের আর কোন সুরাহা হয়নি।

Manual2 Ad Code

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সহিদ চোধুরী জানান, শতভাগ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফ্ল্যাট ও দোকান বরাদ্ধের জন্য আশ^াস দেয়া হয়। তিনি ছাড়া বাকি ৮জন শতভাগ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা তাদের বরাদ্ধ পেলেও শুধু তিনি রহস্যময় কারণে বাঁধ পড়েন। যদি মোহাম্মদপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সম্ভব না হলেও রাজউক ভবন থেকে অথবা অন্য কোথা থেকে হলেও একটি ফ্লাট ও একটি দোকান বরাদ্ধ দেয়ার দাবি জানান। সাহায্যকারী ছাড়া চলাচল সম্ভব হয়না বলে ঢাকায় গিয়ে তদবির করা সম্ভব হয় না। মানবিক দিক বিচার করে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর নিকট এই দাবি জানান।

Manual5 Ad Code

বর্তমানে শতভাগ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সহিদ চৌধুরী খুশির দিন কাটে সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে অংশগ্রহণ করে। স্ত্রী, একমাত্র ছেলে ও ৪ মেয়ে নিয়ে পারিবারিক জীবন। একজন সাহায্যকারী নিয়ে চলাফেরা করেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রয়েছে হতাশা। তিনি মনে করেন দেশে গণতন্ত্র আর দেশপ্রেমের বড় অভাব। আর দুর্নীতির না থাকলে আরও বেশি এগিয়ে যেত দেশ। মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয়নি রাজনৈতিক দৈনতার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হলে মুক্তিযুদ্ধের কলঙ্ক মোচন হবে বলে মনে করেন তিনি। আর তবেই স্বপ্নের সোনার বাংলার পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।#

সংবাদটি শেয়ার করুন


Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews

Follow for More!