হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ::
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজস্টি (ল্যাব টেকনিশিয়ান) সাইফুল ইসলামকে (২৮) কুপিয়ে হত্যা করেছে একদল দুর্বৃত্ত। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। অন্যথায় স্বাস্থ্য সেবা বন্ধের হুশিয়ারি দিয়েছে তারা।
এর আগে দুপুরে তাকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট প্রেরণ করা হয়। নিহত সাইফুল ইসলাম জলোর মাধবপুর উপজলোর মনতলা গ্রামরে নজরুল ইসলামের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর আধুনিক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মমিন উদ্দিন। তিনি জানান, সাইফুল ইসলাম গত বছর হবিগঞ্জ সদর আধুনকি হাসপাতালে যোগদান করেন। এটিই তার চাকরির প্রথম কর্মস্থল। তিনি খুবই ভালো এবং দায়িত্বশীল ছিলেন। এখানে যত করোনার সিম্পল কালেকশন হয়েছে তার অধিকাংশই তিনি করেছেন। তা অন্তত কয়েক হাজার হবে।
তিনি বলেন, শুনেছি আজ (মঙ্গলবার) সকালে করোনার সিম্পল কালেকশনে দেরি হওয়া নিয়ে কারও সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে দুপুরে দুর্বৃত্তরা মাথায় রক্তাক্ত জখম করে। মাথায় প্রচুর আঘাত করা হয়। বেলা দেড়টার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আশংকাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট প্রেরণ করা হলে সেখানে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।
তিনি আরও বলেন, সাইফুল মাথার আঘাতের কারণেই মারা গেছেন এটি অনেকটাই নিশ্চিত।
মেডিকেল টেকনোলজিস্ট বিভাগের প্রধান ইমতিয়াজ আহমেদ তুহিন জানান, শুনেছি কারও একজনের সঙ্গে সকালে স্যাম্পল কালেকশন নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ঝগড়া করার মতো লোক নন। এর জের ধরেই যে এত বড় ঘটনা ঘটে যাবে তা বলা দুষ্কর।
তিনি বলেন, এর জের ধরে দুপুরে টাউন হল রোডের খাজা গার্ডেন সিটির সামনে দুর্বৃত্তরা তাকে মারাত্মকভাবে জখম করে। এতে তিনি মারা যান।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে সদর আধুনিক হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সাইফুল ইসলামকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হবিগঞ্জ সদর মডলে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদ জানান, পুলশি ঘটনাস্থল পরর্দিশন করেছে। বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্য সেবা বন্ধের হুমকি–
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব টেকনিশিয়ান) সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। অন্যথায় সিলেট বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুশিয়ারি দেন তিনি।
বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে। এ মানববন্ধনে তিনি এই হুমকি দেন।
জেলা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের সেবা ব্যতীত সব ধরনের সেবা প্রদান বন্ধ রাখা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে তিনি বলেন, দিনদুপুরে প্রকাশ্যে শহরের প্রধান সড়কে মানুষের সামনে এমন ঘটনায় আমরা হতভম্ব। তাকে যারা এভাবে দিনদুপুরে মেরেছে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত বর্বরোচিত এবং অমানবিক। মাত্র দেড় বছর আগে তিনি চাকরিতে যোগদান করেছেন। এরকম একটি তরতাজা ছেলেকে হত্যা করেছে। যে কোভিডের সময় জেলাবাসীকে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছে। সহযোগিতা করেছে। এরকম একটি হত্যাকাণ্ডে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ক্ষোভ প্রকাশ করছি। অসন্তোষ প্রকাশ করছি। এখানে মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আজ এ কর্মসূচি থেকে করছি আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। এ সময় পর্যন্ত আমরা এ হাসপাতালে শুধু জরুরি সেবাগুলো চালু রাখব। যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরতে ব্যর্থ হন তবে পুরো সিলেট বিভাগে সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম আমরা বন্ধ করে দেব। কারণ আমরা দেখছি বাংলাদেশজুড়ে বারবার একই ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যকর্মীরা যদি নিরাপত্তা না পায় তবে জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য আমরা আর অপেক্ষা করব না।
স্বাস্থ্য বিভাগের আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেছেন জেলা বিএমএর সভাপতি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী।#
Leave a Reply