স্টাফ রিপোর্ট::
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের হাওরে থাকা কৃষকের ফলজ কাঁচা ধান তলিয়ে গেণ। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ওই বাঁধ ভেঙ্গে বোরো ফসলী হাওরের ক্রমশ নদী দিয়ে ধেয়ে আসা পানি ঢুকে কৃষকর ফলজ কাঁচা বোরো ধান তলিয়ে যায়। কৃষকদের অভিযোগ পাউবোর অপরিকল্পিত বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় দায়িত্বশীলদের উদাসীনতার কারনেই বৈশাখী ধান গোলায় তোলার পুর্বেই কয়েক’শ কৃষক পরিবারের কাঁচা ধান পানির নিচেই তালিয়ে গেল।
০২ এপ্রিল শনিবার বিকেলে তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: হাসানউদ্যোলা বলেন, নজরখালী ভাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলার উপকারভোগী কৃষক পরিবার গুলোর প্রায় ৭’শ থেকে সাড়ে’শ বিঘা জমির ফলজ বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৪২০ থেকে ৪৫০ মেট্রিক টন ফলজ বোরো ধান পানির নিচে তালিয়ে যাওয়ায় কৃষক পরিবার গুলোতে হতাশা দেখা দিয়েছে। এদিকে টাঙ্গুয়ার নজর খালী বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় আশে পাশে থাকা আরো কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকগণ।
শনিবার দুপুরে সরজমিনে গেলে সুনামগঞ্জর তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর তীরবর্তী উপকারভোগী কৃষকগণ বলেন, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) অর্থায়নে ২৪নং পিআইসি’র সভাপতি নান্টু সরকারের মাধ্যমে টাঙ্গুয়ার হাওরঘেষা নজরখালী বোরো ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ করা হয়। শুরু থেকেই পাউবো ও দায়িত্বশীলরা নানা অজুহাতে বাঁধের নির্মাণ কাজ সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে গ্রহন করেননি। পরবর্তীতে কৃষকদের দাবির মুখে থোক বরাদ্দ থেকে যৎসামান্য বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে দায়সারভাবে পিআইসি সভাপতির মাধ্যমে নজরখালী ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ করানো হলে বরাদ্দ অনুযায়ী বাঁেধর কাজ সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়নি। মুলত একারনেই নদী পথে ধেয়ে আসা উজানের পাহাড়ি ঢলের পানি উপচে ক্রমশ বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে থাকা কৃষককের কাঁচা ধান তলিয়ে গেছে।
শনিবার দুপুরে স্থানীয় উপকারভোগী কৃষকদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, নজরখালী ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় টাঙ্গুয়ার হাওরসহ আশপাশে থাকা গইন্যাকুড়ি, এ্যারালিকোনা, লামারগুল, টানেরগুল, মাঝেরগুল, নান্দিয়া সোনাডুবি,সামসাগর হাওরসহ একাধিক হাওরে কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ফসলী জমির কাঁচা ধান পানিতে তলিয়ে যাবার শঙ্কা তৈরী হয়েছে। এছাড়াও নতুন করে ভাঙ্গনের মুখে পড়বে গলগলিয়া, খাইজ্যাউরী, হানিয়া, কলমাসহ কমপক্ষে ৮টি হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ। কষৃকরা আরো জানান, টাঙ্গুয়ার হাওর নজরখালী বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় একমাত্র বোরো ফসল হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন হাওরতীরবর্তী ৫০ গ্রামের কয়েকহাজার কৃষক পরিবার। টাঙ্গুয়ার হাওর তীরের মধ্যনগর উপজেলার রংচি গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই ও বকুল মিয়া বলেন, নজরথালী বাঁধটি পাউবো সঠিকভাবে নির্মাণ কাজ না করায় মূলত নদীর পানি উপচে বাঁধটি ভেঙে গিয়ে আমাদের মত প্রান্তিক কৃষক পরিবাররের জীবন জীবকা নির্বাহের একমাত্র বোরো ফসল হারিয়ে আমরা এখন দিশেহারা।
পাউবোর সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ সহকারী প্রকৌশলী (পওর-১) মো: আসাদুজ্জামান বলেন, নজরখালী সহ আরো দুটি বাঁধে ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বাঁধের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে হঠাৎ নদীর পানি উপচে পড়ায় নজরখালী বাঁধ ভেঙ্গে ওই বাঁধের আওতাভুক্ত বোরো ফসলী জমির কাঁচা ধান তলিয়ে গেছে।
তাহিরপুর উপজেলা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ রায়হান কবির বলেন, স্থানীয় কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের থোক বরাদ্দ থেকে নজরখালী ফসলরক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নদীর তীর উপচে পড়ায় বাঁধটি ভেঙে যায়।#
Leave a Reply