আজিজুল ইসলাম :: পাখি শিকার ছিলো যার নেশা। দিনভর বনে বনে পাখির বাসা খোঁজে বের করা, সেই বাসা থেকে পাখির ছানা এনে আনন্দ পেতো কিশোর খোর্শেদ আলম। বন্যপ্রাণী গবেষকদের সান্নিধ্যে এসে সেই পাখি শিকারি এখন পাখিপ্রেমিতে পরিণত হয়েছেন। নিয়েছেন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ।
গ্রামের একপাশে ভারতের কাঁটা তারের বেড়া আর অন্য পাশে লাঠিটিলা সংরক্ষিত বন। এই দু’য়ের মাঝে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম ডোমাবাড়ি। সফিক উদ্দিন ও নাছিমা বেগম দম্পতির পুত্র খোর্শেদ আলম। ছোটবেলা থেকেই দুষ্টু প্রকৃতির। বনেবাদাড়ে ঘুরে বেড়িয়ে পাখি শিকারই ছিলো খোর্শেদের কিশোরকালীন সময়ের কাজ।
২০১৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে দু’জন বণ্যপ্রাণী গবেষক লাঠিটিলায় সংরক্ষিত বনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও গবেষণার কাজে এসেছিল। তারা হলেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারহাদ আহমেদ পাভেল ও অন্যজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রুবায়েত রবিন। তখন তাদের সাথে খোর্শেদের প্রথম পরিচয়। তাদের সাথে বনে গিয়ে সারাদিন থেকে ভালো লেগেছিলো। কথার ফাঁকে খোর্শেদের পাখি শিকারের ঘটনা জানতে পারেন দুই গবেষক। ঠিক তখন তারা তাকে বুঝিয়ে বলেছেন যে পাখি ও জীবজন্তু এগুলো প্রকৃতির অলংকার। তারাই বদলে দেন খোর্শেদের পাখি শিকার। তাদের হাতে হাত রেখে খোর্শেদ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন আর কখনও জীব বৈচিত্র্যের ক্ষতি করবেন না। সেই থেকে খোর্শেদ শপথ নেন আর পাখি শিকার বা পাখির বাসা ভেঙ্গে ছানা আনবেন না।
তখন তৈয়বুন্নেছা খানম একাডেমী ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির ছাত্র খোর্শেদ। লেখাপড়ায় তেমন ভালো ছিলেন না। সীমান্ত ও প্রত্যন্ত এলাকা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করে ফলাফল খুব একটা ভালো করতে পারেননি। তবুও হাল ছাড়েন নি। সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছেন। বর্তমানে বিএসসি পড়ছেন সিলেট এমসি কলেজে।
কিছুদিন পর লাঠিটিলার মদনটাক পাখি নিয়ে গবেষণা শুরু হলে সেখানে কাজের সুযোগ পান খোর্শেদ। গবেষকদের সঙ্গে থেকে শেখার শুরু। এই প্রকল্পে কাজ করার সুবাদে পাখির প্রজনন নিয়ে কাজ শুরু হয় রাজশাহীতে। কালামাথা মানিকজোড় পাখির উপর সেখানেও কাজ করেন। কিছুদিন এভাবেই কাজ করতে গিয়ে মনে মনে আনন্দ লাগতো। জীবনে এসব কাজই করার মনস্থির করলেন। এর দু’বছর পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লাঠিটিলার মহাবিপন্ন উল্লুক নিয়ে একটি প্রকল্প শুরু হয়। তখন তাদের সাথে সহকারী হিসাবে কিছু দিন কাজ করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুন নাহার ম্যাডামের সাথে এই প্রকল্পে কাজ করেন। পড়ালেখার পাশাপশি সুনামগঞ্জে পালাসি কুরাঈগলের গবেষণার কাজ করেন। সর্বশেষ চলতি বছর বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের আওতায় ১৬ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত কন্যপ্রালীর আবাস্স্থল ও বনভূমি ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এখন তিনি এলাকায় পরিবেশ কর্মী হিসেবেই অধিক পরিচিত।
খোর্শেদ লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে নিজের উদ্যোগে ২টি লজ্যাবতি বানর, ১ টি অজগর ও একটি কচ্ছপ উদ্ধার করে বন বিভাগের সমন্বয়ে অবমুক্ত করেন। সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে শিকারীদের কবল থেকে ৩টি ময়না পাখির ছানা উদ্ধার করেন। যেগুলোকে পরিচর্যা করে বড় করছেন। উড়াল শিখলেই সেই ছানাগুলো ফিরে যাবে বনে।
খোর্শেদের লক্ষ্য ছোট ছোট আরও বণ্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা এবং জীববৈচিত্র্যের উন্নয়নে বিশেষ অবধান রাখা। #
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply