বড়লেখা প্রতিনিধি :
জুড়ীর জায়ফরনগর ইউনিয়নের উত্তর শাহপুর এলাকায় গত বছর দিকে প্রধান অতিথি হিসেবে একটি পাকা সেতুসহ দুই পাশে সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি। অথচ উদ্বোধনের আগেই ব্রীজের সংযোগ সড়ক ধসে পড়েছে। এ দিকে সংযোগ সড়কে বিছানো বেশ কিছু ইট স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি তুলে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে গত ১৭ জুলাই এলাকাবাসী জুড়ী ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় জুড়ী উপজেলার উত্তর শাহপুর গ্রামের সংযোগ রাস্তায় মালেক মিয়ার বাড়ির সামনে ঘুঙ্গিজুড়ী খালের ওপর প্রায় ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্রীজটির নির্মাণ কাজের ওয়ার্ক অর্ডার পায় কুলাউড়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রেন্ডস এন্টারপ্রাইজ’। গত জুন মাসের শেষ দিকে ব্রীজের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এ সময় সেতুর দুই পাশে মাটিভরাট করে তাতে ইট বিছিয়ে সংযোগ সড়কও নির্মাণ করা হয়। ব্রীজের সংযোগ সড়ক ধসে পড়লেও গত জুন মাসেই ঠিকাদার কাজের চূড়ান্ত বিল তুলে নেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি উদ্বোধনের কথা। এ দিকে কাজ শেষ হওয়ার কয়েক দিন পর বৃষ্টিতে সংযোগ সড়কে ধসে পড়ে। ওই সেতু দিয়ে উত্তর ও পশ্চিম শাহপুরের ৩/৪ হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন।
এলাকাবাসীর পক্ষে অভিযোগে স্বাক্ষরকারি শাহপুর গ্রামের জুনেদ জানান, সংযোগ সড়ক ধসে যাওয়ার পর মাহতাব মিয়া নামক স্থানীয় বাসিন্দা প্রায় ১০ হাজার ইট তুলে আশপাশের কয়েক জনের নিকট বিক্রি করে দিয়েছেন। তদন্ত করে এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। সেখানে কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সড়কের মাঝখানে সামান্য ইট বিছানো। সেতুর এক পাশে নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের জন্য ফলক লাগানো রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল বারি বলেন, সংযোগ সড়ক ধসে পড়ায় স্থানীয় স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ লোকজন ভোগান্তিতে পড়েছেন। দুই পাশে প্রতিরক্ষা দেয়াল থাকলে সড়কটির এমন দশা হতো না।
এব্যাপারে মাহতাব মিয়ার জানান, সংযোগ সড়ক ধসে পড়ার পর কিছু লোক ইট চুরি করে নিচ্ছিলো। তাই, তিনি প্রায় তিন হাজার ইট সংগ্রহ করে প্রতি হাজার ইট সাড়ে ১৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন। বিক্রির টাকা দিয়ে ধসে পড়া অংশে মাটিভরাট করবেন। এ কাজের দায়িত্ব কে দিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা জনস্বার্থে করছেন।
সংযোগ সড়ক ধসে পড়ার ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রেন্ডস এন্টারপ্রাইজে’র মালিক মোক্তাদিরুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, নকশায় প্রতিরক্ষা দেয়াল ছিল না। সংযোগ সড়কে পর্যাপ্ত মাটি ফেলা হয়েছিল। কিন্তু মাটি শক্তভাবে বসেনি। এর আগেই বৃষ্টিতে ধসে গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সংযোগ সড়ক ধসে পড়ার কারণ খতিয়ে দেখা হবে। ঠিকাদারের জামানতের টাকা জমা রয়েছে। প্রয়োজনে তাকে দিয়ে সড়ক মেরামত করে নিবেন। আর ইট চুরি করে বিক্রির বিষয়টিও খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
ইউএনও রঞ্জন চন্দ্র দে জানান, সেতুর সংযোগ সড়কের ইট চুরি করে বিক্রির অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া সরেজমিনে গিয়েও সেতুটির সমস্যা দেখবেন। সেতুর সুফল যাতে এলাকার লোকজন ভোগ করতে পারেন সে ব্যাপারেও নজর রাখবেন।
Leave a Reply